শান্তিনিকেতনের বল্লভপুরডাঙার আদিবাসী গ্রামে। নিজস্ব চিত্র
মুখ্যমন্ত্রীর ঘুরে যাওয়া আদিবাসী গ্রামকে মডেল গ্রাম হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে বীরভূম জেলা প্রশাসন। সেই মতো জোরকদমে কাজ চলছে শান্তিনিকেতনের বল্লভপুরডাঙার আদিবাসী গ্রামে। কাজ কেমন চলছে, গ্রামবাসীদের আরও কী কী প্রয়োজন রয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে বুধবার সকালে সেখানে হাজির হন ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচির জেলা নোডাল অফিসার রশ্মি সেন, জেলাশাসক বিজয় ভারতী এবং অন্য প্রশাসনিক আধিকারিকেরা।
জেলাশাসক বলেন, “পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে জেলা স্তর পর্যন্ত চেষ্টা চালানো হচ্ছে, যাতে এই গ্রামটিকে একটি আদর্শ গ্রাম হিসেবে গড়ে তোলা যায়। আদর্শ গ্রাম হওয়ার জন্য যা যা প্রয়োজন, তার প্রায় ৬০ শতাংশ কাজ এখনও পর্যন্ত হয়ে গিয়েছে। বাকি কাজও বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে করার চষ্টা চলছে। আশা করি, খুব তাড়াতাড়ি আমরা আদর্শ গ্রাম গড়ে তুলতে পারব।” জেলাশাসক ছাড়াও এ দিনের পরিদর্শনে ছিলেন বিডিও (বোলপুর-শ্রীনিকেতন) শেখর সাঁই, রূপপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রণেন্দ্রনাথ সরকার।
গত মাসে জেলা সফর শেষ করার আগে ৩০ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হঠাৎই সোনাঝুরির ভিতরে থাকা এই আদিবাসী গ্রামে চলে আসেন। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে গ্রামবাসীরা আবাস যোজনার বাড়ি, রাস্তা, বিদ্যুৎ, পানীয় জল, শৌচাগার-সহ নানা অভাব-অভিযোগের কথা জানান। মুখ্যমন্ত্রী দ্রুত সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দেন জেলাশাসককে। এর পরেই জেলা প্রশাসন পরিকল্পনা নেয় গ্রামটিকে মডেল গ্রাম হিসেবে গড়ে তোলার।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বল্লভপুরডাঙায় তিনটি এবং সরকারডাঙা এলাকায় একটি সোলার সাবমার্সিবল বসানো, এলাকার ১৪৪টি বাড়িতে নতুন করে শৌচাগার, গীতাঞ্জলি প্রকল্প ও আবাস যোজনার বেশ কিছু বাড়ি নতুন করে তৈরি করার চিন্তাভাবনা, গ্রামে পানীয় জলের সমস্যা দূর করতে গোটা দশেক টিউবওয়েল নতুন করে বসানো হয়েছে। যে সমস্ত বাড়িতে এখনও বিদ্যুতের সংযোগ পৌঁছয়নি, সেগুলিতে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, গ্রামের পুকুর ও নর্দমা সংস্কার করা হচ্ছে। এ ছাড়াও গোটা গ্রামকে ছবি দিয়েও সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। এ দিন গ্রাম পরিদর্শন করে রশ্মি সেন বলেন, “জেলাশাসকের মুখে এই গ্রামের কথা জানতে পেরে আজ এসে দেখলাম, গ্রামে এখনও কিছু জিনিসের প্রয়োজন রয়েছে। একটু চেষ্টা করলেই জেলা প্রশাসন সেই প্রয়োজনগুলি পূরণ করতে পারবে। সেই চেষ্টাও প্রশাসন চালাচ্ছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমি মনে করি, এই মডেল গ্রাম তৈরির ভাবনা শুধু অভিনব ও প্রশংসনীয়ই নয়, এই ধরনের উদ্যোগ সরাসরি মানুষের কথা শুনে শুরু হয়েছে। সেটাই সবথেকে বড় কথা।”
এই ধরনের প্রশাসনিক তৎপরতায় খুশি গ্রামবাসীরা। স্থানীয় হরি মুর্মু, মনি বাস্কি, জাহানারা বিবিরা বলেন, “প্রশাসনিক আধিকারিকেরা বাড়ি বাড়ি এসে খোঁজখবর নিচ্ছেন। আমরা ওঁদের সুবিধা-অসুবিধার কথা জানিয়েছি। আমাদের যে সমস্ত সমস্যা রয়েছে, প্রশাসন সেগুলি সমাধান করে দিলেই আমরা সবচেয়ে উপকৃত হব।’’