প্রতীকী ছবি।
শেষ হয়েও শেষ হল না দুর্গাপুজো। শুক্রবারই আবার পুজো কার্নিভালে মাতবে প্রায় সব ক’টি জেলা। সর্বত্রই তার শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি চলছে। দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কো যে বিশেষ স্বীকৃতি দিয়েছে, তাকে সম্মান জানিয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলায় জেলায় পুজো কার্নিভাল করার কথা ঘোষণা করেছিলেন। সেই মতোই সব জেলায় কার্নিভালের আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসনগুলি। দশমীর রাতে মালবাজারে প্রতিমা বিসর্জনে বিপর্যয়ের জেরে শুধু মাত্র জলপাইগুড়িতে কার্নিভাল বাতিল করা হয়েছে।
কলকাতার সেরা ১০০টি পুজো কমিটিকে নিয়ে শনিবার রেড রোডে আয়োজিত হতে চলেছে দুর্গাপুজোর কার্নিভাল। রেড রোডের পাশাপাশি হাওড়ার দিকে গঙ্গার ধারেও এ বার প্রথম আয়োজিত হচ্ছে বিসর্জনের কার্নিভাল। শুক্রবার বিকেল ৫টা থেকে তা শুরু হয়ে যাবে। হাওড়া রেল মিউজিয়াম থেকে শুরু হবে শোভাযাত্রা। গ্র্যান্ড ফোরশোর রোড ধরে তা এগিয়ে যাবে রামকৃষ্ণপুর ঘাটের দিকে। যে পথ ধরে শোভাযাত্রা যাবে, সেই রাস্তার ধারে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়েছে। একটি ভিআইপি ডায়াসও করা হয়েছে। যেখানে আমন্ত্রিত অতিথিরা বসবেন। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের জন্যেও দু’টি ডায়াস থাকছে। থাকছে মেডিকেল বুথ এবং পুলিশ সহায়তা কেন্দ্র।
উত্তর ২৪ পরগনায় বিকেল ৪টে থেকে শুরু হবে কার্নিভাল। জেলার মোট ২৪টি পুজো কমিটি শোভাযাত্রায় অংশ নেবে। বারাসাত শতদল মাঠে প্রথমে সমস্ত ক্লাবগুলি জমায়েত হবে। তার পর সেখান থেকে শুরু হবে শোভাযাত্রা। তা দক্ষিণপাড়া মোড় হয়ে বারাসাত স্টেডিয়ামে এসে শেষ হবে। পূর্ব বর্ধমানে কার্নিভালের সময় বিকেল ৫টা। শোভাযাত্রা শুরু হবে বর্ধমান শহরের জিটি রোডের বড়নীলপুর মোড় থেকে। শেষ হবে পাঞ্জাবিপাড়া মোড়ে। কার্জনগেট চত্বরে বিশাল মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস বলেন, ‘‘কার্নিভাল দেখতে আসা মানুষের জন্য রাস্তায় জলের ব্যবস্থা থাকবে। থাকছে অ্যাম্বুল্যান্স ও দমকল।’’ বর্ধমান শহর ও বড়শুল মিলিয়ে মোট ৩১টি পুজো কমিটি কার্নিভালে অংশ নেবে। বর্ধমানে দুর্গাপুজো সমন্বয় কমিটির সহ-সম্পাদক সুকান্ত দাস বলেন, ‘‘কার্নিভালে অংশ নেওয়া পুজো কমিটিগুলি অনুষ্ঠানের খরচ জোগাবে। ইতিমধ্যেই লাইট ও মাইক লাগানোর কাজ শেষ। মঞ্চ তৈরির কাজও শেষ হয়েছে।’’
দুপুর আড়াইটে থেকে কার্নিভাল শুরু হচ্ছে পশ্চিম বর্ধমান জেলায়। কার্নিভালের উদ্বোধন করবেন আসানসোলের সাংসদ শত্রুঘ্ন সিন্হা। দুর্গাপুর ইস্পাত নগরীর চিত্রালয় মেলা ময়দান থেকে পুজো কমিটিগুলির সুসজ্জিত প্রতিমা-সহ ট্যাবলো প্রিয়দর্শনী ইন্দিরা সরণি ধরে এগিয়ে যাবে। মূল অনুষ্ঠান দুর্গাপুর মহিলা মহাবিদ্যালয়ের সামনে। দেড় কিলোমিটার পথ পরিক্রমা করে শোভাযাত্রা শেষ হবে গান্ধী মোড় মেলা ময়দানে। থাকছে পুরস্কারও। প্রথম হলে ১ লক্ষ টাকা। দ্বিতীয় হলে ৭৫ হাজার টাকা। আর তৃতীয় হলে ৫০ হাজার টাকা।
অন্য দিকে, মেদিনীপুর ও খড়্গপুরে কার্নিভালের আয়োজন করা হয়েছে। মোট ১৭টি পুজো কমিটি কার্নিভালে অংশ নেবে। বটতলা চক থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে তা গান্ধী ঘাটের দিকে এগিয়ে যাবে। মেদিনীপুর পুরসভার পুরপ্রধান সৌমেন খান বলেন, ‘‘কার্নিভাল নিয়ে শহরের মানুষের মধ্যে বিপুল উচ্ছ্বাস রয়েছে। মূল মঞ্চ করা হয়েছে পুলিশ ক্লাবের সামনে। উল্টো দিকেই সাংস্কৃতিক মঞ্চ। বিকেল ৪টে থেকে জেলার লোকশিল্পীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করবেন। বিকেল ৫টায় মূল অনুষ্ঠান।’’ নদিয়ায় ১২টি পুজো কমিটিকে নিয়ে কার্নিভালের আয়োজন করা হয়েছে। রানাঘাট শহরের কেন্দ্রীয় অংশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কার্নিভাল। রানাঘাট কলেজ মোড় থেকে বেরিয়ে দক্ষিণপাড়া হয়ে হ্যাপি ক্লাবের মাঠ পর্যন্ত যাবে শোভাযাত্রা। দক্ষিণপাড়ার কাছে তৈরি হচ্ছে কার্নিভালের মূল মঞ্চ। বীরভূমে সিউড়ি সার্কিট হাউস মোড়ে কার্নিভালের আয়োজন করা হয়েছে। সার্কিট হাউস মোড় থেকে সিউড়ি বাসট্যান্ড পর্যন্ত যাবে শোভাযাত্রা। মোট ২৩টি পুজো অংশগ্রহণ করবে কার্নিভালে।
কোচবিহারে কার্নিভাল শুরু হবে বিকেল সাড়ে ৪টে থেকে। বিশ্বসিংহ রোডে মিনা কুমারী চৌপথি থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে তা যাবে হরিশ পাল মোড় পর্যন্ত। শিলিগুড়িতেও ২৬টি ক্লাব কার্নিভালে অংশ নেবে। মেয়র গৌতম দেব বলেন, ‘‘সুষ্ঠু ভাবে কার্নিভাল করতে সব রকমের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সমতলের পাশাপাশি পাহাড়ের কয়েকটি পুজোও অংশ নেবে অনুষ্ঠানে।’’