Abhishek Banerjee

ভোলানাথকেও সতর্ক করলেন অভিষেক, বার্তা দ্বন্দ্ব মেটানোর,জেলা ছাড়ার আগে কেরিমকে সরানোর নির্দেশ

বোলপুরের সিয়ানে বৃহস্পতিবার রাতে থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল অভিষেকের। শুক্রবার দুপুরে সেখানেই  জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ওই নির্দেশ অভিষেক দেন বলে দল সূত্রের খবর।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিদেবন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২৩ ০৯:৫৭
Share:

বোলপুর থেকে পূর্ব বর্ধমানে ‘নবজোয়ার’ কর্মসূচিতে যাওয়ার পথে শুক্রবার বিকেলে নানুরের দাসকলগ্রামে লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বললেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: কল্যাণ আচার্য

বীরভূমে তিন দিনের ‘নব জোয়ার’ কর্মসূচি শেষে শুক্রবার জেলা ছাড়ার আগে জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আব্দুল কেরিম খানকে দায়িত্ব থেকে সরানোর নির্দেশ দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে খুবই কড়া ভাষায় তিনি সতর্ক করেছেন দুবরাজপুর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি ভোলানাথ মিত্রকেও। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ভুলে জেলার নেতাদের এক সঙ্গে কাজ করার নির্দেশও দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।

Advertisement

বোলপুরের সিয়ানে বৃহস্পতিবার রাতে থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল অভিষেকের। শুক্রবার দুপুরে সেখানেই জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ওই নির্দেশ অভিষেক দেন বলে দল সূত্রের খবর। জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ‘আস্থাভাজন’ আব্দুল কেরিমের বিরুদ্ধে জমি সংক্রান্ত ‘দুর্নীতির’ অভিযোগ অভিষেকের কাছে জমা পড়েছিল বলে তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছে। বৈঠকে অভিষেক নেতাদের জানান, নির্দেশ যেন দ্রুত পালন করা হয়। জেলা কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করতে চাননি।

কিন্তু, বৈঠকের পরে জেলা তৃণমূলের অন্দরে এই খবর ছড়াতে বেশি সময় নেয়নি। বৈঠকে উপস্থিত ব্লক সভাপতিদের অনেকেও মেনেছেন ঘটনা সত্যি। সূত্রের খবর, কেরিমের বিরুদ্ধে নানুরের বাসাপাড়ায় মিলনমেলার মাঠের জন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নামে কম দামে কিংবা জোর করে প্রায় ৩৫ বিঘে জমি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার হলেন কেরিম। এ ছাড়াও, গরু পাচার মামলায় কেরিমের নানুরের সাঁতরা গ্রামের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। বেশ কিছু নথিও বাজেযাপ্ত করে নিয়ে গিয়েছে। তাঁকে ডেকে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।

Advertisement

জমি প্রসঙ্গে কেরিম খান নিজে এ দিন বলেন, ‘‘ব্যক্তি নয়, নানুরে একটি ট্রাস্টের নামে জমি কেনা হয়েছে। কোনও দুর্নীতি হয়নি। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন কেউ। আমার বক্তব্যের স্বপক্ষে সমস্ত নথি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসে পাঠাব।’’ জেলার রাজনীতিতে কেরিমের ‘ঘোর বিরোধী’ হিসাবে পরিচিত কোর কমিটির সদস্য কাজল শেখ এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। আবার কেরিমের সঙ্গে ‘ভাল সম্পর্ক’ থাকা নানুরের প্রাক্তন বিধায়ক গদাধর হাজরা বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তাই কিছু মন্তব্য করব না।’’

৯ থেকে ১১ তারিখ—এই তিন দিনে কার্যত বীরভূম চষে ফেলেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন পূর্ব বর্ধমানে যাওয়ার আগে সিয়ানে জেলা কোর কমিটির সদস্যদের (একমাত্র সাংসদ শতাব্দী রায় ছিলেন না) এবং প্রতিটি ব্লকের সভাপতিদের সঙ্গে তিনি ঘণ্টাখানেক বৈঠক করেন। সেখানেই জেলা ও প্রতিটি ব্লক সংগঠন ধরে পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেক। সূত্রের খবর, বৈঠকে অভিষেক স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সংগঠনে ঢিলেঢালা ভাব এবং গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। প্রশয় দেওয়া হবে না দুর্নীতিকেও। মানুষের মন জয় করার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের একাংশ বলছেন, বেশ কয়েকটি ব্লক সংগঠন ও সেখানকার সভাপতিদের কাজ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিষেক। সেই তালিকায় প্রথমেই রয়েছে দুবরাজপুর। নানা অভিযোগ নিয়ে দুবরাজপুরের ব্লক সভাপতি ভোলানাথ মিত্র দীর্ঘদিন ধরে অভিষেকের নিশানায়। তাঁকে বহু আগেই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দলের অভিজ্ঞ নেতাকে সরালে ফল খারাপ হবে, জেলা কোর কমিটির সদস্য দুই শীর্ষ নেতার আবেদনে সাড়া গিয়ে সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখেন অভিষেক। বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, এ দিন সে কথা ফের মনে করিয়ে দিয়ে অভিষেক ভোলানাথকে বলেন, ‘‘আমার কাছে খবর বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সমবায়ের নামে টাকা তোলা হচ্ছে। আপনাকে শেষ বারের মতো সতর্ক করছি।’’ এ বিষয়ে ভোলানাথের প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

প্রসঙ্গ উঠেছে খয়রাশোলের দ্বন্দ্ব নিয়েও। অভিষেক কোর কমিটির নেতাদের কাছে জানতে চান, কার নির্দেশে নরেশ বাউড়িকে খয়রাশোলের পর্যবেক্ষক হিসাবে দায়িত্বে দেওয়া হয়েছে। খয়রাশোলের কোও পর্যবেক্ষক না-রাখার নির্দেশও দেন। ওই ব্লকের উদাহরণ টেনে অন্যান্য ব্লকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বরদাস্ত না করার বার্তা দিয়েছেন তিনি বলে খবর।

দল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন অসুস্থতার জন্য মহম্মদবাজার ব্লকের (ছ’টি অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা) সভাপতি তাপস সিংহ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি কেন সভায় আসেননি খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি ওই ব্লকে দুর্বল সংগঠনে নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন অভিষেক। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে এবং কর্মসূচি নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রামপুরহাটের ব্লক সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মিকেও। মুরারই ২ ব্লকের সভাপতি অসুস্থ আফতাবউদ্দিন মল্লিকের পাশাপাশি আর এক জনকে দায়িত্ব দিতে বলা হয়েছে। কী ব্যবস্থা নেওয়া হল, তা সাত দিনের মধ্যে তাঁকে জানানোর নির্দেশও কোর কমিটিকে দিয়েছেন অভিষেক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement