ফের বিতর্কে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। এ বার পদোন্নতির আইন নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে সংসদের অন্দরেই! সংসদের এক পক্ষের ব্যাখ্যা, সরকারকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ১৯৯৫ সাল থেকেই নিয়ম ভাঙছে সংসদ। যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ সংসদের বর্তমান কর্তারা।
উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের বিধিতে উল্লেখ রয়েছে, সংসদের সহ-সচিব নিয়োগ ক্ষেত্রে মোট শূন্য পদ পূরণ করতে হবে সাড়ে ৩৩ শতাংশ পদোন্নতি এবং সাড়ে ৬৬ শতাংশ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে। কিন্তু সেই নিয়ম কার্যত অগ্রাহ্য করে ন’য়ের দশকে পদোন্নতি ও সরাসরি নিয়োগের অনুপাত ৫০ শতাংশ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৯৫ সালে সেই সূত্র ধরে সংসদের সভায় বিলটি পাশ হয়। সংসদ সূত্রের খবর, আইন অনুযায়ী যা করা যায় না। কারণ ১৯৭৫ সালের ‘পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ আইন’-এর ২১ (৪) নম্বর ধারায় উল্লেখ রয়েছে রাজ্য সরকারের অনুমোদন ছাড়া সংসদের নির্দিষ্ট আইনে কোনও পরিবর্তন স্বীকৃতি পাবে না। কিন্তু তারপরেও সংসদের সভায় পাশ হওয়া ওই বিল মেনেই প্রক্রিয়া চলতে থাকে। আইন অনুযায়ী যা বেআইনি বলে মত সংসদের এক কর্তার।
আরও পড়ুন- ইস্তাহার প্রকাশ মমতার, ফের আক্রমণ বাম-কংগ্রেসকে
এর পরে ২০১১ সালে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে সংসদের সভাপতি মুক্তিনাথ চট্টোপাধ্যায় বিষয়টি লক্ষ্য করে ৫০ শতাংশের অনুপাতের নিয়ম বন্ধ করে দেন। এবং রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেন অনুপাতটি যেন ৫০ শতাংশই করা হয়। ‘‘সরকার ওই আবেদনে সাড়া দিয়ে অনুমোদন দিলেই তা আইনে পরিবর্তিত হত। যতক্ষণ তা না হবে ততক্ষণ ওই পদ্ধতি বেআইনি। যে কারণেই আমি আবেদন করেছিলাম। কিন্তু ফের জানিয়ে দেওয়া হয় আগের নিয়ম মেনেই নিয়োগ হবে।’’—বলেন তৎকালীন সংসদ সভাপতি মুক্তিনাথবাবু। ২০১৩ সালে সংসদের সভাপতি পদে নিয়োগ করা হয় মহুয়া দাসকে।
ওই বছরের ডিসেম্বরে ফের মহুয়াদেবী অনুপাতটি ৫০ শতাংশ করে দেওয়ার জন্যে শিক্ষা দফতরের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে কোনও উত্তর না মেলায় ২০১৪ সালের জুনে ২০০৩ সালের কায়দায় সংসদের সভায় ৫০ শতাংশ অনুপাতের বিষয়টি পাশ করে নেওয়া হয়। শিক্ষা দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘এটা একেবারে বেআইনি। কারণ সরকারের অনুমোদন ছাড়া তা কার্যকর হল কী করে? নিয়োগই বা কী ভাবে হল?’’ এ বিষয়ে সম্প্রতি সংসদের করম্চারী সংগঠন স্কুল শিক্ষা দফতরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
মহুয়া দেবী অবশ্য জানান, সংসদ কোনও নিয়ম তৈরি করলে তা স্কুল শিক্ষা দফতরে জানাতে হয়। যদি দফতর থেকে কোনও নিষেধ আসে তাহলে অন্য বিষয়, কিন্তু সরকার থেকে এ বিষয়ে কোনও নিষেধাজ্ঞা আসেনি। তিনি বলেন, ‘‘কুড়়ি বছর ধরে ৫০ শতাংশের ভিত্তিতেই নিয়োগ হয়ে আসছে। ওই ভিত্তি কাজ করে অনেক অবসরও নিয়েছেন। নতুন করে তো তা কর হয়নি। শিক্ষা দফতরের কোনও কিছু জানার থাকলে জানতে চাইতেই পারেন। বিষয়টি জানানো হবে।’’
কিন্তু প্রশ্ন, আইনে যে নিয়মের কথা বলা হয়েছে সেটা ভেঙে নিয়োগ করতে হল কেন? তা হলে সরকারই তো বিধানসভায় আইন পরিবর্তন করতেই পারত।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রশাসকের এক বছর মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি যদি বিধানসভায় আসতে পারে তাহলে সংসদের আইনই বা পরিবর্তন করা হল না কেন?
এ বিষয়ে স্কুল শিক্ষা দফতরের কর্তাদের মুখে কুলুপ।