Ancient Dance Form

বাঁচুক রায়বেঁশে, শিল্পীদের নিয়ে কর্মশালা

কর্মশালায় প্রশিক্ষক হিসেবে থাকছেন রায়বেঁশে লোকনৃত্য নিয়ে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া ঘুরে আসা চারকোল গ্রামের রায়বেঁশে শিল্পী মাধব প্রামাণিক। তিনি জানালেন, এখন তাঁদের গ্রামে চারটি রায়বেঁশে দল আছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:২৩
Share:

রায়বেঁশে নৃত্যের কর্মশালা। মঙ্গলবার রামপুরহাট রেলওয়ে রঙ্গমঞ্চে। —নিজস্ব চিত্র।

কয়েক বছর আগে পর্যন্ত পাড়া ও মহল্লার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডাক পড়ত রায়বেঁশে দলের নৃত্যশিল্পীদের। ঢোল, কাঁসরের তালে ওই সমস্ত শিল্পীদের নাচ দেখতে ভিড়ও জমত খুব। ক্রমশ হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন এই লোকনৃত্যকে পুনর্জন্ম দেওয়ার ভাবনায় শুরু হয়েছে শিল্পীদের নিয়ে তিন দিনের কর্মশালা এবং অনুষ্ঠান। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় আদিবাসী ও বীরভূম জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের সহযোগিতায় মঙ্গলবার রামপুরহাটে শুরু হল এই কর্মশালা। শহরের রেলওয়ে ইনস্টিটিউট মঞ্চে কর্মশালা চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত।

Advertisement

তিন দিনের কর্মশালায় বীরভূম-সহ পূর্ব বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, ঝাড়গ্রাম ও হুগলি জেলার ৩০০ জন রায়বেঁশে শিল্পী যোগ দেবেন। কর্মশালায় রায়বেঁশে শিল্পীদের জন্য যেমন বিভিন্ন জেলার প্রশিক্ষকরা শিল্পীদের প্রশিক্ষণ দেবেন, তেমনই রায়বেঁশে নৃত্য নিয়ে আলোচনাও চলবে। বীরভূম জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের আধিকারিক অরিত্র চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সরকারি সহযোগিতায় লোকশিল্পের প্রসারে জেলায় এই প্রথম রায়বেঁশে লোকনৃত্য নিয়ে শিল্পীদের নিয়ে এই ধরনের কর্মশালা হচ্ছে। রায়বেঁশে লোকনৃত্যকে নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া এবং নতুন নতুন নাচের শারীরিক কসরত বিভিন্ন জেলার শিল্পীদের মধ্যে আদানপ্রদান করাই কর্মশালার উদ্দেশ্য।’’

কর্মশালার প্রথম দিনে লোকসংস্কৃতি গবেষক আদিত্য মুখোপাধ্যায় রায়বেঁশে লোকনৃত্যের উৎস ও শিল্পীদের জীবন নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘‘রায়বেঁশে লোকনৃত্যকে প্রচারের আলোয় আনার চেষ্টা করেছিলেন ব্রতচারী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা গুরুসদয় দত্ত। বীরভূমে জেলাশাসক থাকাকালীন ১৯৩০-৩১ সালে গুরুসদয় রায়বেঁশেকে বাঁচিয়ে তোলার চেষ্টা করেন।’’ তিনি জানান, বীরভূমের নানুর থানার চারকোল গ্রামের তৎকালীন রায়বেঁশে শিল্পী রামপদ প্রামাণিক, গোবর্দ্ধন প্রামাণিকদের নিয়ে গুরুসদয় শুরু করেছিলেন রায়বেঁশে নৃত্যের প্রচার।

Advertisement

আদিত্য বলেন, ‘‘রায়বেঁশে শিল্পীদের আগে জমি দখলের লড়াইয়ে ব্যবহার করা হত। এর ফলে অনেক শিল্পী পেশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। আগে শিল্পীরা তেমন সরকারি ভাবে সম্মান পেতেন না, সরকারি অনুষ্ঠান করার সুযোগ পেতেন না। বর্তমানে শিল্পীরা সরকারি ভাতা পাচ্ছেন, সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডাক পাচ্ছেন। তবুও শিল্পীদের জীবন জীবিকার তাগিদে সরকারের এই শিল্পীদের আরও বেশি করে পাশে থাকার প্রয়োজন আছে।’’

কর্মশালায় প্রশিক্ষক হিসেবে থাকছেন রায়বেঁশে লোকনৃত্য নিয়ে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া ঘুরে আসা চারকোল গ্রামের রায়বেঁশে শিল্পী মাধব প্রামাণিক। তিনি জানালেন, এখন তাঁদের গ্রামে চারটি রায়বেঁশে দল আছে। তাঁর কথায়, ‘‘বাপ ঠাকুর্দার আমল ত্থেকে এই শিল্পকে ধরে রেখেছেন অনেকে। আমরা এই লোকশিল্পের আরও বেশি বেশি প্রসার চাই।’’

মুর্শিদাবাদ জেলার বড়ঞা থানার সাহোড়া থেকে কর্মশালায় এসেছেন আর এক প্রশিক্ষক বসুদেব ভল্লা। তিনি জানালেন, বর্তমানে নতুন প্রজন্ম রায়বেঁশে লোকনৃত্যের বিভিন্ন ধারার শারীরিক কসরতের সঙ্গে পরিচিত নয়। অনেকেই নিয়মিত শারীরিক কসরত অভ্যাস না করেও এই লোকনৃত্যে যোগ দিয়ে থাকেন। অনেকেই আবার প্রাচীন এই লোকনৃত্যকে নতুন আঙ্গিকে পরিবেশন করতে চাইছেন। তাঁর কথায়, ‘‘পুরনো ধারাকে বজায় রেখে নিয়মিত চর্চার মধ্যে শিল্পীরা এই লোকনৃত্যকে এগিয়ে নিয়ে চলুন, এটাই আমরা চাইব।’’

কর্মশালায় অংশগ্রহণ করতে পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া থেকে রায়বেঁশে দলে দেখা গেল নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের। দলে পঞ্চম, সপ্তম, নবম শ্রেণিতে পাঠরত পড়ুয়াদের সঙ্গে কলেজ পড়ুয়ারাও রায়বেঁশে লোকনৃত্যকে ভালবেসে যোগ দিয়েছেন। আবার লোকশিল্পের টানে দু’বছর আগে গঠিত দল নিয়ে ঝাড়গ্রামের বিনপুর থেকেও রায়বেঁশে লোকনৃত্যের বিভিন্ন আঙ্গিকের শিক্ষা নিতে এসেছেন শিল্পীরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement