সন্দীপ পাল
জন্মদিন বলে বাড়ির সবাই তাঁর ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু বাড়ির কাছে এসেও ফেরা হল না। খবর এল, বাড়ি থেকে কয়েকশো মিটার দূরে রাস্তার বাঁকে, ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে মোটরবাইক চালক স্কুল শিক্ষকের।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বড়জোড়া-সোনামুখী রাস্তায়, চান্দাই গ্রামে দুর্ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম সন্দীপ পাল (২৮)। তাঁর বাড়ি বড়জোড়ার পখন্না গ্রামে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে দেহ উদ্ধার করে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, বছর পাঁচেক আগে নিতুড়িয়ার নাড়াগড়িয়া দুর্গাদাসি উচ্চ বিদ্যালয়ে অঙ্কের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন সন্দীপ। বছর দুয়েক আগে বিয়ে হয় তাঁর। বর্তমানে তাঁদেরএকটি এক বছরের পুত্র সন্তান রয়েছে।
দুর্ঘটনার খবর গ্রামে পৌঁছতেই শোকের ছায়া নেমে আসে পখন্না গ্রামে। শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন সন্দীপের বাবা অসিত পাল। কথা বলার অবস্থায় নেই সন্দীপের স্ত্রী সৌমি। সন্দীপের এক নিকট আত্মীয় জানান, স্কুলের কাছেই থাকতেন সন্দীপ। বিশেষ বিশেষ দিনে বা ছুটির দিনে বাড়ি ফিরতেন। মোটরবাইক নিয়েই তিনি যাতায়াত করতেন। মঙ্গলবার ছিল সন্দীপের জন্মদিন। আর বুধবার তার ছেলের জন্মদিন। তাই বাড়ির সবাই সন্দীপের বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু বাড়ির কাছে এসেও ফেরা হল না সন্দীপের।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। কিন্তু ততক্ষণে যে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে, আঁচ করতে পারেননি সন্দীপের পরিবারের লোকেরা। বৃষ্টি থামতেই আসে দুঃসংবাদ। বুধবার ময়না-তদন্তের পরে দেহ ফিরতেই গোটা গ্রামে কান্নার রোল ওঠে।
সন্দীপের বন্ধু মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সারা গ্রামে যেন শোন নেমেছে। পাড়ায় এ দিন রান্না হয়নি। অত্যন্ত মেধাবী আর প্রাণোচ্ছল ছিল সন্দীপ। পাড়ার সবাইকে নিয়ে সরস্বতী পুজোর আয়োজন করত। সব কিছুতে সে এগিয়ে থাকত। আমাদের সেই ‘লিডার’ চলে গেল।’’ এলাকায় তিনি ‘বাবান’ নামে বেশি পরিচিত ছিলেন। তাঁর এ ই অকালে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না কেউ।
সন্দীপবাবুর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর গ্রামের বাড়ি তাজপুরে। সেখানেই হয় শেষকৃত্য। শেষকৃত্যে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর সহকর্মী রিন্টু মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের ভীষণ প্রিয় শিক্ষক ছিল সন্দীপ। তারাও খুব দুঃখ পেয়েছে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, ট্রাকটি আটক করা গেলেও চালক পালিয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।