রামপুরহাট ১ ব্লকের তিলডাঙা গ্রামে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।
বৃষ্টির খামখেয়ালিপনায় দু’বছর এলাকায় ধান চাষ হয়নি। খড়ের অভাবে মাটির বাড়িতে নতুন ছাউনিও দেওয়া যায়নি। কারও ছাউনিতে প্লাস্টিক ঢাকা, কারও ত্রিপল। ঝড় উঠলে বুক কাঁপে। শীতে হু হু করে ঠান্ডা বাতাস ঢোকে। এ সবের মধ্যেই বাস রামপুরহাট ১ ব্লকের তিলডাঙা গ্রামের বাসিন্দাদের। কারণ, গ্রামে ইন্টারনেট না থাকায় ২০১৮-এর আবাস যোজনার সমীক্ষার সময়ে জিয়ো-ট্যাগিং করা যায়নি। তাই তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে গোটা গ্রামই। প্রশাসনের কাছে বার বার আবেদনে শুধুই আশ্বাস মিলেছে, দাবি বাসিন্দাদের। এ বারও আগামী সমীক্ষার জন্য অপেক্ষা করার কথাই বলেছে জেলা প্রশাসন।
নেটওয়ার্ক পাওয়ার জন্য সম্প্রতি পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা পুরুলিয়া ২ ব্লকের বেলমা পঞ্চায়েতের দুবরাজপুর গ্রামে বাঁশের মাথায় ব্যাগে মোবাইল বেঁধে ‘হটস্পট’ চালু করে জিয়ো ট্যাগিং করে আবাসের সমীক্ষার কাজ হয়েছে। ২০১৮ সালে তেমন ‘সৌভাগ্য’ হয়নি তিলডাঙা গ্রামের ৮০-৯০টি আদিবাসী পরিবারের। গ্রামবাসী রানি হেমব্রম, শ্যাম হেমব্রম, ভুবন টুডু, ফুলমণি টুডু, লাল মার্ডিরা জানান, ইন্টারনেট না মেলায় ২০১৮ সালের সমীক্ষায় বাদ যাওয়ার পরে, ২০২২ সালে বিডিও-র কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। তখনও প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু কিছু হয়নি। এ বারও বিডিও-র কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
গ্রামবাসী জনুই হেমব্রম বলেন, ‘‘একাধিক বার দুয়ারে সরকার শিবির, ‘দিদিকে বলো’তেও জানিয়েছি আমরা। সুরাহা হয়নি। অথচ, পাশের নারায়ণপুর পঞ্চায়েতের নতুনপাড়া গ্রাম আবাস তালিকায় জায়গা পেয়েছে।’’ গ্রামের যুবক, কম্পিউটার সায়েন্সের ছাত্র ইন্দ্রজিৎ হেমব্রমের প্রশ্ন, ‘‘জিয়ো ট্যাগিং-এর অভাবে তালিকায় নাম না ওঠা তো সরকারি ব্যবস্থার গাফিলতি। এর জন্য গোটা গ্রাম কেন বঞ্চিত থাকবে?’’
রামপুরহাট ১ বিডিও অঙ্কুর মিত্র বলেন, ‘‘গ্রামবাসীরা স্মারকলিপি দিয়েছেন। ২০১৮-এর তালিকা ধরে কাজ হচ্ছে। যাঁরা যোগ্য হলেও তালিকায় নাম নেই, তাঁদের আবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছি। এখনই আমাদের কিছু করার নেই।’’
২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই গ্রাম থেকে জয়ী হন বিজেপির দিলীপ মুর্মু। তিনি বলেন, ‘‘আমি জেতার আগে সমীক্ষা হয়েছে। এখনও কেন নাম ওঠেনি, আমরাও জানতে চাই।’’ বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহার অবশ্য দাবি, ‘‘এখানে কোনও চক্রান্ত আছে কি না, তদন্ত করে দেখতে হবে।’’ যদিও স্থানীয় বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিষয়টা জেলাশাসককে দেখতে বলা হয়েছে।’’
জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, ‘‘সমস্যার কথা আমরা জানি। এখন ২০১৮ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে। নতুন করে সমীক্ষা না হওয়া পর্যন্ত এখনই কিছু করে উঠতে পারছি না। নতুন সমীক্ষার সময়ে, যাঁদের নাম তালিকায় নেই, তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।’’