প্রতীকী ছবি।
‘ডাইনি’ অপবাদ দিয়ে এক মহিলাকে অ্যাসিড ছুড়ে আক্রমণের অভিযোগ উঠল। পুরুলিয়া শহরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের খেজুরিয়াডাঙার ঘটনা। টানা ছ’দিন এলাকাছাড়া থাকার পরে, সোমবার সন্ধ্যায় পরিবারটিকে বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করে পুলিশ। সঙ্গে ছিলেন বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়া শাখার কর্মীরা-সহ পুরুলিয়ার পুরপ্রধান নবেন্দু মাহালি। ঘটনায় এলাকারই বাসিন্দা বাণেশ্বর রাজোয়াড় নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ারকেও এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে।
বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়া শাখার সম্পাদক নয়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, “শহরের বুকে এমন ঘটনা ঘটছে, ভাবাও যায় না। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তার জন্য তো চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। তা না করে পাড়ার কাউকে ‘ডাইনি’ অপবাদ দিয়ে নির্যাতন করতে হবে। এ মানা যায় না।”
গত সপ্তাহে সোমবার নিজের বাড়িতেই আক্রান্ত হন মধ্যবয়সী ওই বধূ। তাঁর অভিযোগ, “সে দিন সন্ধ্যায় বাড়ির কাছের পুকুর থেকে বাড়ি ঢুকছিলাম। আচমকা দু’জন ‘মার মার’ বলে তেড়ে এসে তরল কিছু একটা ছুড়ে দেয়। গায়ে না-লাগলেও শাড়িতে পড়ায় শাড়ি পুড়ে যায়। বুঝতে পারি, তা অ্যাসিড ছিল। বরাতজোরে বেঁচেছি।” ওই মহিলার স্বামী বলেন, “সমস্ত ঘটনা জানার পরে সিদ্ধান্ত নিই, বাড়িতে থাকব না। সে দিন রাতেই তাই এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিই।”
ওই পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি এলাকার কিছু মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ায় এলাকার কিছু ব্যক্তি পরিবারটিকে ‘ডাইনি’ অপবাদ দিয়ে ঘটনার জন্য আঙুল তোলে। মহিলার স্বামীর অভিযোগ, “কয়েক বছর আগেও এক বার পাড়ায় কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়লে এলাকার কিছু লোকজন আমার মাকে ‘ডাইনি’ অপবাদ দিয়ে নির্যাতন শুরু করে। পরে, নিদান দেওয়া হয়, গয়ায় গিয়ে ‘পিণ্ড’ দিয়ে ‘অপদেবতা’ দূর করতে হবে। সে সময়ে বউয়ের গয়না বিক্রি করে ৪৫ হাজার টাকা জোগাড় করে গয়া যেতে হয়েছিল।”
তাঁর আরও দাবি, “পিণ্ড দিয়ে ফেরার পরে ভেবেছিলাম, সব মিটমাট হয়ে গিয়েছে। কিন্তু মাস খানেক আগে থেকে ফের হুমকি দেওয়া শুরু হয়। ভয়ে বাবা-মা এখানে থাকতেন না। ছেলেমেয়েদেরও এক আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে এসেছিলাম। স্ত্রীকে যে অ্যাসিড ছুড়বে, ভাবিনি।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়া, অ্যাসিড ছোড়া, ষড়যন্ত্র ও হত্যার চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। অ্যাসিডে পুড়ে যাওয়া শাড়িটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে অভিযুক্ত বর্তমানে পুলিশি হেফাজতে রয়েছে। অন্য অভিযুক্তদের নাগাল পেতে অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কয়েকজনের নাম উঠে এলেও তারা পলাতক বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশ আরও জানায়, এর আগেও যখন ওই পরিবারের উপরে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল, বাণেশ্বরকেই গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে, জামিনে ছাড়া পান তিনি।
পুরপ্রধান বলেন, “খুবই দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, এখনও কিছু মানুষ ডাইনি, ভূত-প্রেতে বিশ্বাস করেন। পরিবারটি যাতে নিরাপদে থাকতে পারেন, তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।”