Mrinmoyi Puja

মুহুর্মুহু গর্জে উঠল কামান, প্রাচীন মল্ল রাজধানী বিষ্ণুপুরে শুরু হয়ে গেল ১০২৭ বছরের প্রাচীন মৃন্ময়ীর পুজো

বাংলার প্রাচীন দুর্গাপুজাগুলির মধ্যে অন্যতম বিষ্ণুপুরের প্রাচীন মল্ল রাজ কূলদেবী মৃন্ময়ীর পুজো। এই পুজোর বয়স ১ হাজার ২৭ বছর। কথিত আছে, ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে রাজা জগৎমল্ল এই পুজোর সূচনা করেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:৪০
Share:

মল্লভূম কাঁপিয়ে মুহুর্মুহু গর্জে উঠল কামান। —নিজস্ব চিত্র।

সাত সকালেই মল্লভূম কাঁপিয়ে মুহুর্মুহু গর্জে উঠল কামান। ঢোল, কাঁসর আর সানাইয়ের সুরে ১০২৭ বছরের রীতি মেনে রবিবার সকালে স্নান পর্ব সেরে বড় ঠাকুরানী এলেন মন্দিরে। বড় ঠাকুরানীর মন্দিরে পদার্পণের সঙ্গে সঙ্গেই মল্লগড় বিষ্ণুপুরে শুরু হয়ে গেল দুর্গাপুজা।

Advertisement

বাংলার প্রাচীন দুর্গাপুজাগুলির মধ্যে অন্যতম বিষ্ণুপুরের প্রাচীন মল্ল রাজ কূলদেবী মৃন্ময়ীর পুজো। এই পুজোর বয়স ১ হাজার ২৭ বছর। কথিত আছে, ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে রাজা জগৎমল্ল এই পুজোর সূচনা করেন। সেই সময় থেকে রীতি রেওয়াজ একই রেখে এই পুজো চলে আসছে বিষ্ণুপুরে। প্রাচীন নিয়ম অনুযায়ী, দুর্গাপুজোর ১৫ দিন আগেই নবম্যাদি কল্পারম্ভে বিষ্ণুপুরে শুরু হয়ে যায় মৃন্ময়ীর পুজো। এই দিন স্থানীয় মাধবসায়েরে স্নান পর্ব সেরে মন্দিরে আনা হয় বড় ঠাকুরানীকে। এর পর একই নিয়মে মান চতুর্থীর দিন মন্দিরে আনা হয় মেজো ঠাকুরানীকে। দেবীপক্ষের সপ্তমীতে মন্দিরে আসেন ছোট ঠাকুরানী। এই তিন ঠাকুরানী আসলে দুর্গার তিনরূপ মহাকালী, মহালক্ষ্মী ও মহাসরস্বতী। স্থানীয় ফৌজদার পরিবারের হাতে আঁকা তিনটি পৃথক পটকেই তিন ঠাকুরানী রূপে পুজো করা হয়। রবিবার মন্দিরে বড় ঠাকুরানীকে নিয়ে আসার মধ্য দিয়ে সূচনা হয় দুর্গাপুজার। কথিত আছে, এক সময় শাক্ত মতে দেবীপুজো হলেও বীর হাম্বিরের সময় মল্ল রাজপরিবার বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণ করলে বৈষ্ণব মতে শুরু হয় পুজো। সে সময় থেকেই বলিদান প্রথা বন্ধ হয়ে শব্দকে ব্রহ্ম জ্ঞান করে শুরু হয় তোপধ্বনীর রেওয়াজ। তখন থেকেই পুজোর প্রতিটি নির্ঘণ্টে তোপধ্বনীর রেওয়াজ শুরু হয়। এই পুজোর রীতি রেওয়াজও কিছুটা ভিন্ন ধরনের। রাজ পরিবারের সদস্য জ্যোতিপ্রসাদ সিংহ ঠাকুর বলেন, ‘‘প্রাচীন বলিনারায়নী পুঁথি অনুসারে এই পুজা হয়ে আসছে। বাংলার একমাত্র এই পুজোতেই বলি নারায়ণী পুঁথি ব্যবহার হয়। এ ছাড়াও এই পুজোর রীতি ও আচারেও রয়েছে ভিন্নতা। রাজ্যপাট হারিয়ে যাওয়ার পর জেল্লা জমক কমলেও রীতি রেওয়াজ একই রাখার চেষ্টা করে চলেছি আমরা।’’

মৃন্ময়ী পুজোর ছত্রে ছত্রে জড়িয়ে রয়েছে সমৃদ্ধ এক ইতিহাস। জানা যায়, ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দের আগে পর্যন্ত মল্লভূমের রাজধানী ছিল জয়পুর ব্লকের প্রদ্যুম্নপুর। ছোট একটি এলাকায় সেসময় কায়েম ছিল সাম্রাজ্য। কথিত আছে, ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে মল্লরাজ জগৎমল্ল শিকারের উদ্দেশে বেরিয়ে ঘন জঙ্গলে পথ হারিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। সেসময় একটি বট গাছের তলায় আশ্রয় নিলে তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন অলৌকিক কাণ্ডকারখানা ঘটতে থাকে। সে সময় তিনি ওই বটগাছের পাশে মৃন্ময়ীর মন্দির স্থাপনের দৈব নির্দেশ পান। শোনা যায়, মন্দির প্রতিষ্ঠার পর রাজধানী প্রদ্যুম্নপুর থেকে বিষ্ণুপুরে সরিয়ে আনেন জগৎমল্ল। সে সময় থেকেই মহা ধুমধামে শুরু হয় মল্ল রাজ কূলদেবী মৃন্ময়ীর পুজা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যপাট হারায় মল্ল রাজপরিবার। কিন্তু আজও পুজো এলেই অতীত ঐতিহ্য আর আভিজাত্যের টানে রাজ দরবারে ছুটে আসেন রাজ পরিবারের সদস্যরা। ভিড় জমান মল্লভূমের বিভিন্ন প্রান্তের প্রজারাও। রাজ পরিবারের সদস্যা তনিমা সিংহ ঠাকুর বলেন, ‘‘এই পুজো আভিজাত্য আর ঐতিহ্যের পুজা। এই পুজা আমাদের কাছে অত্যন্ত গর্বের ও আবেগের। তাই সারা বছর আমরা পেশাগত কারণে যে যেখানেই থাকি না কেন, পুজার সময় ছুটে আসি মাতৃমন্দিরে।’’

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement