কালীপুজো দেখতে বেরিয়ে পথে মৃত

যেখানে দেহ তিনটি পাওয়া গিয়েছে, তার উপরেই রয়েছে ছোট্ট একটি রেলসেতু। প্রাথমিক তদন্তে রেলপুলিশের অনুমান, ওই তিন জন মোটরবাইক নিয়ে সেতুতে ওঠার মুখে বাঁকের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় ৫০ ফুট নীচে আছড়ে পড়েন।

Advertisement

নিজস্ব সংবদদাতা

পাড়া শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৫১
Share:

দুর্ঘটনাগ্রস্ত মোটরবাইকটি সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

মোটরবাইকে তিন যুবক কালীপুজো দেখতে বেরিয়েছিলেন রবিবার রাতে। পর দিন, সোমবার সকালে গ্রাম থেকে পনেরো কিলোমিটার দূরে রেলসেতুর নীচে, রেললাইনের পাশ থেকে মিলল সেই তিন যুবকের দেহ।

Advertisement

রঘুনাথপুর-চন্দনকেয়ারি রাজ্য সড়কে, পাড়া থানার আলকুশা গ্রামের অদূরে রেললাইনের কাছ থেকে সোমবার সকালে উদ্ধার করা হয় দীনেশ কুম্ভকার (৩১), আদিত্য মাহাতো (৪১) ও জয়ন্ত মাহাতোর (১৮) দেহ। কাছেই পড়েছিল মোটরবাইকটি। মৃতেরা পাড়া থানার ফুসড়াবাইদ গ্রামের বসিন্দা।

যেখানে দেহ তিনটি পাওয়া গিয়েছে, তার উপরেই রয়েছে ছোট্ট একটি রেলসেতু। প্রাথমিক তদন্তে রেলপুলিশের অনুমান, ওই তিন জন মোটরবাইক নিয়ে সেতুতে ওঠার মুখে বাঁকের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় ৫০ ফুট নীচে আছড়ে পড়েন। সেই আঘাতে ঘটনাস্থলেই তাঁদের মৃত্যু হয়। এ দিন সকালে বাসিন্দারা দেহগুলি দেখতে পেলেও কারা মামলা রুজু করবে, তা নিয়ে পাড়া থানা ও রেল পুলিশের মধ্যে ধন্দ তৈরি হয়। কিন্তু যেহেতু দেহ তিনটি রেললাইনের পাশ থেকেই উদ্ধার হয়েছে, শেষ পর্যন্ত তা উদ্ধার করে মামলা রুজু করে আদ্রার রেল পুলিশ।

Advertisement

এই ঘটনায় ফুসড়াবাইদ গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন জনই পেশায় কাঠমিস্ত্রি। স্থানীয় ঝাপড়া জবড়রা ২ পঞ্চায়েত কার্যালয়ের অদূরে কাঠের দোকান আছে দীনেশের। আদিত্য ও জয়ন্ত সেখানেই কাজ করতেন। লোকের বাড়িতে গিয়েও কাঠের কাজ করতেন তাঁরা।

দীনেশের আত্মীয় সাধন কুম্ভকার জানাচ্ছেন, রবিবার সন্ধ্যায় তিন জন ঠিক করেছিলেন, বেশি রাতে তাঁরা রঘুনাথপুর থানার মৌতোড় গ্রামে কালীপুজো দেখতে যাবেন। রাত ১০টা নাগাদ দীনেশ নিজের মোটরবাইকে বাকি দু’জনকে নিয়ে গ্রাম থেকে বেরোন। এ দিন তাঁরা খবর পান, দুর্ঘটনায় তিন জন মারা গিয়েছেন।

রেল পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, রাতে কখন দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, তা জানা যায়নি। পুজো দেখতে যাওয়ার পথে, না কি ফেরার পথে দুর্ঘটনা ঘটেছে তা-ও স্পষ্ট নয়। এ দিন সকালে স্থানীয় লোকজন রেললাইনের পাশে তিন জনের দেহ দেখতে পান। দীনেশের দেহ ও তাঁর মোটরবাইক রেললাইনের পাশে নালার মধ্যে পড়ে পড়েছিল। বাকি দু’জনের দেহ কিছুটা দূরে পড়েছিল। খবর পেয়ে আদ্রা থেকে রেল পুলিশের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেহ উদ্ধার করেন। সাহায্য করে পাড়া থানাও। পরে দেহগুলি আদ্রা রেল পুলিশের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। প্রয়োজনীয় নথিপত্র তৈরি করতে দেরি হওয়ায় দেহগুলি এ দিন মর্গে পাঠানো যায়নি।

গ্রামবাসীর মধ্যে পসন বাউরি, প্রবোধ বাউরি জানাচ্ছেন, এ দিন সকালে তাঁরা দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আলকুশায় যান। তিন জনকে শনাক্ত করেন নিকট আত্মীয়েরা। খবর আসার পরেই শোকের ছায়া নেমেছে গ্রামে। ফুসড়াবাইদ গ্রামের কালীপুজোর বির্সজনে শোভাযাত্রা-সহ আরও কিছু অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন উদ্যোক্তারা। পসনবাবু বলেন, ‘‘তিন জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর পরে সব অনুষ্ঠান বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।”

এ দিকে মৃত তিন জনই ছিলেন পরিবারের এক মাত্র রোজগেরে সদস্য। তাঁদের মৃত্যুর পরে পরিবারগুলি কার্যত অসহায় হয়ে পড়েছে বলে জানাচ্ছেন গ্রামবাসী। আঠারো বছরের জয়ন্তের বাবার আবার সম্প্রতি মৃত্যু হয়েছে। দীনেশ ও আদিত্যর স্ত্রী-সন্তান আছে। দীনেশের আত্মীয় সাধনবাবু বলেন, ‘‘কী ভাবে ওদের পরিবারকে সামলাব বুঝতে পারছি না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement