বিশ্বভারতী
দেশের সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের র্যাঙ্কিং (এনআইআরএফ)-এ ১৩ ধাপ পিছিয়ে বিশ্বভারতী নেমে এল ৫০ নম্বরে। ২০১১ সালে যে প্রতিষ্ঠান ১১ নম্বরে ছিল, চলতি বছরে তার এই ক্রমাবনতির জন্য পড়ুয়া, প্রাক্তনী থেকে শুরু করে আশ্রমিক সকলেই দায়ী করছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকেই।
উৎকর্ষের বিচারে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি কে কোথায়, ২০১৬ থেকে প্রতি বছর তার ক্রমতালিকা প্রকাশ করে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। বিচারের মাপকাঠি হল, পরিকাঠামো, পড়াশোনার মান, গবেষণার উৎকর্ষ, সমাজের সব শ্রেণিকে শিক্ষার স্রোতে নিয়ে আসার চেষ্টা, পাশ করা পড়ুয়াদের কেরিয়ার ইত্যাদি। সেই বিচারে গত শিক্ষাবর্ষে বিশ্বভারতী ছিল ৩৭ নম্বরে। এ বার সেটাই হয়েছে ৫০। এই মূল্যায়ন শুরু হওয়া থেকে অতীতে কখনও এক বছরে একসঙ্গে ১৩ ধাপ পতন ঘটেনি বিশ্বভারতীর। বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির যে মিলিত র্যাঙ্কিং প্রকাশ করা হয় সেখানেও বিশ্বভারতী ৫৯ তম স্থান থেকে ১০ ধাপ নেমে এই বছর ৬৯ তম স্থানে এসেছে।
তালিকা সামনে আসার পর থেকেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানের অবনমনের জন্য পড়ুয়া, প্রাক্তনী থেকে শুরু করে আশ্রমিক সকলেই দায়ী করছেন কর্তৃপক্ষকে। বিশ্বভারতী রাজ্যের এক মাত্র কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও বটে। প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর মনে করেন, “বর্তমানে বিশ্বভারতীর হাল ধরার কোনও লোক নেই। এই ভাবে চলতে থাকলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বপ্নের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকবে। খুব দ্রুত যদি হাল ধরার মতো মানুষ বিশ্বভারতীতে না আসেন, তা হলে সব শেষ হয়ে যাবে।” অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র তথা বিশ্বভারতী এসএফআই লোকাল কমিটির সম্পাদক সোমনাথ সৌ-এর মতে, “বর্তমান কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে মুক্ত চিন্তা এবং মুক্ত আলোচনার পরিসরকেই শেষ করে দিচ্ছেন। পড়াশোনা বা জ্ঞানচর্চার থেকে অন্যান্য বিষয়গুলির প্রতিই এঁদের আগ্রহ বেশি। এ ভাবে চলতে থাকলে বিশ্বভারতী ‘অচলায়তনে’ পরিণত হবে।’’
যদিও শান্তিনিকেতন কর্মীমণ্ডলীর যুগ্ম-সম্পাদক কিশোর ভট্টাচার্য বলছেন, “বেশ কয়েক বছর ধরে বিশ্বভারতীতে কোনও স্থায়ী উপাচার্য ছিলেন না। ফলে প্রতিষ্ঠান সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেছে। বর্তমান উপাচার্যের উপরে আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। আমরা আশা রাখি তাঁর হাত ধরেই বিশ্বভারতী আবার ঘুরে দাঁড়াবে।” তার জবাবে অধ্যাপক সংগঠনের এক সদস্য বলেন, “২০১৬ সাল থেকে বিশ্বভারতী স্থায়ী উপাচার্যহীন থাকলেও ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে বিদ্যুৎ চক্রবর্তী উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেছেন।
ফলে অবনমনের দায় তাঁর উপরেও বর্তায়।’’