পুরুলিয়ার রবীন্দ্রভবনে তুলে দেওয়া হল উপহার সামগ্রী। নিজস্ব চিত্র।
কোভিড-পর্বে বাবা-মা বা তাঁদের এক জনকে হারিয়েছে, জেলায় এমন ৫২ জন শিশু-কিশোর-কিশোরীর হাতে উপহার তুলে দিলেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার। উপহার দেওয়া হয়েছে জামা-কাপড়, জুতো, বই, রং পেন্সিল, স্কুলের ব্যাগ এবং অন্য শিক্ষা সরঞ্জাম। আগামী মাস থেকে তাদের মাসিক ২,০০০ টাকা অনুদান দেওয়া হবে বলেও এ দিন ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানটি হয় পুরুলিয়া শহরের রবীন্দ্রভবনে। যার পোশাকি নাম ছিল, ‘শৈশব, সেই-ই সব’।
জেলাশাসক বলেন, ‘‘অতিমারির সময়ে বিপন্ন ওদের শৈশব। ওদের আশ্রয়, ভরসা ও আপনজনকে কেড়ে নিয়েছে করোনা। এই আবহে তাদের পাশে দাঁড়াবে প্রশাসন। সেই প্রচেষ্টারই সূচনা হল এ দিন।’’ তিনি জানান, সমাজকল্যাণ দফতর ও জেলা শিশুকল্যাণ কমিটি এমন ৫২ জনকে খুঁজে বার করেছে, যাদের অভিভাবকের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। অবিলম্বে তাদের সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন।
প্রশাসনের তরফে এ দিন ঘোষণা করা হয়, বিপন্ন ওই সব শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের প্রত্যেককে প্রতি মাসে ২,০০০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। প্রশাসনই তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করবে। আগামী মাস থেকেই অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছে যাবে।
জেলাশাসকের কথায়, ‘‘বলতে চাই, এটা কোনও দান, অনুকম্পা বা অনুগ্রহ নয়। এটা শৈশবের ঘুরে দাঁড়ানোর, লড়াইয়ে ফেরার বার্তা।’’
তিনি জানান, এ দিনের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির জন্য সময় খুব একটা পাওয়া যায়নি। তবে রাজ্য সরকারের কাছে সহায়তা প্রদানের প্রস্তাব পাঠানোর পরে, অনুমোদন মিলেছিল দ্রুত।
প্রশাসন সূত্রের খবর, এই মাসিক সাহায্যের টাকা নাবালক-নাবালিকাদের অভিভাবকেরা ঠিকঠাক খরচ করছেন কি না, সে ব্যাপারে নজরদারি করবেন স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর এক প্রতিনিধি। তা ছাড়া, ব্লক স্তরেও থাকবে নজরদারির ব্যবস্থা।
জেলা শিশুকল্যাণ কমিটির চেয়ারপার্সন নীলিমা দাসচৌধুরী বলেন, ‘‘বাবা-মা হারানো শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের যে তালিকা প্রাথমিক ভাবে পেয়েছিলাম, তাতে আরও কিছু নাম ছিল। এখনই তাদের কত জনের পাশে দাঁড়ানো দরকার, সে নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছিল। ভিডিয়ো কলে ওই সব শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছিল। তাদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে ৫২ জনের তালিকা করা হয়েছে। ওদের মধ্যে কয়েকজন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুও রয়েছে।’’
কোভিডের প্রথম হানায় মাকে হারিয়েছিল কাশীপুরের সপ্তম শ্রেণির এক কিশোর। দ্বিতীয় পর্বে হারায় বাবাকে। হাতে উপহারসামগ্রী পেয়ে ওই কিশোর বলে, ‘‘ব্যাগের মধ্যে জামা, প্যান্ট, জুতো ও বই আছে। আর আছে রং পেন্সিল। বাড়ির কাছে মাঠের পাশে রেললাইন দিয়ে ট্রেন ছোটে। তারই ছবি আঁকব।’’ করোনায় বাবা-মাকে হারিয়ে ঠাকুরদার সঙ্গে এ দিনের অনুষ্ঠানে এসেছিল ঝালদা ১ ব্লকের দুই ভাই। তাদের কথায়, ‘‘বই আছে ব্যাগে। ঘরে গিয়ে পড়ব।’’
জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যারা তালিকার বাইরে থেকে গেল, তাদের নাম আমাদের দেওয়া হলে জেলা পরিষদ কী ভাবে ওদের পাশে থাকবে, তা দেখা হবে। শিশু-কিশোর-কিশোরীদের মাথার উপরে যাঁরা হাত রাখেন, সেই বাবা-মাকেই কেড়ে নিয়েছে অতিমারি। দেবীপক্ষের সূচনায় প্রশাসন ওদের পাশে থাকতে অঙ্গীকারবদ্ধ।’’
ওই সব শিশু-কিশোরদের প্রয়োজনে সব রকম ভাবে আইনি সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সদস্য সচিব অর্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন জেলার পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগন, জেলা পরিষদের কো-মেন্টর জয় বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বিভিন্ন কর্মাধ্যক্ষ।