অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
প্রত্যাশিত লিড না থাকলে ভোটের পরে ‘ব্যবস্থা’ নেওয়া হবে। গত ৩ এপ্রিল তারাপীঠে কর্মী সম্মেলনে এসে এই বার্তা দিয়ে গিয়েছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেটা যে শুধু ‘কথার কথা’ নয়, তা রবিবার একুশে জুলাইয়ের শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকে ফের বুঝিয়ে দিলেন অভিষেক। তিন মাসের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে অভিষেক কড়া বার্তা দিতেই গুঞ্জন শুরু হয়েছে বীরভূমের তৃণমূল নেতাদের মধ্যে। দল সূত্রে দাবি, জেলার একাধিক জায়গায় প্রত্যাশিত লিড না পাওয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না চর্চা চলছে তা নিয়েই।
রবিবার কলকাতার ধর্মতলার সমাবেশে অভিষেক জানিয়ে দেন, যে পুরসভা এবং পঞ্চায়েত এলাকায় লোকসভা ভোটে তৃণমূল পিছিয়ে রয়েছে, সেখানে পুরসভার চেয়ারম্যান, শহর তৃণমূলের সভাপতি, পঞ্চায়েত প্রধান এবং অঞ্চল সভাপতিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে দল। অভিষেক জানান, দেড় মাসে তিনি ভোটের ফলাফল ‘পর্যালোচনা’ করেছেন। আগামী তিন মাসের মধ্যে সকলে তার ফল দেখতে পাবেন বলেও জানান অভিষেক।
এ দিন দুপুরে ওই বার্তার পরেই বীরভূমে তৃণমূলের অন্দরে গুঞ্জন শুরু হয়েছে, তবে কি সত্যিই খাঁড়া নামতে চলেছে শহর ও গ্রামে দায়িত্বে থাকা নেতাদের উপর? সত্যিই সাংগঠনিক সংস্কারের পথে দল হাঁটবে কি না তা নিয়ে জোর চর্চা জেলা তৃণমূলের অন্দরে। কারণ, জেলার দুই লোকসভা আসনে বিপুল জয়ের পরও বীরভূমের ছয় পুরসভার মধ্যে তিনটিতে এবং ১৬৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের কমবেশি ৪০টি গ্রাম পঞ্চায়েতে পিছিয়ে আছে শাসক দল। জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলছেন, ‘‘আমি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে যেভাবে চিনি, তাতে যা তিনি বলেন সেটা তিনি পালন করার চেষ্টা করেন। ফলে বীরভূমের ক্ষেত্রেও অন্যথা হওয়ার কারণ নেই। এই কথাগুলিই তো তিনি তারাপীঠে বলে গিয়েছিলেন।’’
তৃণমূল সূত্রে দাবি, গত ৩ এপ্রিল তারাপীঠে এসে প্রথমে দলের বীরভূম জেলা কোর কমিটির সঙ্গে কথা বলেন অভিষেক। দল সূত্রে খবর, এরপর অভিষেক জানিয়ে দেন, যে নেতা যে এলাকার দায়িত্বে সেখানে ভোটের ‘লিড’ তাঁকে রক্ষা করতে হবে। বিশেষ করে পুরসভা এলাকার পুরপ্রধান, উপ-পুরপ্রধান ও টাউন সভাপতিদের দায়িত্বের উপরে তিনি জোর দেন বলেই সূত্রের দাবি। প্রত্যাশিত লিড না থাকলে ভোটের পরে ‘ব্যবস্থা’র বার্তাও দেওয়া হয়।
এ দিন কলকাতার ধর্মতলায় শহিদ সমাবেশের মঞ্চে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পিছনে অভিষেক যুক্তি দেন, পঞ্চায়েত বা পুরসভা ভোটে অনেক নেতা যে পরিশ্রম করেন, লোকসভা বা বিধানসভায় তা করেন না। বস্তুত, ভোটের আগে ঠিক একই বার্তা শোনা গিয়েছিল বীরভূম কেন্দ্রের সাংসদ শতাব্দী রায়ের মুখেও। ভোটের আগে যখন তিনি বিভিন্ন এলাকায়, বিশেষত পুরএলাকাগুলিতে কর্মীদের সঙ্গে বসছিলেন তখন এ নিয়ে নিজের ক্ষোভ জানান শতাব্দী।
এ দিন ব্যবস্থা নেওয়ার সময় বেঁধে দেওয়ার পর জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের অনেকে মনে করছেন, লোকসভা ভোটে অনেক জায়গায় ‘অন্তর্ঘাত’ হয়েছে। তাঁদের দাবি, সেজন্য মূলত দায়ী সেখানকার নেতা ও তাঁদের নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। অভিষেক সেই সংস্কৃতিটাই ভাঙতে চাইছেন বলে মত দলের নেতাদের অনেকের। বীরভূমেও অনেক নেতা পদ হারাতে পারেন বলেও দলের অন্দরে গুঞ্জন চলছে বলে সূত্রের দাবি।
তবে অভিষেকের এই বার্তাকে বিশেষ পাত্তা দিতে নারাজ জেলার বিরোধীরা। দুবরাজপুরের বিজেপি বিধায়ক অনুপ সাহা বলছেন, ‘‘সাংগঠনিক সংস্কার করে নেতা বদলালেও তৃণমূলের দুর্নীতি বদলাবে না। এই দুর্নীতির জন্যই এত গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। তাতেই বীতশ্রদ্ধ হয়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় মানুষ শাসক দলের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।’’