সোনামুখী-বিষ্ণুপুর রাস্তায়, চৌমাথা মোড়ে। নিজস্ব চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাস্তা জবরদখল মুক্ত করার নির্দেশ দেওয়ার পরেই সোনামুখী পুরসভা সক্রিয় হল। নিকাশি নালার উপরে পসরা নিয়ে বসে থাকা সমস্ত ব্যবসায়ীকে রবিবারের মধ্যে পুরসভার বাজারে সরিয়ে নিতে মাইকে ঘোষণা শুরু হয়েছে।
সোনামুখী পুরপ্রধান তৃণমূলের সন্তোষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “রবিবারের মধ্যে রাস্তা ছেড়ে দিতে হবে দখলদারদের। তা না হলে তাঁদের উচ্ছেদ করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ তিনি জানান, ওই ব্যবসায়ীরা আগ্রহী হলে সোনামুখী পুরসভা চত্বরের বাজারে ব্যবসা করতে পারেন। তবে মূল রাস্তার ধারে বসা যাবে না।
ব্যবসায়ীদের সতর্ক করতে বুধবার দিনভর সোনামুখী শহরে পুরসভা, পুলিশ ও ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকেরা পথে নামেন। বৃহস্পতিবারও মাইকে প্রচার চালানো হয়। ব্যবসায়ীদের তাঁরা জানিয়ে দেন, রাস্তার ধারে কিংবা নিকাশি নালা দখল করে বেচাকেনা করা যাবে না।
বৃহস্পতিবার এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, সোনামুখীর বাজারের ছবিটা অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে। বাঁকুড়া-বর্ধমান রাস্তার ধারে নিকাশি নালা ছেড়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে রাস্তা জুড়ে বাইক ও সাইকেল যথারীতি রয়েছে। ছবি বদলায়নি সোনামুখী-বিষ্ণুপুর রাস্তায় চৌমাথা মোড়ে। সেখানে রাস্তার দু’পাশে সার দিয়ে মাছ ও আনাজ সাজিয়ে বসে রয়েছেন বিক্রেতারা। ভিড়ের মধ্য দিয়েই যাত্রিবাহী বাস, ট্রাক নিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছেন চালকেরা। যানজটও লেগেই রয়েছে।
বিকাশ চক্রবর্তী নামে এক প্রবীণ বাসিন্দার কথায়, ‘‘সঙ্কীর্ণ রাস্তার এক দিকে বাস-ট্রাকের ভিড়। অন্যদিকে বড় বড় মাছ কাটার বঁটি থাকে। অসতর্ক হলেই বিপদ। শান্তিতে হাঁটা যায় না। রাস্তা জুড়ে বেচাকেনার জেরে দুর্ঘটনাও কম ঘটেনি এখানে। রাস্তা থেকে দখলদারি সরাতে পারলে তো ভালই হয়।’’
এ দিকে পুরসভার ঘোষণায় সঙ্কটে পড়েছেন রাস্তার ধারে দীর্ঘদিন ব্যবসা করে আসা রূপা ধীবর, চম্পা ধীবর, নারান ধীবরেরা। তাঁদের দাবি, “রাস্তা চওড়া করার দরকার আছে। তবে আমাদের একটা ব্যবস্থা না করলে বাঁচব কী করে?”
এ দিকে পুরসভার নির্দেশের পরেই নিজের ফুল দোকান নিকাশি নালা থেকে সরিয়ে নিয়েছেন বিজেপি নেত্রী শম্পা গোস্বামী। তিনি বলেন, “রাস্তা সবার। তাই রাস্তা দখল করে না বসে সবারই উচিত সরে যাওয়া। তবে সেক্ষেত্রে পুরসভার ভূমিকা পক্ষপাতমূলক যেন না হয়। শহরে সব ধরনের দখলদারি মুক্ত করা দরকার।’’ স্থানীয় সিপিএম নেতা মনোজ চক্রবর্তীর অভিযোগ, “পরিকল্পনাবিহীন সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভা। তাতে সমাধানের চেয়ে সমস্যাই হবে বেশি। সোনামুখী শহরের হকার সমস্যা না মিটিয়ে উচ্ছেদ করলে ফল হবে বিপরীত।” পুরপ্রধানের দাবি, ‘‘পুরভবন চত্বরে তৈরি করা বাজার ফাঁকা পড়ে রয়েছে। অথচ সেখানে হকাররা যেতে চান না। তাঁরা বেশি বিক্রির আশায় রাস্তার ধারে বসতে চান। হকাররা সেখানে গেলেই ক্রেতারা ভিড় করবেন।’’