ইমদাদুল্লাহ রশিদি
গত বছরের মার্চে উন্মত্ত জনতার আক্রোশ তাঁর ১৬ বছরের ছেলেকে কেড়ে নিয়েছিল। তার পরেও কাউকে দোষারোপ না করে ছেলের মরদেহের সামনে জানাযার নমাজে সমবেত জনগণের সামনে শান্তির বার্তা দিয়েছিলেন আসানসোলের নুরানি মসজিদের ইমাম ইমদাদুল্লাহ রশিদি। বলেছিলেন, ‘‘কোনও প্রতিহিংসা নয়। প্রতিশোধ নিতে যদি কারও মৃত্যু ঘটাও, তা হলে আমি আসানসোল ছেড়ে চলে যাব। আমি তোমাদের সঙ্গে তিরিশ বছর আছি। আমাকে যদি তোমরা ভালবাস, তা হলে আর কাউকে যেন এ ভাবে মরতে না হয়।’’
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধী হলেও তার প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে যে হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড চলছে, রবিবার একই ভাবে তার তীব্র নিন্দা করলেন ইমদাদুল্লাহ সাহেব।
রবিবার রশিদি বলেন, ‘‘ইসলাম কখনও হিংসার শিক্ষা দেয় না। আমি অবশ্যই নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করছি। এই আইনের পাল্টা মোকাবিলা কী ভাবে করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করছি। অগ্নিকাণ্ড, ভাঙচুর চালিয়ে এর মীমাংসা করা যাবে না। এটা কোরানের পরিপন্থী।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করতে গিয়ে রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায় সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলা হচ্ছে। ট্রেন, বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা একেবারে অনুচিত।’’
আরও পড়ুন: অশান্তি ঠেকাতে আংশিক বন্ধ ইন্টারনেট, উস্কানির অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী
২০১৮ সালের মার্চে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়েছিল আসানসোলের রেলপাড় এলাকা। এর পর ২৭ মার্চ নিখোঁজ হয়ে যায় ইমদাদুল্লাহ সাহেবের পুত্র, দশম শ্রেণির পড়ুয়া সিবতুল্লাহ রশিদি। পরের দিন গভীর রাতে তার দেহ উদ্ধার হয়। সেই ঘটনাকে ঘিরে আসানসোল উত্তপ্ত হলেও রশিদি সাহেব ছেলের মরদেহের সামনে দাঁড়িয়ে সমবেত জনতাকে জানিয়েছিলেন, এর প্রত্যাঘাত হলে তিনি আসানসোল ছেড়ে চলে যাবেন। অগ্নিগর্ভ আবহে এই ভাবেই শান্তির দূত হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
রবিবারও ইমাম বলেন, ‘‘ছেলেকে অকালে হারিয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে আমি সকলকে শান্ত হতে বলেছিলাম। একই ভাবে নাগরিকত্ব আইন পাশ হওয়ার পরও রাজ্যের মুসলিম সমাজকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। গত কয়েক দিন ধরে যে ভাবে এক শ্রেণির মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন তা ঘোরতর অন্যায়।’’ ইমাম মনে করিয়ে দেন, ‘‘কাউকে কষ্ট দিয়ে কোনও আন্দোলন সফল হতে পারে না। দু’দিন ধরে সরকারি
সম্পত্তি নষ্ট করে যে প্রতিবাদ চলছে, সেটা খুব দুঃখের।’’