খুনের ঘটনায় যাবজ্জীবন দম্পতির। প্রতীকী ছবি।
এক যুবককে খুনের ঘটনায় যাবজ্জীবন হল এক দম্পতির। মঙ্গলবার রামপুরহাট আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক গুরুদাস বিশ্বাস ওই সাজা শোনান। সাজাপ্রাপ্তদের নাম মুক্তা মাল ও তনু মাল। তাঁদের বাড়ি মুরারই থানার পলসা গ্রামে। ঘটনাটি ২০২০ সালের।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বড়জোল গ্রামের বাসিন্দা, পেশায় চাষি ও ক্যানসার রোগে আক্রান্ত বালক মণ্ডলের একমাত্র ছেলে ছিলেন মলয়। বছর চব্বিশের মলয় ছিলেন মিষ্টির কারিগর ছিলেন। বালক মণ্ডলের চাষের জমি দেখভাল এবং বাড়ির অন্যান্য কাজ করতেন মুক্তা ও তাঁর স্ত্রী তনু। সেই সূত্রে বড়জোল গ্রামে বালকের দাদার বাড়িতে মুক্তা ও তনু তাঁদের দুই নাবালক ছেলেমেয়েকে নিয়ে থাকতেন। বাড়িতে কাজের সূত্রে মলয়ের সঙ্গে মুক্তার গভীর বন্ধুত্ব ছিল। ২০২০ সালের ৯ মার্চ, দোলের দিন বিকেলে রামপুরহাট থানার কাষ্ঠগড়া অঞ্চলের পারকান্দি গ্রামে দোলের মেলা উপলক্ষে মিষ্টি তৈরির জন্য বাড়ি থেকে একা বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন মলয়। তার পর থেকে তাঁর খোঁজ মেলেনি। মলয়ের মা সুমিত্রা মণ্ডল ১৭ মার্চ রামপুরহাট থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, গ্রামের ছেলে দশ দিন ধরে নিখোঁজ থাকায় গ্রামের মানুষ ১৭ মার্চ সন্ধ্যায় দুর্গামন্দিরে আলোচনায় বসে। আলোচনায় মলয়দের পরিচারক মুক্তা মালকে ডাকা হয়। মুক্তাকে চেপে ধরতেই তিনি মলয়কে খুনের ঘটনা স্বীকার করে নেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। মুক্তা ও তাঁর স্ত্রীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, জেরার মুখে ওই দম্পতি জানান, ৯ মার্চ চিতুড়ি গ্রামে একটি বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানে সপরিবার গিয়েছিলেন মুক্তা মাল। অনুষ্ঠানের রাতে স্ত্রীকে দেখতে না পেয়ে মুক্তার সন্দেহ হয়। চিতুড়ি গ্রাম ঢুকতে একটি পুকুর পাড়ে স্ত্রীর সঙ্গে মলয়কে ঘনিষ্ঠ ভাবে মেলামেশা করতে দেখেন মুক্তা। এর পরেই মুক্তা মলয়কে প্রাণে মারার পরিকল্পনা করেন। স্ত্রীকেও সেই পরিকল্পনায় শামিল করেন। মলয়ের গলায় নাইলনের দড়ির ফাঁস লাগিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। ১৯ মার্চ গভীর রাতে বড়জোল গ্রাম থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে চিতুড়ি ও বেনোড়া গ্রামের মাঝে হাজরাপুকুর থেকে মলয় মণ্ডলের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
সরকারি আইনজীবী অতীন্দ্র কুমার মণ্ডল জানান, ৩০২ ধারায় খুনের দায়ে ওই দম্পতির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। পাশাপাশি ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাস জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি ২০১ ধারায় মৃতদেহ ও প্রমাণ লোপের চেষ্টায় ৭ বছর কারাদণ্ডের এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাস জেলের নির্দেশ দেন। দু’টি সাজাই এক সঙ্গে চলবে বলে সরকারি আইনজীবী জানান। অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী আব্দুল বারি জানান, তাঁরা এই রায়ে বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবেন। মলয়ের মা এ দিন বলেন, ‘‘আদালতের রায়ে আমি খুশি।’’