কর্মীদের বিক্ষোভ। — নিজস্ব চিত্র
দূরপাল্লার ট্রেন-সফরে যাত্রীদের দুর্ভোগ চলছেই।
খাবার পরিবেশনকারীদের কর্মবিরতির জেরে রবিবার সকালে প্রায় ঘণ্টাচারেক খাবার পেলেন না চারটি দুরন্ত এক্সপ্রেসের যাত্রীরা। সন্ধ্যায় শিয়ালদহ-নয়াদিল্লি দুরন্ত এক্সপ্রেসে খাবার পরিবেশন করা নিয়ে গোলমাল এতটাই বাড়ে যে শিয়ালদহ স্টেশনে আরপিএফ ও জিআরপি কর্মীরা গিয়ে অবস্থা সামাল দেন। ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কেটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম কর্পোরেশন (আইআরসিটিসি)-এর দুই ম্যানেজার জখম হন। গার্ডের কামরার একটি কাচ ইটের ঘায়ে ভেঙেছে বলেও রেল সূত্রে জানানো হয়েছে। গোলমাল পাকানোর অভিযোগে ১১ জন গ্রেফতার হয়েছে।
রেল সূত্রের খবর, এই গোলমালের জেরে এ দিন সকালে হাওড়া ও শিয়ালদহ থেকে মোট চারটি এক্সপ্রেস ট্রেন আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে। শনিবারও ওড়িশায় রেল অবরোধের জেরে প্রায় ৮ ঘণ্টা নির্জলা ছিলেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের চারটি দূরপাল্লার মেল ও এক্সপ্রেসের যাত্রীরা। খাবার পরিবেশনে এ দিনের দেরির জন্য অবশ্য আইআরসিটিসি-র তরফে দুঃখপ্রকাশ করা হয়েছে।
ঠিক কী হয়েছিল এ দিন? ট্রেনে খাবার সরবাহ করার দায়িত্বে রয়েছে রেলের সহযোগী সংস্থা আইআরসিটিসি। দফতর সূত্রের খবর, সম্প্রতি ট্রেনের খাবার প্রস্তুতকারী ও পরিবেশনকারী সংস্থার নিয়োগের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়মনীতি পরিবর্তন করেছে রেল বোর্ড। এমনিতে দিনপিছু চুক্তিতে ঠিকা লোক নিয়োগ করে ট্রেনে খাবার দেওয়ার কাজ করা হয়। কিন্তু নতুন নিয়মে ট্রেনে খাবার সরবরাহের জন্য এক বছরের চুক্তিতে ঠিকাদার নেওয়া হচ্ছে। এখন যাঁরা ট্রেনে খাবার পরিবেশন করেন তাঁদের অনেকের আশঙ্কা, নতুন ঠিকাদার খাবার পরিবেশনের দায়িত্ব নিলে পুরনোদের অনেককেই হয়ত সরে যেতে হবে। এই নিয়েই এ দিন গোলমাল বাধে।
আইআরসিটিসি কর্তাদের বক্তব্য, পুরনো কর্মীরা এ দিন কর্মবিরতি শুরু করে দেন। ট্রেন চালু হতেই চেন টেনে থামিয়ে দেন। শুরু করেন বিক্ষোভ। খাবার পরিবেশনও লাটে ওঠে। রেলের তরফে অন্য কর্মীদের কাজে লাগাতে গেলেও বাধা দেন।
রেল সূত্রের খবর, এ দিন সকালে প্রথম গোলমাল শুরু হয় হাওড়া-যশোবন্তপুর দুরন্ত এক্সপ্রেস এবং হাওড়া-দিঘা দুরন্ত এক্সপ্রেসে। হাওড়ায় ট্রেন ছাড়ার একটু আগেই গোলমাল শুরু করেন খাবার পরিবেশনকারীরা। বেঙ্গালুরু স্টেশনেও বেঙ্গালুরু-হাওড়া দুরন্ত এক্সপ্রেসে গোলমাল হয়েছে। পরে সন্ধ্যায় শিয়ালদহ-নয়াদিল্লি দুরন্ত এক্সপ্রেসেও একই ঘটনা ঘটলে আইআরসিটিসি-র তরফে অন্য কর্মী এনে খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা করা হয়। তখন বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নতুন পরিবেশনকারীদের গোলমাল বেধে যায়। এই সময় সময় বাইরে থেকে বহু লোক ঢুকে ইট-পাটকেল ছুড়ে বিপত্তি বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ। এই গোলমালে প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ে শিয়ালদহ-দুরন্ত এক্সপ্রেস।
আইআরসিটি-র পূর্বাঞ্চলের গ্রুপ জেনারেল ম্যানেজার দেবাশিস চন্দ্র বলেন, ‘‘কিছু পুরনো কর্মী যা করেছেন, সেটা মানা যায় না। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
এ দিনের গোলমালকে কিন্তু বিক্ষিপ্ত ঘটনা হিসেবে দেখছেন না রেল আধিকারিকদের একাংশ। তাঁরা মনে করেন, রেলের অভ্যন্তরে পরিচালন ব্যবস্থায় বড় ধরনের খামতি রয়েছে। এর ফলেই নানা সমস্যা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ট্রেন সময় মতো চালানোও যাচ্ছে না। এ দিন সকাল থেকে তিনটি দুরন্ত এক্সপ্রেসে গোলমাল দেখার পরেই যদি রেল সতর্ক হতো, তা হলে সন্ধ্যায় গোলমাল এড়ানো যেত।