চাযের জলের অভাবে বীজধান গরুতে খাওয়াচ্ছেন কৃষকেরা। নিজস্ব চিত্র।
বোরো চাষের জন্য ডিভিসি-র সেচখালে জল পাবেন, এই আশা করে বীজতলা তৈরি করে রেখেছিলেন কৃষকেরা। কিন্তু খালে জল আসেনি। শুকিয়ে যাচ্ছে বীজতলা। ধান রোয়ার সময়ও অতিক্রান্ত। তাই খরচ করে বীজতলা তৈরি করেও বীজধান গরু-মোষকে খাইয়ে দিচ্ছেন পূর্ব-বর্ধমানের মঙ্গলকোট ব্লকের বেশ কিছু এলাকার কৃষকেরা।
মঙ্গলকোট ব্লকের বক্সীনগর, ঝিলু, সাকোনা, নপাড়া, বনপাড়া প্রভৃতি গ্রামের মাঠে গত কয়েকদিন এই ছবি ধরা পড়েছে। বিঘার পর বিঘা জমিতে বোরোচাষের জন্য বীজধান গৃহপালিত পশুদের খাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় চাষি সোনা রায় জানালেন, এক বিঘা জমিতে বীজতলা করতে প্রায় ১২ হাজার টাকা খরচ করেছিলেন। কিন্তু সেচের খালে জল আসেনি। তিনি বলেন, ‘‘বীজতলা শুকিয়ে যাচ্ছে। তাই গরুকে বীজধান খাইয়ে দিচ্ছি।" একই কথা বলেন চাষি সুবল দাস। তিনি বলেন, ‘‘বোরো চাষের মরসুমে জল না পেয়ে চরম ক্ষতি হল কৃষকদের।’’
সরকারি সূত্রের খবর, এ বছর পূর্ব-বর্ধমান জেলায় বোরোচাষ এবং রবিচাষে ডিভিসি-র জল বণ্টন নিয়ে বর্ধমান সার্কিট হাউসে প্রশাসনিক বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে আগাম জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, বোরোচাষের জন্য ডিভিসি থেকে কত পরিমাণ জল দেওয়া হবে। জল বণ্টনের এলাকাও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়।
যদিও মঙ্গলকোটের এই সমস্ত এলাকায় ডিভিসি-র জল দেওয়ার কথা সরকারি ভাবে ঘোষণা করা হয়নি। তা সত্ত্বেও কেন কৃষকরা ঝুঁকি নিয়ে বীজতলা তৈরি করলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মঙ্গলকোট পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ বুদ্ধদেব ভারুই বুধবার বলেন, ‘‘আসলে বিধানসভা ভোট আসছে। তাই কৃষকদের অনেকে সম্ভবত ভেবেছিলেন, এ বছর সকলে বোরোচাষে ক্যানেলের জল পাবেন। তাই নিজেরা ঝুঁকি নিয়ে বীজতলা তৈরি করে রেখেছিলেন।’’
বুদ্ধদেব আরও বলেন, ‘‘মঙ্গলকোটের কয়েকটি গ্রাম মিলে ১৭৫-১৮০ জন কৃষক সেচের সঙ্কটের কারণে সমস্যায় পড়েছেন। তাঁরা আমাদের কাছে এসেছিলেন। সাব-মার্সিবল পাম্পের আওতায় থাকা যে সব জমি রোয়ানো হয়ে গিয়েছে, সেগুলির কিছু অংশেও সেচের সঙ্কট হচ্ছে জলস্তর নেমে যাওয়ায়। আমরা সেই সমস্ত জমি যাতে বাঁচানো যায়, তার জন্য প্রশাসনিক মহলে আলোচনা করছি।’’
জেলা কৃষি দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, মঙ্গলকোট ব্লকে গত বছর ৯,৩০০ হেক্টর জমিতে বোরোচাষ হয়েছিল। এ বছর বোরোচাষ হয়েছে ৯,৩০৫ হেক্টর। চাষ বাড়লেও সেচখালে জল অপ্রতুল। পাশাপাশি, ভূগর্ভস্থ জলস্তর নামছে। তাই শেষ পর্যন্ত সাবমার্সিবল পাম্পের আওতাধীন সব জমিও সেচ পাবে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কায় কৃষকদের একাংশ।