প্রতীকী ছবি।
বাবা-মা, অন্যান্য অভিভাবক-অভিভাবিকা থেকে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা— সকলেই ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার খবর রাখেন। কিন্তু তাদের মনের খবর রাখেন কি?
ছাত্রছাত্রীদের মনের হদিস পেতে স্কুলের ডায়েরিতে মানসিক স্বাস্থ্যের ‘কলাম’ বা স্তম্ভ রাখার প্রস্তাব দিচ্ছে রাজ্য শিশু অধিকার রক্ষা কমিশন। ‘‘আজকাল সরকারি ও বেসরকারি দুই ধরনের স্কুলেই পড়ুয়াদের ডায়েরি দেওয়া হয়। তাতে শারীরিক স্বাস্থ্যের কলাম থাকলেও মানসিক স্বাস্থ্যের কলাম থাকে না। আমরা সরকারি ও বেসরকারি স্কুলে পড়ুয়াদের ডায়েরিতে মানসিক স্বাস্থ্যের কলাম রাখার প্রস্তাব দিচ্ছি,’’ বললেন ওই কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী।
২১ জুন দক্ষিণ কলকাতার একটি স্কুলের শৌচালয়ে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই ছাত্রী কয়েক মাস ধরে খুব মানসিক চাপের মধ্যে ছিল। তিন মাস ভাল করে ঘুমোতে পর্যন্ত পারেনি। তারই মধ্যে নিয়মিত স্কুলে এসেছে। মেয়েটি যে-মানসিক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, সেটার ছাপ তার চোখেমুখে প্রকাশ পাওয়ার কথা। প্রশ্ন উঠছে, একটি জন ছাত্রী রোজ বেশ কয়েক ঘণ্টা স্কুলে কাটাচ্ছে, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে কথা বলছে। অথচ তার মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে কারও নজর পড়ল না কেন?
শিক্ষা শিবিরের একাংশের বক্তব্য, পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা ডায়েরিতে লেখার ভার শিক্ষকদের দেওয়া থাকলে হয়তো ওই ছাত্রীর মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর পড়ত।
হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভ্রজিৎ দত্ত বলেন, ‘‘ডায়েরিতে এই ধরনের মানসিক স্বাস্থ্যের কলাম চালু করা খুব দরকার। সরকারি স্কুলে মনোবিদ থাকেন না। প্রতিটি স্কুলে না-হলেও কয়েকটি স্কুল মিলে অন্তত এক জন মনোবিদ রাখা খুব জরুরি।’’ যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পরিমল ভট্টাচার্য মনে করেন, এই ধরনের কলাম চালু করলে খুব ভাল হয়। তবে তার জন্য স্কুলগুলিকে পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। ‘‘প্রতিটি স্কুলে সব সময়ের জন্য যদি সম্ভব না-ও হয়, অন্তত ছ’মাস অন্তর মনোবিদেরা যদি স্কুলে এসে পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন, তা হলেও ছাত্রছাত্রীরা উপকৃত হবে,’’ বলেন পরিমলবাবু।
গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড মাল্টিপারপাস স্কুল ফর বয়েজ, টাকি হাউসের সহকারী প্রধান শিক্ষক অমিতকুমার গঙ্গোপাধ্যায় মনে করেন, ডায়েরির একটা পাতায় শুধু স্বাস্থ্যের কলাম করলেই হবে না। এর জন্য দরকার সার্বিক সচেতনতা। তিনি বলেন, ‘‘অনেক অভিভাবকই ছেলেমেয়েদের ডায়েরি খুলে দেখেন না। ডায়েরিতে এ-রকম কলাম চালু করার সঙ্গে সঙ্গে ‘পেরেন্ট-টিচার মিটিং’-এ এই বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন করলে ভাল হয়।’’ ওই সব বৈঠকে যদি কোনও মনোবিদের সঙ্গে অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীদের কথা বলার ব্যবস্থা রাখা হয়, তা হলে খুবই উপকার হতে পারে বলে মনে করছেন অমিতবাবু।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।