ন’ মাস কেটে গেলেও পুলিশ তাদের টিকি খুঁজে পায়নি। খুনের ঘটনায় ফেরার সেই অভিযুক্তেরাই পুলিশের নাকের ডগায় আদালতে এলেন। আত্মসমর্পণও করলেন। অথচ ইলামবাজারের কানুর গ্রামের বিজেপি কর্মী রহিম শেখ খুনে ফেরার ওই ১৩ তৃণমূল কর্মীকে নিজেদের হেফাজতেই চাইল না পুলিশ!
বুধবার জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়ে অভিযুক্তদের প্রত্যেকেই জেল হাজতে পাঠিয়েছেন বোলপুরের এসিজেএম সঙ্ঘমিত্রা পোদ্দার। আর তার পরেই ফের বীরভূম পুলিশের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। বিজেপি-র অভিযোগ, অভিযুক্তদের রাজনৈতিক পরিচয় শাসক দলের কর্মী বলেই পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেনি। এমনকী, খুনে অভিযুক্ত হলেও তাদের নিজেদের হেফাজতে নেয়নি।
বিজেপি-র জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল বলেন, “বীরভূমে এটা নতুন নয়। সাগর ঘোষ থেকে রহিম শেখ, প্রত্যেকটি খুনের ঘটনাতেই জেলার মানুষ পুলিশকে পক্ষপাতমূলক আচরণ করতে দেখেছেন। ওরা সব ঘটনাতেই তৃণমূলের লোকেদের আড়াল করতে ব্যস্ত। উল্টো দিকে, বিরোধীদের গ্রেফতার করা থেকে কড়া ধারা দেওয়া, তখন পুলিশের কোনও সমস্যা হয় না!” তাঁর দাবি, একই কারণে মাখড়া-কাণ্ডে অভিযুক্ত বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়ে দিলেও যে সব মামলায় শাসক দলের কর্মীরা অভিযুক্ত, সে ক্ষেত্রে তাদের নাগাল পর্যন্ত পায় না জেলা পুলিশ।
তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছেন জেলা পুলিশের কর্তারা। এ দিন ফোন ধরেননি এসডিপিও (বোলপুর) অম্লানকুসুম ঘোষ। বারবার যোগাযোগ করা হলেও ফোন ধরেননি জেলার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারও। পরে সরাসরি জবাব না দিয়ে পুলিশ সুপার এসএমএস-এ জানান, অভিযুক্তেরা আত্মসমর্পণ করে থাকলে নিম্ন আদালত বিষয়টি তদন্তকারী অফিসারকে অবগত করবে। অন্য দিকে, ফোন ধরেননি রহিম খুনে প্রধান অভিযুক্ত তৃণমূলের ইলামবাজার ব্লক সভাপতি তথা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ জাফারুল ইসলামও।
এ দিনই আবার অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য তাঁদের উপরে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে নিহতের পরিবার। এই মর্মে তাঁরা ইলামবাজার থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন। এই পরিস্থিতিতে নিহতের পরিবার এবং বিজেপি নেতৃত্ব, পুলিশ শাসক দলের মদতপৃষ্ট অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা করছে। পুলিশ কেন ওই অভিযুক্তদের নিজেদের হেফাজতে চেয়ে আবেদন করল না? এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি সরকারী আইনজীবী ফিরোজকুমার পাল। তিনি শুধু বলেন, “রহিম শেখ খুনের ঘটনায় ১৩ অভিযুক্ত আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে। বিচারক তাদের জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়ে জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ২৭ মার্চ ধৃতদের ফের আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।”
ইলামবাজার থানার ঘুড়িষা পঞ্চায়েতের কানুর গ্রামের বাসিন্দা রহিম শেখই লোকসভা ভোটের পরে রাজ্যে বিজেপি-র প্রথম শহিদ। বিজেপি করার ‘অপরাধে’ রহিমকে গত ৭ জুন দিনের বেলায় বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ল্যাম্পপোস্টে বেঁধে পিটিয়ে খুন করা হয়। ওই এই খুনের ঘটনায় জাফারুল-সহ ৩৬ জন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে নিহতের পরিবার এফআইআর করেছিল। কিন্তু, ন’ মাস কেটে গেলেও ওই ঘটনায় পুলিশ মাত্র আট জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতার তো দূর, ওই ঘটনায় পুলিশ জাফারুলকে জিজ্ঞাসাবাদ অবধি করেনি বলে বিজেপি-র অভিযোগ।
নিহতের পরিবারের দাবি, অভিযুক্তেরা শাসক দলের লোক বলেই পুলিশ তাদের আড়াল করছে। শুধু তাই নয়, এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেরিয়ে নিহতের পরিবারকে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য চাপ দিলেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ দিন নিহতের স্ত্রী হাজেরা বিবি বলেন, “ওরা দিনে দুপুরে এসে এফআইআর প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। তা না করলে গ্রামছাড়া করার হুমকি দিচ্ছে। আমরা খুবই আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। পুলিশ কিছুই করছে না।” এই পরিস্থিতিতে তিনি এ দিনই শেখ সানাই, শেখ কানাই, শেখ সামসুদিন, শেখ গিয়াসুদ্দিন এবং শেখ বদিরুদ্দিন-সহ দশ জনের বিরুদ্ধে ইলামবাজার থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন।