ছাই ঢাকা জমিতেই হবে বাগান

বাঁকুড়া উদ্যানপালন দফতরের আধিকারিক মলয় মাজি জানান, চারা পোঁতার আগে সাত থেকে আট ফুট গর্ত করলেই ছাই উঠে মাটি বেরিয়ে আসবে। তারপরে চারা লাগালে আর কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৭ ০০:৪৭
Share:

অপেক্ষা: আগাছা সরিয়ে এখানেই হবে বাগান। নিজস্ব চিত্র

বিস্তীর্ণ জমি ঢেকে রয়েছে এমটিপিএস-এর পরিত্যক্ত ছাইয়ে। তাতে গজিয়ে উঠেছে আগাছার ঘন জঙ্গল। দূষণের চোটে আর চাষবাস হবে না বুঝে অধিকাংশ স্থানীয় বাসিন্দা অন্য পেশায় চলে গিয়েছে, তা-ও অনেক বছর হল। ছাই দূষণের প্রায় কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠা সেই লটিয়াবনিতেই এ বার ফলের বাগান গড়তে চলেছে জেলা প্রশাসন। লক্ষ্য— গ্রামবাসীর স্থায়ী রোজগারের বন্দোবস্ত করা।

Advertisement

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমটিপিএস-এর লটিয়াবনি এলাকার ছাই পুকুরের পাড়ে জমি চেয়ে ডিভিসির কাছে আবেদনও করেছে জেলা প্রশাসন। প্রকল্পের চূড়ান্ত পরিকল্পনাও নেওয়া হয়ে গিয়েছে। ডিভিসির অনুমতি মিললেই শুরু হবে কাজ। বাঁকুড়া জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘‘জেলার কাঁকুরে মাটিতে নানা ধরনের পরীক্ষামূলক চাষে সাফল্য এসেছে ইতিমধ্যেই। লটিয়াবনির ছাই মাটিতেও চাষ করা সম্ভব বলেই বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন। ওই এলাকায় বাগান গড়ে স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে স্থায়ী লাভের সুযোগ করে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।’’

কী ভাবে হবে চাষ?

Advertisement

বাঁকুড়া উদ্যানপালন দফতরের আধিকারিক মলয় মাজি জানান, চারা পোঁতার আগে সাত থেকে আট ফুট গর্ত করলেই ছাই উঠে মাটি বেরিয়ে আসবে। তারপরে চারা লাগালে আর কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। রাজ্য অ্যাগ্রো ইন্ড্রাস্টিজের ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশিস বটব্যাল বলেন, ‘‘এই উদ্যোগে লটিয়াবনির জমির উর্বরতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এলাকার দুষণও নিয়ন্ত্রিত হবে। সবুজায়নের ফলে বদলে যাবে এলাকার পরিবেশ।’’

গঙ্গাজলঘাটি ব্লক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, লটিয়াবনির ছাই পুকুরের পাড়ে প্রকল্পের জন্য ২৫ হেক্টর জমি চাওয়া হয়েছে ডিভিসির কাছে। একশো দিনের কাজ প্রকল্প ও উদ্যানপালন দফতর যৌথ ভাবে কাজ করবে। ওই জমিতে চার হাজার আমের চারা এবং দু’হাজার করে মৌসম্বি, কুল ও পেয়ারার চারা লাগানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়াও, প্রকল্পে একটি পুকুর কাটা হবে। সব মিলিয়ে বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় ৯৫ লক্ষ টাকা। বিডিও (গঙ্গাজলঘাটি) মৃন্ময় মণ্ডল বলেন, ‘‘লটিয়াবনি গ্রামপঞ্চায়েতের তরফে চিঠি দিয়ে এমটিপিএসের কাছে বাগান গড়ার জন্য জায়গা চেয়ে আববেদন করা হয়েছে। অনুমতি মিললেই কাজ শুরু হবে।’’ এমটিপিএসের চিফ ইঞ্জিনিয়ার মৃণাল বিশ্বাস বলেন, ‘‘আবেদন পাওয়ার পরেই সেটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। নির্দেশ এলেই ব্লক দফতরকে জানাব।’’

লটিয়াবনি এলাকায় প্রায় সাতশ একরের একটি ছাই পুকুর রয়েছে এমটিপিএস-এর। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতি বছর শীত ও গ্রীষ্মে ওই ছাই পুকুর থেকে শুকনো ছাইয়ের গুঁড়ো হাওয়ায় উড়ে গ্রামে ঢোকে। এতে দুষণ ছড়ায় এলাকায়। দীর্ঘ দিন ধরেই এলাকার একটা বড় অংশের মানুষজন এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পুর্নবাসনের দাবি তুলে আসছেন। সম্প্রতি গ্রামবাসীর সেই দাবি শুনতে ও সরেজমিন সমস্যা খতিয়ে দেখতে লটিয়াবনিতে গিয়েছিলেন মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) অসীমকুমার বালা। দফায় দফায় এমটিপিএস ও গ্রামবাসীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘গ্রামবাসীকে পুনর্বাসন দেওয়া নিয়ে এমটিপিএসের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে।’’ এই পরিস্থিতিতে ওই গ্রামে বাগান গড়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠীদের স্থায়ী রোজগারের ব্যবস্থা করে দেওয়ার উদ্যোগকে এলাকাবাসী স্বাগত জানালেও পুনর্বাসনের দাবি থেকে সরছেন না তাঁরা। গঙ্গাজলঘাটি পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি জীতেন গ়ড়াই বলেন, ‘‘ফলের বাগান থেকে স্থায়ী রোজগার হবে সেটা স্থানীয় মানুষজন বুঝলেও তাঁরা ছাই দুষণের হাত থেকে পুরোপুরি মুক্তি পেতে পুনর্বাসনের দাবিকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement