ক্ষোভের আগুন: বৃহস্পতিবার উমরপুরে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের (সিএবি) বিরোধিতায় অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি দেশের উত্তর-পূর্বে। সেই আন্দোলনের আঁচ পড়তে শুরু করেছে এ রাজ্যেও। জেলায় জেলায় সিএবি এবং ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) বিরোধিতা করে কোথাও রেল বা সড়ক অবরোধ, কোথাও প্রতিবাদ মিছিল, কোথাও সভা-জমায়েত হয়েছে।
সীমান্তবর্তী মুর্শিদাবাদের মতো জেলায় নাগরিকত্ব বিল বাতিলের দাবিতে পথে নেমেছেন সম্প্রদায় নির্বিশেষে অসংখ্য মানুষ। বৃহস্পতিবার দুপুরে এনআরসি এবং সিএবি-র প্রতিবাদে কয়েক হাজার মানুষ জঙ্গিপুর হাই মাদ্রাসা থেকে মিছিল করেন প্রায় তিন কিলোমিটার পথ। তাঁদের হাতে কোনও রাজনৈতিক দলের পতাকা ছিল না। তবে অনেকের হাতেই ছিল জাতীয় পতাকা। মিছিলে আওয়াজ ওঠে— ‘ছিনকে লেঙ্গে আজাদি’। উমরপুরে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের কুশপুতুল পোড়ানো হয়। বুধবার সন্ধ্যায় ‘এনআরসি বিরোধী সংহতি’-র পক্ষ থেকে ডোমকলে করিমপুর-বহরমপুর রাজ্য সড়ক চল্লিশ মিনিট অবরোধ করা হয়।
এ দিন বেলডাঙার একটি মাদ্রাসার ডাকে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে বড়ুয়া মোড়ের প্রতিবাদ সভায় ছিলেন হাজার পাঁচেক মানুষ। তাঁদের একাংশ মিনিট কুড়ি জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। জ্বালানো হয় টায়ার। সভার উদ্যোক্তাদের অনুরোধেই অবরোধ উঠে যায়। উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্র দেশকে দু’টুকরো করতে চাইছে। দেশের সম্প্রীতি এতে বিঘ্নিত হয়েছে। তার প্রতিবাদে এই সভা।’’ এ দিন ডোমকলের বিভিন্ন মোড়ে এনআরসি ও সিএবি বিরোধী পথসভা করে নানা রাজনৈতিক সংগঠন।
বীরভূমেও মুরারই নতুন বাজার থেকে হাজারেরও বেশি মানুষকে নিয়ে মিছিল শুরু করে দু’টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। পরে মুরারই রেলগেটের সামনে লাইনের উপরে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ শুরু হয়। বিক্ষোভে শামিল এমআইএম-এর স্থানীয় নেতা তাসির শেখ বলেন, ‘‘কেন্দ্রর জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে এই আন্দোলন। বিল প্রত্যাহার না-করলে তা চলবে।’’ পরে পুলিশ বুঝিয়ে অবরোধ তুলে দেয়। আজ, শুক্রবার বীরভূমের সদাইপুরে বড় প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়েছে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ। নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে সরব হয়েছেন শান্তিনিকেতনে থাকা অসমের মানুষজনও। তাঁরা এ দিন উপাসনা গৃহের সামনে মিছিল করেন। বেদান্ত বোরো, অনুরাগ বড়ুয়ারা বলেন, ‘‘পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। উদ্বেগে কাটছে।’’
সিপিএমের পক্ষ থেকে উলুবেড়িয়ায় ওটি রোড অবরোধ করা হয়। বিল বাতিলের দাবিতে গরুহাটা মোড় থেকে স্টেশন রোডের মোড় পর্যন্ত মিছিলও হয়। একই দাবিতে এ দিন নিমদিঘিতে প্রায় আধঘন্টা মুম্বই রোড অবরোধ করে বামফ্রন্টের শরিক দলগুলি। এলাকার সিপিএম নেতা সাবিরুদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘‘শুধু ক্যাব প্রত্যাহার নয়, এনআরসি চালু করা যাবে না।’’ এ দিন বিকেলে মেদিনীপুর শহরে প্রতিবাদ মিছিল করে তৃণমূল।