পথে-প্রতিবাদ: গ্রান্ট হলের সামনে থেকে মিছিল চলেছে মোহনের মোড়ের দিকে। শুক্রবার বহরমপুরে। নিজস্ব চিত্র
স্বামী চেয়েছিলেন পুত্রসন্তান। তিনি জন্ম দেন ফুটফুটে এক কন্যাসন্তান। আর সেই ‘অপরাধে’ বছর চারেক আগে তাঁকে তালাক দেন স্বামী। তখন থেকে শ্বশুরবাড়ির ভিটেমাটি ছেড়ে বেলডাঙায় বাপের বাড়িতে থাকেন সুবেরা খাতুন। শুক্রবার এনআরসি এবং নয়া নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে পথে নেমেছিল রোকেয়া নারী উন্নয়ন সমিতি। অন্যদের সঙ্গে সুবেরাও সেই প্রতিবাদ মিছিলে হেঁটেছেন। সুবেরার প্রশ্ন, ‘‘বিনা কারণে এক বার শ্বশুরবাড়ির ভিটে ছাড়তে হয়েছে। এ বার কি তবে দেশও ছাড়তে হবে?’’ তার পরেই চোয়াল শক্ত করে তিনি বলেন, ‘‘স্বামীর বাড়ি ফেরার জন্য আমরা লাগাতার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। এ বারে নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধেও পথে নামলাম।’’
সুবেরার মতো রানিনগরের সারবানু খাতুনও এ দিন দুপুরে রোকেয়া নারী উন্নয়ন সমিতির প্রতিবাদ মিছিলে পা মিলিয়েছিলেন। সারবানু বলছেন, ‘‘স্বামীর কাছে থেকে তালাক পেয়ে বছর দশেক আগে শ্বশুরবাড়ি ছাড়তে হয়েছে। গত দশ বছর ধরে নিজের অধিকার ফিরে পাওয়ার লড়াই জারি রয়েছে। এ বার নয়া নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদেও শামিল হলাম।’’
প্রতিবাদ মিছিলে পা মিলিয়ে ডোমকলের শ্রীপতিপুরের মিনুয়ারা বেগম বলছেন, ‘‘আর কত বার ভিটেমাটি ছাড়া হতে হবে, বলুন তো? বারো বছর আগে তালাক দিয়ে স্বামী তাঁর বাড়ি ছাড়া করল। এ বারে দেশের সরকারও দেশ থেকে তাড়ানোর চক্রান্ত শুরু করেছে। তাই আমাদের এই আন্দোলন।’’
এ দিন দুপুরে বহরমপুরের গ্রান্ট হলে ‘রোকেয়া নারী উন্নয়ন সমিতির’ উদ্যোগে নাগরিকপঞ্জি ও নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়েছিল। প্রতিবাদ সভা শেষে প্রতিবাদ মিছিলও বেরোয়। সেই প্রতিবাদ সভা ও মিছিলে সুবেরা খাতুনের মতো হরিহরপাড়া, ডোমকল, জলঙ্গি, বেলডাঙা, সালার, ভরতপুর, রেজিনগর ও লালবাগের শতাধিক তালাকপ্রাপ্ত ও স্বামীহারা মহিলা যোগ দেন। বক্তব্য রাখেন রোকেয়া নারী উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক খাদিজা বানু-সহ অনেকে।
খাদিজা বলছেন, ‘‘এত দিন ধরে ওঁরা স্বামীর ঘরে ফেরার লড়াই করে চলেছেন। কিন্তু এখন নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে দেশছাড়া করার চক্রান্ত চালাচ্ছে সরকার। তাই এর বিরুদ্ধে লড়াই করা জরুরি। সেই কথা মাথায় রেখেই আমাদের এই আন্দোলন।’’