BJP

কারও সঙ্গেই সমস্যা নেই, দাবি সভাপতির

বিধানসভা ভোট আসন্ন। সংগঠন বাড়াতে তৎপর শাসক-বিরোধী, দুই শিবিরই। কিন্তু, তার মধ্যেও কিছু কিছু জায়গায় খচখচ করছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কাঁটা। ভোটের আগে সদ্য জেলা সভাপতি বদল হয়েছে বিজেপি-র। তাতে কি সমস্যা মিটবে? কারণ, সংগঠন এবং রাজনৈতিক কর্মসূচিতে এখনও অনেকটাই এগিয়ে তৃণমূল। যুযুধান দুই দলের অন্দরমহলে উঁকি মারল আনন্দবাজার। জেলা সভাপতি হওয়ার আগে পর্যন্ত ধ্রুব ছিলেন বিজেপি-র যুব মোর্চার রাজ্য সহ-সভপতি। ডাকাবুকো ও সুবক্তা হিসাবে দলে তাঁর নাম আছে।

Advertisement

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২১ ০২:০৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

একটা জেলায় পাঁচ-পাঁচ জন সভাপতি। চার জন প্রাক্তন। এক জন সদ্য নিযুক্ত হওয়া। মতবিরোধ হওয়া বা খটাখটি লাগাই স্বাভাবিক। তবে, তেমন কিছুই হবে না বলে দাবি করছেন বীরভম জেলা বিজেপি-র নতুন সভাপতি ধ্রুব সাহা। তাঁর কথায়, ‘‘কাউকে নিয়ে আমার কোনও সমস্যা নেই। আমরা এক সঙ্গেই কাজ করছি। দিনের শেষে আমরা প্রত্যেকেই দলের হয়ে কাজ করছি।’’

Advertisement

জেলা সভাপতি হওয়ার আগে পর্যন্ত ধ্রুব ছিলেন বিজেপি-র যুব মোর্চার রাজ্য সহ-সভপতি। ডাকাবুকো ও সুবক্তা হিসাবে দলে তাঁর নাম আছে। তবে, দলের দ্বন্দ্ব কী ভাবে তিনি সামাল দেবেন, তা দেখার। কারণ, এর আগে একাধিকবার জেলা সভাপতিদের বিরুদ্ধে নেতা-কর্মীদের একাংশকে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ জানাতে দেখা গিয়েছে। এমনকি, জেলা সভাপতির সামনে দুই শিবিরের মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। দলীয় সভাপতিকে পরিবর্তনের দাবিতে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে দরবার করেছেন বিক্ষুব্ধ কর্মীরা—এমন নজিরও রয়েছে বীরভূমে।

ফলে, দলের সংগঠন ঠিক করাটা বড় চ্যালেঞ্জ নতুন জেলা সভাপতির সামনে—এমনই মনে করেন বিজেপি-র নিচুতলার কর্মীদের বড় অংশ। বিশেষ করে, এই জেলায় মূল প্রতিপক্ষ যেখানে অনুব্রত মণ্ডলের মতো নেতা! লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে জেলার ১১টি বিধানসভা আসনের মধ্যে দুবরাজপুর, সিউড়ি, সাঁইথিয়া, ময়ূরেশ্বর এবং রামপুরহাটে তৃণমূলের চেয়ে এগিয়ে ছিল বিজেপি। সেই ফল ধরে রাখতে গেলে সংগঠন দ্বন্দ্ব ভুলে সকলকে কাজ করতে হবে—এমনই দাবি কর্মীদের। কিন্তু, চার চার জন প্রাক্তন সভাপতি এবং তাঁদের অনুগামীরা কতটা সক্রিয় হয়ে কাজ করবেন, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে দলের অন্দরেই।

Advertisement

দুধকুমার মণ্ডল, অর্জুন সাহা, রামকৃষ্ণ রায় এবং শ্যামাপদ মণ্ডল, চার জন প্রাক্তন সভাপতিই দলের সংগঠন বাড়ানোর কাজে নতুন সভাপতিকে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। ওই চার জনের সঙ্গেই একাধিক বার আলাদা করে কথাও হয়েছে নতুন সভাপতির। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের প্রাক্তন সভাপতি থেকে জেলার প্রত্যেকটি কার্যকর্তাদের ৬ জানুয়ারি থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত বুথ শক্তিশালী করার কাজে বুথ চলো অভিযানে কাজে লাগানো হয়েছে। চার জন প্রাক্তন জেলা সভাপতিও সেই কর্মসূচিতে সক্রিয় ভাবেই শামিল হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ধ্রুব।

যেমন নানুর বিধানসভায় বুথ চলো অভিযানে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন দুধকুমার মণ্ডল। সিউড়িতে ছিলেন রামকৃষ্ণ রায়। অর্জুন সাহা রামপুরহাটে এবং শ্যামাপদ মণ্ডল ময়ূরেশ্বরের দায়িত্বে। দুধকুমারে বক্তব্য, ‘‘ধ্রুব সাহাকে আমি অনেক দিন ধরে দেখছি। আমি যখন জেলা সভাপতি ছিলাম, তখন ধ্রুব যুব মোর্চার রাজ্য সহ-সভাপতি ছিলেন। ভাল ছেলে, ভাল সংগঠক। ভাল কাজ করছেন। ওঁর মতো নেতা দরকার জেলায়।’’ শ্যামাপদ বলছেন, ‘‘বুথ চলো অভিযান এবং বুথে রাত্রিবাস কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছি। কোনও ক্ষোভ বিক্ষোভ নেই। রাজ্য নেতৃত্ব যা নির্দেশ দিয়েছেন, সেটা পালন করছি।’’ অর্জুনবাবুও জানাচ্ছেন, নতুন জেলা সভাপতির সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ধ্রুব ভাল সংগঠক। ওর কথা মতো বুথ শক্তিশালী করার কাজে আমরা নেমেছি। কোথাও কোনও মতবিরোধ নেই।’’ রামকৃষ্ণ রায়কে দলের তরফে আসানসোলের পর্যবেক্ষক করা হয়েছে। বীরভূমে দলে যা সমস্যা রয়েছে, তা মিটে যাবে বলে তিনিও আশাবাদী।

বিজেপি সূত্রের খবর, জেলার মোট ৩০২১ বুথের সব ক’টিতে এখনও কমিটি গঠন করতে পারেনি দল। ধ্রুববাবু নিজেও তা স্বীকার করে বলেন, ‘‘বর্তমানে ৯০ শতাংশ বুথ কমিটি গঠন করা হয়েছে। জানুয়ারি মাসে ১০০ শতাংশ বুথ কমিটি গঠিত হয়ে যাবে বলে আমাদের আশা।’’ বিজেপি-র বুথ চলো অভিযানকে কটাক্ষ করে তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি অভিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘যে দলের প্রতিটি বুথে কর্মী দেওয়ার ক্ষমতা নেই, তারা আবার বুথ শক্তিশালী করার কথা ভাবছে! আসলে বিজেপি এত দিনে সবে বুথ চিনছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement