ফাইল চিত্র।
কোভিড রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করতে বেগ পেতে হচ্ছে তাঁদের পরিজনের বলে অভিযোগ উঠছে কলকাতা-সহ রাজ্যের কিছু কিছু জায়গায়। সেখানে রবিবার রাতে ঠিক বিপরীত ছবি দেখা গেল বীরভূমের দুবরাজপুর শহরের চার নম্বর ওয়ার্ডে।
পিপিই কিট পরিহিত কর্মীরা অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে হাজির দরজায়। উপস্থিত বিডিও, ওসি, পুরসভার প্রতিনিধি। কিন্তু করোনা আক্রান্ত এক বয়স্ক দম্পতিকে সেফ হোমে পাঠাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হল তাঁদের সকলকে। ঘণ্টা পাঁচেক ধরে বিস্তর বোঝানো, অনেক অনুনয় বিনয়ের পরে ওই দম্পতিকে বোলপুর সেফ হোমে পাঠানো গিয়েছে। বিডিও (দুবরাজপুর)অনিরুদ্ধ রায় বলছেন, “আর কবে সচেতন হবেন মানুষ, সেটাই বুঝতে পারছি না! চাইব ওঁরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরুন।“
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চার নম্বর ওয়ার্ডের এক বছর চল্লিশের বাসিন্দা জ্বর, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। করোনার উপসর্গ দেখা দেওয়ায় লালারসের নমুনা পরীক্ষা করিয়েছিলেন সরকারি হাসপাতালে। দিন ছয়েক আগে তাঁর রিপোর্ট পজিটিভ আসে। প্রশাসন তাঁকে বোলপুর কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করায়। দুবরাজপুর-বক্রেশ্বর রাস্তা ঘেঁষা জনবহুল এলাকায় ওই পরিবারের এক সদস্যের করোনা ধরা পড়ার পরেই উদ্বেগ ছড়ায় এলাকায়। আক্রান্ত ওই যুবকের পরিবারের সদস্য এবং সংস্পর্শে থাকা ৩০ জনের লালারসের নমুনা পরীক্ষা করানো হয় প্রশাসনের উদ্যোগে। রবিবার সকালেই জানা যায়, করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে আক্রান্ত ওই যুবকের বৃদ্ধ বাবা-মা এবং তাঁর বছর দেড়েকের শিশুকন্যার শরীরেও। সমস্যার শুরু এখান থেকেই।
প্রশাসন সূত্রের খবর, নতুন করে আক্রান্ত তিন জনের কোনও উপসর্গ ছিল না। বছর দেড়েকের শিশু কন্যাকে কোভিড হাসপাতাল বা সেফ হোমে না নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও বয়স্ক দুই আক্রান্তকে দুবরাজপুরের বাড়িতে থাকতে দিতে রাজি হয়নি প্রশাসন। কেননা, তাঁদের ছেলের শারীরিক অবস্থার বেশ খানিকটা অবনতি হয়েছিল। বিষয়টি জানা সত্ত্বেও ওই দম্পতি সেফ হোমে যেতে বেঁকে বসেন বলে অভিযোগ। প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, বাবা-মাকে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি কিছু একটা করে বসবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন তাঁদের ছোট ছেলে! সন্ধ্যা থেকে অ্যাম্বুল্যান্স চলে এলেও আক্রান্তদের কেউ বোলপুরে যেতে চাইছেন না জানার পরেই সেখানে ছুটে যান দুবরাজপুরের টাউন ওসি, বিডিও এবং পুরসভার পক্ষে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর বিপ্লব মাহাতা। বিস্তর কাঠখড় পুড়িয়ে রাত ১২টার পর অম্বুল্যান্সে তোলা যায় তাঁদের।
ওই পরিবারের তরফে দাবি করা হচ্ছিল, সেফ হোম নয়, বাড়িতেই আইসোলেশনে থাকবেন। পুলিশ ও প্রশাসন বলছে, আক্রান্তদের বয়সের কারণেই এতটা ঝুঁকি নে
ওয়া সম্ভব ছিল না। তা ছাড়া ওই বাড়িটি জনবহুল ও রাস্তা ঘেঁষা হওয়ায় সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা যথেষ্ট। বিডিও বলেন, “আগে ওই দম্পতির বড় ছেলে আক্রান্ত হওয়ার পরে তাঁর সংস্পর্শে থাকা লোকজনের লালারসের নমুনা সংগ্রহ হয়েছিল। ফের ওই পরিবারে নতুন করে আক্রান্তদের সংস্পর্শে কারা ছিলেন, তাঁদের তালিকা তৈরি করে, নমুনা সংগ্রহের কাজ করা হবে।“