উদ্ধার হওয়া বোমা। নিজস্ব চিত্র।
রাতবিরেতে হঠাৎ তোলপাড় গ্রামে। আলো নিয়ে শুরু হল আতিপাতি খোঁজ। পালাতে গিয়ে উঠোনে আছাড় খেয়ে পাকড়াও হল এক জন। এক জনকে নামানো হল বাঁশঝাড় থেকে। এ ভাবেই মোট পাঁচ জন দুষ্কৃতীকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় বলে দাবি গ্রামবাসীর। মঙ্গলবার রাতে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের পিয়ারডোবার ঘটনা। দাবি করা হয়েছে, নৈশ প্রহরীদের তৎপতায় ভেস্তে দেওয়া সম্ভব হয়েছে ডাকাতির ছক।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত পাঁচ জনই পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা থানার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তারা হল মাথুরির মুসা চৌধুরী, নলবনার হোসেন মণ্ডল, মেটেদহরের পিয়ার আলি পাঠান ও সাবির আলি খান এবং খড়কুশমার হাসান চৌধুরী। প্রত্যেকের বয়স পঁচিশ থেকে পঁয়ত্রিশ বছরের মধ্যে। তাদের থেকে উদ্ধার হয়েছে চারটি বোমা, বড় যন্ত্রপাতি খোলার সরঞ্জাম, ইলেক্ট্রিক করাত, কাটারি, টাঙ্গি-সহ বিভিন্ন অস্ত্র। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে একটি গাড়ি। অস্ত্র আইন-সহ একাধিক ধারায় রুজু হয়েছে মামলা। দলটি বড় কোনও ডাকাতির মতলব কষে এসেছিল বলে তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান।
বাঁকাদহ থেকে পিয়ারডোবা গ্রাম হয়ে একটি পিচ রাস্তা গিয়েছে। আবার পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার ধাদিকা থেকে নাচনজাম পর্যন্ত একটি পাকা রাস্তা রয়েছে। সেখান থেকে দু’কিলোমিটার মোরাম রাস্তা ধরে পিয়ারডোবায় আসা যায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ একটি গাড়ি মোরাম রাস্তা ধরে পিয়ারডোবার দিকে যাচ্ছিল। পথে তিন চার জায়গায় রাত পাহারার দল আটকানোর চেষ্টা করলেও থামেনি। খবর যায় গ্রামে। গ্রামের মাঝে একটি মুদির দোকানের কাছে গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে গ্রামরক্ষী বাহিনী। ভিতরে চালক-সহ ন’জন ছিল। এক ফাঁকে গাড়ি থেকে নেমে দলের সবাই ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে পড়ে। শুধু চালক ধরা পড়ে যায়।
গ্রামরক্ষী বাহিনীর সদস্য বিমান পরামানিক ও গ্রামীণ পুলিশ সমীর কিস্কু জানান, এর পরেই খবর দেওয়া হয় বিষ্ণুপুর থানায়। রাত সওয়া ১২টা নাগাদ পুলিশ ভ্যান পৌঁছে যায়। ততক্ষণে ধরে ফেলা হয়েছে আরও এক জনকে। দু’জনকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে শুরু হয় খোঁজ। প্রথমেই সার্চলাইটের আলোয় তিন জন ধরা পড়ে যায়। পরে, এক জনকে নামানো হয় বাঁশঝাড় থেকে। বাকি চার জন পালিয়ে যায়। পুরো পর্ব মিটতে বেজে গিয়েছিল রাত প্রায় আড়াইটে।
এ দিকে খালি হাতে ‘ডাকাত’ ধরে গ্রামের আলোচনার অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠেছেন পিয়ারডোবার প্রৌঢ়া সুমি কিস্কু। রাতে ছেলে গিয়েছিল লুকিয়ে থাকা লোকজনের খোঁজে। তিনি একাই ছিলেন বাড়িতে। তখনও পুলিশ পৌঁছয়নি। সুমি জানান, দাওয়ায় দাঁড়িয়েছিলেন। বাড়ির সামনে গিয়ে পালাতে গিয়ে এক জন আছাড় খেয়ে পড়ে যায়। দৌড়ে গিয়ে তাঁকে জাপটে ধরে চিৎকার শুরু করেন তিনি। লোকজন এসে ধরে ফেলে। বুধবার সুমি বলছিলেন, ‘‘লোকটার হাতে বোমা ছিল। ধরতেই ঝোপের দিকে ছুটে দেয়। ফাটেনি। তবে ওই ঘটনার পরে আতঙ্কে সারারাত ঘুমোতে পারিনি!’’ এ দিকে, রাত আড়াইটেয় শেষ যাকে ধরা হয়, সে ছিল বাঁশঝাড়ের উপরে। নীচে জামা পড়ে থাকতে দেখে উপরে আলো ফেলা হয়। আরও উপরে উঠতে থাকে সে। বাঁশ বেঁকে গিয়ে ঝুপ করে পড়ে একটি বাড়ির টিনের চালে। সেখান থেকে গড়িয়ে মাটিতে।
পাকড়াও হওয়া পাঁচ জনকে গ্রামবাসীর একাংশ মারধর করেন বলে অভিযোগ। তারা প্রত্যেকে আপাতত বিষ্ণুপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাঁকুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) গণেশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘বড় কোনও চক্র এই ঘটনার পিছনে রয়েছে কি না, তা ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা হবে। ধরা পড়া লোকজনকে গ্রাম থেকে উদ্ধার করে আনে পুলিশ। তাদের চোট রয়েছে। পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে হাসপাতালে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’