purulia

থ্যালাসেমিয়ার বালিকাকে রক্ত না দিয়েই ফেরত

পেশায় গাড়ি চালক উমেশের বছর সাতেকের মেয়ে ছোট থেকেই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। মেডিক্যাল কলেজের থ্যালাসেমিয়া বিভাগে এনে প্রতি মাসে তিনি মেয়েকে রক্ত দেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:৪৩
Share:

মেয়েকে নিয়ে রক্তের অপেক্ষায় উমেশ রায়। ছবি: সুজিত মাহাতো।

থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত এক বালিকাকে রক্ত না দেওয়ার অভিযোগ উঠল পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে। রক্তের আশায় দিনভর বসে থেকে বিকেলে নাবালিকা মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন পাড়ার বহড়া গ্রামের বাসিন্দা উমেশ রায়। ঘটনা বুধবারের।

Advertisement

উমেশ জানান, তিনি রঘুনাথপুর মহকুমার পাড়া ব্লকের বাসিন্দা। তাই রঘুনাথপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল থেকে রক্ত সংগ্রহ করতে হবে, এই বলে তাঁকে মেডিক্যালের ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মেডিক্যালের সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন উমেশ। মেডিক্যালের সুপার সুকোমল বিষয়ী বলেন, ‘‘মেডিক্যালে যে কোনও ব্লকের রোগী আসবেন। তিনি অন্য মহকুমার বাসিন্দা এই অজুহাতে কাউকে ফেরানো যায় না। এ রকম কোনও নির্দেশিকা ব্লাড ব্যাঙ্কে নেই। ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হবে।’’ তবে মেডিক্যালের ব্লাড ব্যাঙ্কের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক তাপসকুমার রায় বলেন, ‘‘আমাদের কাছে নির্দেশই রয়েছে, থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগী যে এলাকার বাসিন্দা, তিনি সেখানকার ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত পাবেন।’’ তবে ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত সঙ্কট চলছে বলেও তিনি দাবি করেছেন।

পেশায় গাড়ি চালক উমেশের বছর সাতেকের মেয়ে ছোট থেকেই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। মেডিক্যাল কলেজের থ্যালাসেমিয়া বিভাগে এনে প্রতি মাসে তিনি মেয়েকে রক্ত দেন। উমেশ বলছিলেন, "সাত মাস বয়সে মেয়ের থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়ে। তারপর থেকেই নিয়মিত মেয়েকে এখানেই রক্ত দেওয়ার জন্য নিয়ে আসি।" উল্লেখ্য রঘুনাথপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে থ্যালাসেমিয়া বিভাগ নেই।

Advertisement

এ দিন কী ঘটল? উমেশ জানালেন, প্রতিবারের মতোই থ্যালাসেমিয়া বিভাগে মেয়ের কার্ড জমা দিয়েছিলেন। তবে মেয়ের নাম না ডাকায় জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন, থ্যালাসেমিয়া বিভাগ থেকে রক্ত চেয়ে পাঠানো হলেও ব্লাড ব্যাঙ্কের তরফে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তখন তিনি ব্লাড ব্ল্যাঙ্কের কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে যান। তিনি বলেন, পাড়া থানা এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় উমেশকে এখান থেকে রক্ত দেওয়া যাবে না। উমেশের সঙ্গী স্বপন বাউরির কথায়, "মেডিক্যালে রক্তের সঙ্কট থাকায় গত পাঁচবার উমেশ তাঁর মেয়ের রক্তের গ্রুপের (এ-পজিটিভ) দাতা এনে রক্তের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু এ দিন ব্লাড ব্যাঙ্কের চিকিৎসক জানান রঘুনাথপুর সুপার স্পেশালিটি থেকেই রক্ত সংগ্রহ করতে হবে। ছোটবেলা থেকে এখানে রক্ত পেলেও আজ কেন ওখানে যেতে হবে তার সদুত্তর পাইনি।"

উমেশ জানালেন, প্রতি মাসের ২০ তারিখ মেয়েকে রক্ত দিতে হয়। নির্দিষ্ট দিনে রক্ত না দিলে জ্বর আসে, সর্দি-কাশি, কাঁপুনি শুরু হয়। অসহায় এই বাবার কথায়, ‘‘এখানে রক্তের সঙ্কট বলে গত কয়েকবার দাতা এনে মেয়ের জন্য রক্তের ব্যবস্থা করেছি। এ বার দাতা না পেয়ে বাধ্য হয়ে হাসপাতালে এসেছিলাম। জানি না কোথা থেকে রক্ত জোগাড় করতে পারব।’’ পাড়ার বাসিন্দা কলকাতার একটি সরকারি হাসপাতালের প্রাক্তন চিকিৎসক কাশীনাথ সেনগুপ্ত বলেন, "ঘটনাটি অত্যন্ত অমানবিক।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement