মুরারই থানায় কোটি টাকার টিকিট নিয়ে আসারুল কাজী। —নিজস্ব চিত্র।
সকালে দিনমজুর। দুপুরে কোটিপতি। এ ভাবেই বদলে গিয়েছে মুরারই থানার গোপালপুর গ্রামের আসারুল কাজীর জীবন। সৌজন্যে লটারি। আপাতত মুরারই থানায় আশ্রয় নিয়েছেন আসারুল।
দিনমজুর আসারুলের অভাবের সংসার। দশ বছরের ছেলে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন। তার চিকিৎসা করানো সম্ভব ছিল না। সেই আনারুলই বুধবার বিকেলে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে মুরারই থানার ভাদিশ্বর মোড়ে এক লটারি দোকান থেকে তিরিশ টাকার লটারির টিকিট কাটেন। বৃহস্পতিবার সকালে মাঠের কাজ সেরে বাড়ি ফেরেন আসারুল। তার পরে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে যাওয়া পথে জানতে পারেন, যে দোকান থেকে তিনি লটারির টিকিট কেটে ছিলেন সেখানের একটি টিকিট কোটি টাকা জিতেছে। টিকিট মেলাতেই আনন্দ আর আতঙ্কে আক্রান্ত হন আসারুল। দুপুর গড়াতেই মুরারই থানায় হাজির হন আসারুল। জেলার এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘তাঁকে সমস্ত সুরক্ষা দেওয়া হবে।’’
গ্রামবাসীদের একাংশ জানান, মাটির বাড়িতে বাবা, মা, স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাস আসারুলের। এক দিন কাজ না পেলে সংসার চালানোই মুশকিল ছিল। এই অবস্থায় কোটি টাকা পাওয়ায় কার্যত বাকরুদ্ধ পরিবার। আসারুলের বাবা আয়ুব কাজী বলেন, ‘‘অভাবের সংসারে এক সঙ্গে পঞ্চাশ হাজার টাকাও দেখেনি। কোটি টাকা আমাদের স্বপ্ন। ছেলের ইচ্ছে ছিল পরিবারের যেন দু’বেলা অন্নসংস্থান হয়। এ বার সে চিন্তা রইল না।’’
মুরারই পঞ্চায়েতের প্রধান নিতু রবিদাস বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় নাম ছিল না। তবে আবাস প্লাসে নাম ছিল। সেই টাকা না আসায় কাজ হয়নি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘রেশন খাদ্যসামগ্রী পেলেও এলাকায় মজুরি কম হওয়ায় বহু পরিবার সমস্যায় রয়েছেন। সেই জন্য এলাকার বহু বাসিন্দা ভিন্ রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজে গিয়েছেন। তবে পরিবারে বয়স্ক সদস্য থাকলে অনেকে বাইরে যেতে পারেন না। আসরুলও তাই গ্রামেই ছিলেন।”
আসারুল জানান, অভাব থাকায় প্রতি দিন টিকিট কিনতে পারতেন না। তবে সপ্তাহে দু’-এক দিন টিকিট কিনতেন। তবে এ ভাবে কোটি টাকা জিতবেন তা ভাবেননি। তিনি বলেন, “ছেলের চিকিৎসা করাতে পারছিলাম না। এ বার ভিন্ রাজ্যে গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারব। খাওয়া-পড়া নিয়েও চিন্তা থাকবে না। তবে ভয়ও আছে। তাই থানায় আশ্রয় নিয়েছি।” গোপালপুরের বাসিন্দা অসিত রাজবংশী বলেন, ‘‘আসারুলকে থানায় যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম। দুঃস্থ পরিবার। কোটি টাকা জেতায় আমরা খুশি।”