কুড়কুড়ে ছাতু কেনা-বেচা চলছে। বুধবার, বাঁকুড়ার জয়পুরে। নিজস্ব চিত্র।
রাস্তার দু’ধারে সার দিয়ে বসেছেন ছাতু বিক্রেতারা। চুপড়ি থেকে বেছে বেছে সাধের কুড়কুড়ে ছাতু কিনতে ভিড় জমিয়েছেন ক্রেতারাও। প্রত্যেক বর্ষাতেই কুড়কুড়ে ছাতু যেমন বাঁকুড়াবাসীর রসনা তৃপ্ত করে তেমনই বিক্রেতাদের ঘরে লক্ষ্মী আনে। বুধবার জয়পুরের বাজারে গিয়ে দেখা গেল ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বাঁকুড়ার জঙ্গলের ওই অর্থকরী সম্পদ। মণিমালা লোহার, সুমিত্রা লোহার, রিতা বাউরি, বুলু মহাদণ্ডের মত বিক্রেতারা জানান, “ভোর ভোর সারা জঙ্গল ঘুরে এক কেজি ছাতু সংগ্রহ করি। আমাদের জমিজমা নেই, লোকের জমিতেও কাজ নেই। আর একশো দিনের কাজ তো কবেই চলে গিয়েছে। ছাতু বিক্রি করে প্রতিদিন ৫০০ থেকে হাজার টাকা রোজগার হয়।” অগ্নিমূল্যের বাজারে ক্রেতাদের নজর কাড়ে পকেটের সাধ্যের মধ্যে থাকা কুড়কুড়ে ছাতু। রবীন সেন, উদয় চক্রবর্তী, কার্তিক দত্ত, রঞ্জিত দের কিছু ক্রেতা বলেন,“কয়েক দিন আগে ৭০ টাকায় একশো ছাতু কিনেছি। যাক এখন সাধ্যের মধ্যেই আছে। তবে একটু বেলা করে ছাতু সাড়ে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। আনাজের যা দাম তার চেয়ে এই ছাতুই ভাল।”
স্থানীয় ভাষায় কুড়কুড়ে ছাতু নামে পরিচিত এই ছত্রাকের বিজ্ঞানসম্মত নাম ‘অ্যাস্ট্রিয়াস হাইগ্রোমেটিকাস’। ফাইবারে উৎকৃষ্ট এই ছাতু গ্রামাঞ্চলের লোভনীয় খাবার। সাধারণত বর্ষায় জঙ্গলের পচা পাতায় মাটির উপরে এই ছাতু বেড়ে ওঠে। ক্রমাগত বৃষ্টির পরে দু’একদিন রোদ উঠলেই কুড়কুড়ে ছাতুতে জঙ্গল ভরে যায়। ভোর বেলায় জঙ্গল ঘুরে ছাতু সংগ্রহ করেন বাঁকুড়ার জয়পুরের কুচিয়াকোল, কোদালবাঁদি, কার্টুল, ঘোড়াডুবি, ময়নাপুর, পদুমপুর-সহ বিভিন্ন গ্রামের মহিলারা। তবে এ বার বঙ্গে দেরিতে বর্ষা ঢোকায় ছাতুর ফলনেও ভাটার আশঙ্কা করছেন বিক্রেতারা। তাঁদের কথায়, “ এ বার যে কী হবে? এত দেরিতে বর্ষা এল, ক’দিন ছাতু পাব জানি না।”