হরিণশিঙায় খনি বিরোধী মিছিল। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
মহম্মদবাজার ব্লকের ডেউচা পাঁচামি এলাকায় খনি বিরোধী আওয়াজ উঠলেও তা মাঝে কিছুটা ম্লান হয়ে গিয়েছিল। রবিবার ফের সেই আন্দোলনের আঁচ পাওয়া গেল আদিবাসী মিছিলে। আদিবাসীদের অধিকার রক্ষার্থে নতুন করে তৈরি হল আদিবাসী অধিকার মহাসভা। যদিও এই মহাসভা গঠন নিয়ে শাসক দলের পাশাপাশি বিরোধী শিবিরের জমি, জীবন, জীবিকা ও প্রকৃতি বাঁচাও মহাসভার পক্ষ থেকে কটাক্ষ করা হয়।
এ দিন হিংলো পঞ্চায়েতের হরিণশিঙা ফুটবল মাঠ থেকে আদিবাসী অধিকার মহাসভার নেতা লখীরাম বাস্কি ও জগন্নাথ টুডুর নেতৃত্বে মিছিল শুরু হয়। এ ছাড়াও ছিলেন কলকাতার গণ আন্দোলনের এক নেতা প্রসেনজিৎ বসু ও ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ড্যানিয়েল মুর্মু। এ দিন এই মিছিলে পা মেলাতে দেখা যায় গ্রামসভা সমন্বয় হুল কমিটির নেতাদেরও। হরিণশিঙা থেকে মিছিল শুরু হয়ে দেওয়ানগঞ্জ, হারমাডাঙাল, ডাঙাল চান্দা, গাবারবাথান-সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে তালবাঁধ হয়ে পুনরায় হরিণশিঙায় এসে শেষ হয়। যে খনি বিরোধী আওয়াজ প্রথমে উঠেছিল পরে তা পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণে রাজি হয়ে স্তিমিত হয়ে যায়। প্রচুর সংখ্যক মানুষ ওই এলাকায় জমি দিয়ে দিয়েছেন এবং চাকরিও পেয়ে গিয়েছেন। এলাকায় আন্দোলনের পরিবেশ তৈরি করে, কিছুদিন আগে জেলাশাসকের অফিসেও খনি বাতিলের দাবিতে স্মারকলিপি দেয় গ্রামসভা সমন্বয় হুল কমিটি। এরপরেই নতুন করে খনি বিরোধী আন্দোলনে পা মেলালো আদিবাসী অধিকার মহাসভা। এ দিন খোলা মুখ কয়লা খনি বাতিলের পাশাপাশি বেআইনি ক্রাশার খাদান বন্ধ এবং ক্রাশার থেকে অতিরিক্ত ধুলো ওঠা বন্ধের দাবি তোলা হয়।
যদিও এর বিরোধিতা করে জমি জীবন জীবিকা প্রকৃতি বাঁচাও মহাসভার আহ্বায়ক গণেশ কিস্কু বলেন, ‘‘নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে মহাসভার নাম ব্যবহার করছে। এ ছাড়াও রাজনৈতিক ভাবে এই নতুন আদিবাসী অধিকার মহাসভা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা করছে। এলাকার মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করতে মহাসভার নাম ব্যবহার করছে।’’ আদিবাসী অধিকার মহাসভার সম্পাদক জগন্নাথ টুডু বলেন, ‘‘প্রশাসন আমাদের উপর অত্যাচার করছে এবং মিথ্যা মামলায় ফাঁসাচ্ছে। জমি, জীবন, জীবিকা ও প্রকৃতি বাঁচাও মহাসভা তাদের সঙ্গেই হাত মেলাচ্ছে। খোলা মুখ কয়লা খনি বন্ধ করতে এলাকার মানুষদের নিয়ে আলোচনার মাধ্যেমেই আদিবাসী অধিকার মহাসভা গঠন করা হয়েছে। এরপর এই সংগঠন থেকেই আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।’’
গণ সংগঠনের নেতা প্রসেনজিৎ বসুও বলেন, ‘‘চক্রান্ত করে মানুষদের ভুল বোঝানো হয়েছিল। কিন্তু এ দিনের মিছিল আবার প্রমাণ করল কারা সত্যি আন্দোলন করছেন এবং কারা চক্রান্ত করছে।’’ প্রশাসনের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, মুখ্যমন্ত্রীর পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ প্যাকেজের ঘোষণা অনুযায়ী বাসিন্দারা স্বেচ্ছায় জমি দিয়েছেন। ভুল বোঝানো হয়নি, জোর করে জমিও নেওয়া হয়নি।