মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অনুব্রত মণ্ডল। নিজস্ব ছবি।
অনুব্রত মণ্ডলের অনুপস্থিতিতে বীরভূমে দলের কোর কমিটিতে কাজল শেখের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে অসন্তোষের আভাস মিলছিল বেশ কয়েক দিন ধরে। এ বার তা প্রকাশ্যে চলে এল। অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এক জেলা নেতা সমাজমাধ্যমে লিখলেন, জেলায় দলের কোর কমিটি বলে কিছু নেই! ঘটনাচক্রে, ওই কোর কমিটি তৈরি করে গিয়েছেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বীরভূম জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত ঘোষের ওই ফেসবুক পোস্ট ঘিরে জেলায় স্বাভাবিক ভাবেই গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। যদিও পোস্ট করার কিছু ক্ষণের মধ্যে সেটি মুছে দেন সুদীপ্ত। কিন্তু তাতে বিতর্ক থামেনি। তৃণমূলের ওই নেতা ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘‘বোলপুর শহরে কোনও ফালতু রাজনীতি হতে দেব না। এখানে আমরা মিলেমিশে থাকি। ধান্দাবাজ রাজনীতিকদের কোনও জায়গা নেই।’’ সুদীপ্ত আরও একটি পোস্টে লেখেন, ‘‘বীরভূম জেলায় কোর কমিটি বলে কিছু নেই। আসল কমিটি হচ্ছে, আমি তৃণমূল কি না... না কি আমি ধান্দাবাজ!’’
এই মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধায় যোগাযোগ করা হয় সুদীপ্তের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘দিদি নিজে যখন দেখবেন বলেছেন, দিদি যা বলবেন সেটাই সিদ্ধান্ত হিসাবে মেনে নেব।’’
গত জানুয়ারি মাসে বোলপুরের রাঙাবিতানে জেলার বাছাই নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে জেলার কোর কমিটির সদস্য সংখ্যা চার থেকে বাড়িয়ে সাত করে দেন দলনেত্রী মমতা। বিকাশ রায়চৌধুরী, অভিজিৎ সিংহ, আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং চন্দ্রনাথ সিংহের সঙ্গে ওই কমিটিতে জায়গা পান দুই সাংসদ অসিত মাল ও শতাব্দী রায় এবং অনুব্রতের বিরোধী শিবিরের বলে পরিচিত কাজল। দলীয় সূত্রের দাবি, অস্বস্তির সূত্রপাত সেই দিন থেকেই। তৃণমূলের একাংশের মতে, নাম না করলেও সুদীপ্তের নিশানায় কাজলই ছিলেন। এ ব্যাপারে নানুরের তৃণমূল নেতা কাজলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
কোর কমিটিতে ঠাঁই পাওয়ার পর থেকেই কাজলের বেশ কয়েকটি বিতর্কিত মন্তব্যে অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে জেলার নেতাদের। ফেব্রুয়ারি মাসে জেলা কমিটির বৈঠকের আগে কেন কোর কমিটির বৈঠক ডাকা হল না, তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বৈঠক ছেড়ে কাজলের বেরিয়ে যাওয়ায় কম বিতর্ক হয়নি। তার পর দিনই জেলা কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশের সঙ্গে জেলবন্দি অনুব্রতের (তখনও আসানসোল সংশোধনাগারে বন্দি তিনি) সম্পর্ক নিয়ে কাজলের মন্তব্য শোরগোল ফেলে দিয়েছিল। বেজায় অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিল দলকে। অন্দরে প্রশ্ন উঠেছিল, দলের কেউ তাঁকে (কাজলকে) ইন্ধন দিচ্ছেন না তো? দলীয় সূত্রেরই দাবি, অস্বস্তি এতটাই বেড়েছিল যে বিধানসভা অধিবেশনের শেষে পরিস্থিতি সামাল দিতে বিকাশ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখাও করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয়েছে মানলেও কী আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে অবশ্য মুখ খোলেননি বিকাশ।
আবার কিছু দিন আগে কাজলও কলকাতা গিয়ে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন। একাংশের দাবি, রাজ্য নেতৃত্বকে জেলার ‘রিপোর্ট’ দিয়ে এসেছেন কাজল। তা নিয়েও জেলায় জল্পনা তৈরি হয়েছে দলের অন্দরে। তার মধ্যেই ‘অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ’ নেতার এমন ফেসবুক পোস্টে সেই জল্পনা আরও জোরালো হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে মুখ খুলতে নারাজ জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কী কোর কমিটি, কত জনের কমিটি, আমি জানি না। তাই কোন নেতা কী বলছে, আমি বলতে পারব না। যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার অন্যেরা বলবেন।’’