আক্রায় আক্রান্ত ট্রেন, ভেন্ডিং মেশিন ভাঙচুর

এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ আক্রা স্টেশনে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার আপ বজবজ লোকাল আটকে দেওয়া হয়। ট্রেন থেকে চালক ও গার্ডকে নামিয়ে দেওয়া হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৫:০৬
Share:

উত্তাল: তাণ্ডবের পরে টিকিটের ভেন্ডিং মেশিনের আগুন নেভানোর কাজ করছেন পুলিশকর্মীরা। রবিবার, আক্রা স্টেশনে। ছবি: অরুণ লোধ

নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় আগুন জ্বলল দক্ষিণ ২৪ পরগনার আক্রা স্টেশন চত্বরেও। রবিবার সকালে স্টেশন চত্বরে টিকিট কাউন্টার-সহ স্টেশন মাস্টারের অফিসে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা।

Advertisement

এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ আক্রা স্টেশনে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার আপ বজবজ লোকাল আটকে দেওয়া হয়। ট্রেন থেকে চালক ও গার্ডকে নামিয়ে দেওয়া হয়। প্রায় কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী স্টেশন চত্বর জুড়ে তাণ্ডব শুরু করেন বলে অভিযোগ। রেললাইনের উপরে টায়ার জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের ছোড়া ইটের আঘাতে গুরুতর জখম হন ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার ডিএসপি আশিস রায়-সহ বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিক্ষোভকারীরা ট্রেনের জানলার সমস্ত কাচ ভেঙে দেন। একই সময়ে স্টেশন মাস্টারের ঘর ও বুকিং কাউন্টারেও ভাঙচুর চলে। ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার ডিএসপি আশিসবাবু বাহিনী নিয়ে স্টেশন পৌঁছতেই তাঁদের দিকে উড়ে আসতে থাকে ইট। তার জেরে পিছু হটতে থাকে পুলিশও। এক সময়ে স্টেশন ছেড়ে পুলিশকর্মীরা স্থানীয় একটি মসজিদে গিয়ে আশ্রয় নেন।

Advertisement

যদিও এর পরে ঘটনাস্থলে ফিরে গিয়ে পুলিশ পাল্টা লাঠিচার্জ শুরু করে। টিয়ারগ্যাসও ছোড়ে পুলিশ। তাতে একটু হলেও পিছু হটেন বিক্ষোভকারীরা। কিন্তু ফের বিক্ষোভকারীরা বড় জমায়েত করে পুলিশের উপরে চড়াও হওয়ার চেষ্টা করে। ফের পুলিশকে লক্ষ্য করে শুরু হয় ইটবৃষ্টি। পুলিশও বাধ্য হয় পিছু হটতে। বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত দফায় দফায় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

পুলিশ ও স্থানীয়েরা জানান, এ দিন সকালে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে আক্রা স্টেশনে জড়ো হন বিক্ষোভকারীরা। একটি বড় লাল কাপড় লাইনের উপরের খুঁটিতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পৌনে ১২টা নাগাদ আপ বজবজ লোকাল স্টেশনে আসার পরেই বিক্ষোভকারীরা সেটির দিকে ছুটে যান। ট্রেন থেকে জোর করে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হয়। রেল লাইনে একের পর এক গাড়ির টায়ার জ্বালিয়ে দেওয়া হতে থাকে। কালো ধোঁয়ায় এলাকা ঢেকে যায়। দমকলের একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর পরে সেটির পথ আটকে দেন বিক্ষোভকারীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তাণ্ডবের সামনে পড়ে রেলের কর্মীরা অফিস ছেড়ে পালাতে থাকেন। বুকিং বিভাগের এক কর্মীকে শৌচাগারে গিয়ে লুকিয়ে পড়তে দেখা যায়। দরজা ভেঙে লুটপাট চালানো হয় বুকিং কাউন্টারেও। টিকিটের ভেন্ডিং মেশিন উপড়ে ফেলে সেটি ভেঙেচুরে রেললাইনে ফেলে দেওয়া হয়। যন্ত্রগুলিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। শিয়ালদহগামী বজবজ লোকালের চালককে ট্রেন থেকে নামিয়ে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। ট্রেনের গার্ড প্রভাস চৌধুরী বলেন, ‘‘প্রথমে কেবিন থেকে নেমে যাওয়ার জন্য শাসানি দেওয়া হয়। পরে ধাক্কা মেরে কেবিন থেকে নামিয়ে দেওয়া। কেবিন, লকবুক-সহ বাক্স ভেঙে দেওয়া হয়।’’

আক্রা স্টেশনের কমার্শিয়াল বিভাগের এক কর্মীর অভিযোগ, ‘‘আচমকা প্রায় হাজার খানেক লোক বুকিং কাউন্টারে ঝাঁপিয়ে পড়ে ভাঙচুর চালাতে শুরু করেন। কম্পিউটার-সহ সব কিছু চুরমার করে দেওয়া হয়। স্টেশন চত্বরের কোনও জিনিস আর আস্ত নেই।’’ দমকলকর্মীরা পরে স্টেশন চত্বরের আগুন নিয়ন্ত্রণ করেন। বিকেল পাঁচটা নাগাদ কমব্যাট-সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে লাঠিচার্জ করে বিক্ষোভকারীদের পিছু হঠিয়ে দেয়।

বিকেলে ঘটনাস্থলে এসে মেটিয়াবুরুজের তৃণমূল বিধায়ক আবদুল খালেক মোল্লা বলেন, ‘‘আক্রা মহেশতলা বিধানসভার অধীনে রয়েছে। সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের নির্দেশে এসেছি। স্থানীয়েরা নন, বহিরাগতেরাই হামলা চালিয়েছে।’’ তবে পুলিশের একটি সূত্র বলছে, আক্রা এলাকার পরিচিত মুখেরাই ওই তাণ্ডব চালান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement