প্রচারে পলি। নিজস্ব চিত্র।
হ্যান্ড মাইকে প্লাস্টিক ছাড়ার ডাক নিয়ে সন্ধ্যায় বড়জোড়া বাজারে ঘুরছেন যে মহিলা, তাঁকে কেমন চেনা-চেনা ঠেকছিল পখন্নার ময়না বাউরির। কাছে গিয়ে ভাল করে দেখেন, ঠিকই! বিকেলে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত ছেলেকে রক্ত দিতে নিয়ে গিয়েছিলেন বড়জোড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। তখন ইনিই শুশ্রূষা করেছিলেন।
পলি চট্টোপাধ্যায়। সাকিন বড়জোড়ার মুখার্জিপাড়া। বয়স বছর সাতাশ। সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের এই নার্সকে নানা ভূমিকায় দেখেন এলাকার মানুষজন। কখনও রক্তদানের আহ্বান নিয়ে চষে বেড়ান মাঠ-পাথার, কখনও প্লাস্টিক বর্জনের বার্তা দিয়ে পোস্টার সাঁটেন গ্রাম-নগরে। পাঁচাল গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সুমিত্রা বিশ্বাস বলেন, ‘‘পলি বেশ কয়েক বার থ্যালাসেমিয়া সচেতনতায় শিবির করে গিয়েছেন আমাদের স্কুলে। পড়ুয়ারা সবাই ওর কথায় খুব উদ্বুদ্ধ হয়েছিল।’’
বড়জোড়াতেই বেড়ে ওঠা পলির। ঝাড়খণ্ডের ধানবাদের সরকারি হাসপাতাল থেকে জিএনএম। ২০১৮ সালে বড়জোড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের চাকরিতে যোগ। জানান, স্কুলে থাকাকালীন অঙ্ক শিখতেন কাঞ্চন বিদের কাছে। বড়জোড়া ব্লক ব্লাড ডোনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কাঞ্চনবাবুর থেকে উদ্বুদ্ধ হয়েই তাঁদের সংগঠনে যোগ দেন। চাকরির সঙ্গে এখন যে কাজ চালাচ্ছেন সমান তালে। বড়জোড়া পঞ্চায়েতের সদস্যা স্নেহা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পলি কাজের বাইরেও এলাকায় সচেতনতা প্রচার করেন।’’
কাঞ্চনবাবু জানান, এমনও হয়েছে, রাত জেগে হাসপাতালে কর্তব্য সেরে সকালে কোনও স্কুলে গিয়ে থ্যালাসেমিয়া সচেতনতার শিবির করেছে পলি। আবার সারাদিন কাজ করে সন্ধ্যায় ছুটেছেন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর অভিভাবকদের পরামর্শ দিতে। পলির বাবা শ্রীধর চট্টোপাধ্যায় ও মা তপতীদেবী বলেন, ‘‘ঘর আর চাকরি সামলে ও যে ভাবে এই সমস্ত কাজ করে যাচ্ছে, তার জন্য গর্ব হয়।’’
পলির নিজের কথায়, ‘‘মেয়েদের জীবন সহজ নয়। ছোটবেলা থেকেই শুনেছি, এটা করতে নেই, ওটা করতে নেই; মাইক হাতে রাস্তায় ঘুরলে লোকে কী বলবে? রেয়াত করিনি। যত দিন পারব এই কাজ করে যাব।’’
বছর তিনেক আগে গাঁটছড়া বেঁধেছেন পলি। স্বামী বেসরকারি ব্যাঙ্কের আধিকারিক। বিয়ের আগেই জানিয়েছিলেন, সমাজের জন্য কিছু করতে চান। কলকাতায় গিয়ে থিতু হতে পারবেন না। আর পলির স্বামী জয় বন্দোপাধ্যায় এখন বলেন, ‘‘এমন স্ত্রীর জন্য গর্ব হয়।’’