প্রতিবাদীকে চপারের কোপ এ বার দক্ষিণদাঁড়িতে

বামনগাছির পরে লেক টাউনের দক্ষিণদাঁড়ি। মদ-গাঁজা-হেরোইনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোয় যুবক ফের আক্রান্ত। চপার আর ভোজালি দিয়ে তাঁকে বেপরোয়া ভাবে কুপিয়েছে এক দল দুষ্কৃতী। শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটে দক্ষিণদাঁড়িতে একটি ক্লাবের সামনে। পুলিশ জানায়, মহম্মদ রিয়াজুদ্দিন শেখ নামে ওই যুবককে গুরুতর জখম অবস্থায় আর জি কর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৪ ০৩:২৮
Share:

দক্ষিণদাঁড়িতে আক্রান্ত যুবক রিয়াজউদ্দিন। ছবি: শৌভিক দে।

বামনগাছির পরে লেক টাউনের দক্ষিণদাঁড়ি। মদ-গাঁজা-হেরোইনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোয় যুবক ফের আক্রান্ত। চপার আর ভোজালি দিয়ে তাঁকে বেপরোয়া ভাবে কুপিয়েছে এক দল দুষ্কৃতী।

Advertisement

শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটে দক্ষিণদাঁড়িতে একটি ক্লাবের সামনে। পুলিশ জানায়, মহম্মদ রিয়াজুদ্দিন শেখ নামে ওই যুবককে গুরুতর জখম অবস্থায় আর জি কর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তিনি দক্ষিণদাঁড়ি এলাকার ডিওয়াইএফের ইউনিট সেক্রেটারি এবং লোকাল কমিটির সদস্য বলে জানান সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং স্থানীয় নেতা পলাশ দাস। মহম্মদ ইসরাফেল নামে এলাকার এক প্রোমোটার দলবল নিয়ে এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ। ঘটনার পর থেকে ইসরাফেল এবং তার শাগরেদরা পলাতক। বাসিন্দারা জানান, রিয়াজ মদ-মাদকের ঠেকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। তাই ইসরাফেল এবং তার দলবল এ দিন ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁকে কোপায়।

দক্ষিণদাঁড়ি এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই মদ-গাঁজা-হেরোইনের রমরমা ব্যবসা চলছে। ২৭ নম্বর রেলগেটের কাছে হেরোইনের আসর বসে সন্ধ্যা থেকেই। চলে জুয়াও। পুলিশকে বারবার অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয়নি বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ।

Advertisement

এলাকার লোকজন জানান, রিয়াজের বাড়ি দক্ষিণদাঁড়ির উর্দু স্কুলের কাছে। তিনি একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী। মদ-মাদকের ঠেকের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন ওই যুবক। প্রতিবাদে নেমেই ইসরাফেলের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন তিনি। অভিযোগ, এলাকার বাসিন্দা ইসরাফেল আগে মদ-গাঁজার ঠেক চালাত। বছরখানেক আগে সে প্রোমোটিং ও সিন্ডিকেটের ব্যবসায় নামে। ইসরাফেলের সিন্ডিকেটের অফিসেই অবাধে হেরোইন ও গাঁজার ঠেক চলত বলে অভিযোগ। কয়েক দিন আগেও রিয়াজ তার প্রতিবাদ করেন। তার পরে ইসরাফেল তাঁকে বেশ কয়েক বার হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। পাঁচ লক্ষ টাকা তোলাও চেয়েছিল। রিয়াজ অবশ্য দমে যাননি।

শুক্রবার সন্ধ্যায় দক্ষিণদাঁড়ির রেলগেটের কাছে একটি ক্লাবের সামনে বসে ছিলেন রিয়াজ। অতর্কিতে হামলা চালায় ইসরাফেল এবং তার দলবল। রিয়াজকে তারা চপার-ভোজালি দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে। ক্লাবেও ভাঙচুর চালায়। এলাকার লোকজন তাড়া করলে দুষ্কৃতীরা পালায়। পালানোর আগে তারা কয়েকটি চপার ছুড়ে দেয় পিছনে তাড়া করা জনতার দিকে। তাতে এক জন আহত হন। রিয়াজকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

হামলার পরে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি সামলাতে বিশাল পুলিশবাহিনী আসে। আসেন এলাকার বিধায়ক সুজিত বসু। তিনি বলেন, “এটা রাজনৈতিক সংঘর্ষ নয়। ইসরাফেল ও গুড্ডুর দলবলের মধ্যে মারপিটের ঘটনা। দু’পক্ষেরই দু’জন আহত হয়েছে।” বিধাননগর কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, দু’টি গোষ্ঠীর সংঘর্ষ বলেই প্রাথমিক তদন্তে অনুমান। কেন এমন সংঘর্ষ হল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সিপিএম নেতা পলাশবাবু বলেন, “রিয়াজুদ্দিন এলাকার প্রতিবাদী যুবক। সব ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপের প্রতিবাদ করত। তাই ওকে দুষ্কৃতীদের খপ্পরে পড়তে হল।” রাতে ১৭টি সেলাই দিয়ে রিয়াজকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাঁর গলায়, হাতে, ঊরুতে চপারের কোপ পড়েছে। তিনি বলেন, “মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলাম বলেই ওরা মারল। ইফতারের পরে বসে ছিলাম। ওরা এসে চপার দিয়ে কোপাতে শুরু করে দিল। তবে প্রতিবাদ চলবেই।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement