ধান কাটার ফাঁকে। বান্দোয়ানে। ছবি: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো
ধান কেনা নিয়ে সম্প্রতি বাঁকুড়ার রবীন্দ্রভবনে জেলা প্রশাসনের একটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস জানিয়েছেন, জেলায় তিন লক্ষ টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। সেচসেবিত এলাকার চাষিরা বিঘা প্রতি তিন কুইন্টাল ও অসেচ এলাকার চাষিরা বিঘা প্রতি দু’কুইন্টাল করে ধান বিক্রি করতে পারবেন। জেলাশাসক বলেন, “আমাদের লক্ষ্য বেশি সংখ্যক চাষিদের সরকারি জায়গায় ধান বিক্রির সুবিধা করে দেওয়া।’’
জেলা খাদ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, জেলার ৫০টির বেশি চালকল, ১৯টি কেন্দ্রীয় ধান্য বিক্রয় সংস্থা-সহ ‘বেনফেড’, ‘নাফেড’, ‘কনফেড’-এর মতো পাঁচটি সরকারি সংস্থা জেলায় ধান কিনবে। দফতরের দাবি, জেলার প্রতিটি ব্লকে ধান কেনার শিবির চালু করা হয়েছে। তবে জেলার বেশির ভাগ জায়গায় এখনও ধান কাটা না হওয়ায় চাষিরা শিবিরে তেমন আসছেন না। মাঠ থেকে ধান উঠতে এখনও দিন দশেক সময় লাগবে। তার পরে ধান কেনার কাজে গতি আসবে বলে আশা কৃষি-কর্তাদের।
কী চিত্র লাগোয়া জেলা পুরুলিয়ার? পুরুলিয়ার উপ-কৃষি অধিকর্তা আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এ বার তিন লক্ষ ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হলেও বৃষ্টির ঘাটতিতে সমস্ত জমিতে চাষ হয়নি। এখন চাষিরা ধান কাটা শুরু করেছেন। যে সব জমিতে চাষিরা পরে ধান লাগিয়েছিলেন, সে ধান আরও ২০-২৫ দিন পরে কাটা শুরু হবে। জেলা খাদ্য নিয়ামক শুভ্রদীপ চট্টোপাধ্যায়ও জানান, চাষিদের কাছ থেকে সহায়ক মূল্যে ধান কেনার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ। চাষিরা ধান বিক্রি করলে, তা কেনা হবে।
যদিও প্রশাসনের কথায় অবশ্য ভরসা পাচ্ছেন না বিরোধীরা। কৃষকসভার বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক যদুনাথ রায়ের অভিযোগ, “ধান কেনার জন্য প্রতি বছরই প্রশাসনের তরফে নানা প্রচার চালানো হয়। তবে প্রকৃত চাষিরা বঞ্চিত হন। ফড়েরা কম দামে চাষিদের কাছে ধান কিনে সরকারের কাছে বিক্রি করে মুনাফা লোটে।’’ তাঁর দাবি, ধান কেনার শিবিরগুলির পরিকাঠামো বৃদ্ধি,
হাতে হাতে চেক প্রদান, শিবিরে চাষি নয় এমন মানুষকে চিহ্নিত করার ব্যবস্থা ও শিবির নিয়ে গ্রামে-গ্রামে প্রচার চালানো দরকার।
প্রশাসনের অবশ্য দাবি, অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে সরকারি শিবিরে ধান বিক্রি করতে না পারেন তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। চাষিদের পরিচয়পত্র নিয়ে শিবিরে আসতে হবে। এ ছাড়া, ‘কৃষকবন্ধু প্রকল্প’ বা বিভিন্ন শস্যবিমার আওতায় থাকা চাষিদের তালিকা শিবিরে থাকবে। কোনও চাষি সরকারি প্রকল্প বা শস্যবিমার আওতার বাইরে থাকলে পঞ্চায়েতের কাছ থেকে উপযুক্ত শংসাপত্র নিয়ে এলে, তবেই ধান বিক্রি করতে পারবেন।