বুধবার সিউড়ির আবদারপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উদ্বোধন হল। —নিজস্ব চিত্র।
রেল উড়ালপথ নির্মাণের জন্য দু’বছর আগে সিউড়ি ১ ব্লকের আব্দারপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি বড় অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছিল। প্রায় আড়াই বছর একটি মাত্র শ্রেণিকক্ষের উপরে নির্ভর করে কোনও রকমে চলছিল স্কুলের পঠন-পাঠন। যার জেরে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতিও তলানিতে ঠেকেছিল। সেই দীর্ঘ অসুবিধার সমাধান হল বুধবার। ভেঙে ফেলা স্কুল ভবনের পাশেই তৈরি হওয়া নতুন ভবনের উদ্বোধন করা হল এ দিন।
নতুন ভবন উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি প্রলয় নায়েক, সিউড়ি ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল, ওই স্কুলের শিক্ষিকা তথা বীরভূম জেলা পরিষদের সদস্যা আঁখি অধিকারী প্রমুখরা। প্রলয় বলেন, “আমরা অনেকদিন ধরেই চেষ্টা করছিলাম এই স্কুল ভবন নতুন করে তৈরি করার। স্থানীয় শিশুদের পড়াশোনার যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সেই বিষয়টিকে মাথায় রেখে স্কুলের পাশেই এই নতুন ভবন তৈরি হল। আশা করি, স্কুলে পড়াশোনার যা সমস্যা ছিল, এ বারে সব মিটে যাবে।”
আব্দারপুর রেলগেট সংলগ্ন এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬২ সালে। স্কুলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন হয়। স্কুলে দু’জন শিক্ষক এবং এক জন শিক্ষিকা ও ৫০ জনের মতো পড়ুয়া আছে। বর্তমানে ওই স্কুলের ঠিক সামনেই চলছে রেল উড়ালপথের কাজ। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই উড়ালপথ তৈরির জন্য স্কুল ভবন সরানোর কথা জানিয়ে ২০১৭ সালে প্রথম স্কুলকে চিঠি করা হয়। একই চিঠি ২০১৯ সালে পুনরায় পাঠানো হয়। এর পর ২০২১ সালের ১৮ জুন স্কুলের ভবনের প্রায় ৯০ শতাংশই ভেঙে ফেলা হয়।
স্কুলের শিক্ষকরা জানান, আগে স্কুলে দু’টি ক্লাসঘর, শৌচাগার, রান্নাঘর ছিল। কিন্তু, শেষ আড়াই বছর ধরে কেবল একটিই কক্ষ পড়েছিল। যার সরাসরি প্রভাব পড়ে পঠনপাঠনের উপরে। ২০২১ সালের তুলনায় স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা যেমন কমেছে, বর্তমান ছাত্রছাত্রীদেরও অধিকাংশ স্কুলে প্রায় আসে না। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ, জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক, বিডিও সহ সর্বস্তরে বিষয়টি সম্পর্কে জানানো হলেও বিকল্প জায়গা না-মেলায় কিছুই করক যাচ্ছিল না।
অবশেষে, ভেঙে দেওয়া ভবনের পাশেই একটি ফাঁকা জায়গায় তৈরি হল নতুন ভবন। চারটি শ্রেণিকক্ষ, একটি হলঘর, একটি রান্নার ঘর এবং একটি শৌচালয় তৈরি করা হয়েছে। ভবনটি জাতীয় সড়ক তথা রেল উড়ালপথের একদম পাশে হওয়ায় পড়ুয়াদের নিরাপত্তার কথা ভেবে উঁচু পাচিলও তৈরি করা হয়েছে। রেলের তরফ থেকে ক্ষতিপূরণ বাবদ যে প্রায় ২৩ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল, তা দিয়েই এই নতুন ভবন তৈরি হয়েছে। সিউড়ি ১ পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে স্কুলে পানীয় জলের ব্যবস্থাও করে দেওয়া হয়েছে।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার মণ্ডল বলেন, “এই আড়াই বছরে আমাদের পড়ুয়ার সংখ্যা বেশ কিছুটা কমে গিয়েছিল। তবে, নতুন ভবন তৈরি হতেই অভিভাবকেরা আবার ভর্তির বিষয়ে খোঁজখবর করছেন। আশা করি, আসন্ন শিক্ষাবর্ষে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বাড়বে।’’ শিক্ষিকা আঁখি অধিকারী বলেন, “গত কয়েক বছর শৌচালয় না থাকায় শিক্ষিকা ও ছাত্রীদের খুব অসুবিধা হয়েছিল। এখন প্রায় সব সমস্যাই মিটে গেছে। শুধু বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ বাকি আছে। তা সংশ্লিষ্ট সকলকে জানিয়েছি।”