ফাইল চিত্র।
হুটহাট আন্দোলনের বিরূপ প্রভাব যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ম্লান করে দিচ্ছে বলে শিক্ষা শিবিরের অভিযোগ। কিন্তু পড়ুয়া শিবির নিরস্ত হচ্ছে না। গত সপ্তাহের জোড়া ঘেরাওয়ের পরে আবার ঘেরাও হল বুধবার। এ দিন কলা বিভাগের ডিন ওমপ্রকাশ মিশ্রকে ঘেরাও করে ওই বিভাগের ছাত্র সংসদ। অন্য দিকে, পাশ করিয়ে দেওয়ার দাবিতে এক ছাত্র মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষক তরুণ নস্করকে ফোনে হুমকি দেন বলে অভিযোগ। তার পরেই কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষক সংগঠনগুলি ভার্চুয়াল বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নেন, ছাত্রছাত্রীদের এই ‘অবাঞ্ছিত’ ব্যবহার বরদাস্ত করা হবে না। পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন আছে। সেই আইনের বাইরে গিয়ে তাকে কোনও ভাবে লঘুও করা হবে না।
ভর্তিতে অস্বচ্ছতা, পরীক্ষার ফলাফলে অসঙ্গতি, ফলপ্রকাশে দেরির অভিযোগে ৯ ডিসেম্বর এবং ওই সব কাজের অনলাইন প্রক্রিয়া (জুমস) ঢেলে সাজাতে একটি কমিটি গঠনের পরেও ১১ তারিখে সহ-উপাচার্য, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিন-সহ কয়েক জন কর্তাকে গভীর রাত পর্যন্ত ঘেরাও করে রাখে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র সংসদ ফেটসু। শিক্ষক সমিতির জুটা উপাচার্যকে জানায়, জুমস কমিটির মুখোমুখি বৈঠকে তারা আর যাবে না। ভার্চুয়াল বৈঠক হোক। উপাচার্য সুরঞ্জন দাস জানিয়ে দেন, বুধবার জুমস কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক হবে। কিন্তু এ দিন তিন ছাত্র সংসদের কোনও প্রতিনিধি যোগ না-দেওয়ায় সেই বৈঠক স্থগিত হয়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ এ দিন স্নাতক স্তরে অনলাইনে ক্লাস শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু কলা বিভাগের ছাত্র সংসদ আফসু-র কিছু সদস্য দুপুরে ওমপ্রকাশবাবুর কাছে গিয়ে জানায়, ভর্তি শেষের পরে অনলাইনে ক্লাস শুরু করা হোক। ওমপ্রকাশবাবু রাজি না-হওয়ায় তাঁকে চার ঘণ্টারও বেশি আটকে রাখে আফসু। ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শুভায়ন আচার্য মজুমদার বলেন, ‘‘অনেক বিভাগেই বহু আসন ফাঁকা। পরে যাঁরা ভর্তি হবেন, ক্লাস শুরু হয়ে গেলে তাঁরা সমস্যায় পড়বেন। তাই ভর্তি শেষে ক্লাস শুরুর কথা বলা হয়েছিল। ওমপ্রকাশবাবু ফ্যাকাল্টি কাউন্সিলের বৈঠক না-ডেকেই ক্লাস শুরুর বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। তার প্রতিবাদ জানাতে গিয়েছিলাম আমরা।’’ ওই ছাত্রনেতার অভিযোগ, ডিন কয়েক জন ছাত্রীকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেন, কটূক্তি করেন। তাই ওঁকে ক্ষমা চাইতে হবে এবং ফ্যাকাল্টি কাউন্সিলের বৈঠক ডাকতে হবে। কর্তৃপক্ষ জানান, বৃহস্পতিবার ওই কাউন্সিলের বৈঠক ডাকা হবে।
ওমপ্রকাশবাবু বলেন, ‘‘আমি কারও গায়ে হাত দিইনি। ওরা ডিনের দফতরে এসেছিল অনেকে মিলে। বাইরে এসে দেখি, আমার গাড়ির বনেটে উঠে বসেছে তিন জন। তাদের সরে যেতে বলি। বলা হচ্ছে, আমি নাকি ছাত্রীদের গায়ে হাত দিয়েছি! কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছেন, অনলাইনে ক্লাস শুরু হবে ১৬ ডিসেম্বর। আমি সেই বিজ্ঞপ্তি বদলাতে পারি না। কোনও ভুল করিনি। তাই ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’’
এ দিন উপাচার্যের কাছে অভিযোগ যায়, শিক্ষক তরুণবাবুকে ফোনে হুমকি দিয়েছেন এক ছাত্র। গত বছর ছাত্রটির তরুণবাবুর ক্লাস করার কথা থাকলেও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তিনি দাবি তুলেছেন, তাঁকে পাশ করিয়ে দিতে হবে। বিকেলে ভার্চুয়াল বৈঠক ডেকে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ছাত্রটিকে শো-কজ় করা হবে।
বারবার ঘেরাওয়ের জেরে দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় যাদবপুরে পরিস্থিতি এমনই যে, কয়েক দিন ধরেই শীর্ষ কর্তারা ক্যাম্পাসে আসছেন না। উপাচার্য, দুই সহ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, ফিন্যান্স অফিসার এ
দিনেও আসেননি। শিক্ষক সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠকের পরে উপাচার্য বলেন, ‘‘শিক্ষকদের সঙ্গে পড়ুয়াদের অবাঞ্ছিত ব্যবহার করা উচিত নয়। ছাত্রদের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলনের অধিকার অবশ্যই রয়েছে। তবে তাতে যেন রুচি এবং সংস্কৃতি বজায় থাকে।’’
শিক্ষক সমিতি জুটা-র সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায়ের বক্তব্য, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়ুয়ারা সরাসরি শিক্ষকদের আক্রমণ করছেন। বিষয়টি উদ্বেগজনক। শিক্ষক ও ছাত্র উভয় পক্ষকেই আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। অন্য শিক্ষক সংগঠন আবুটা-র পক্ষে গৌতম মাইতি বলেন, ‘‘শিক্ষকদের এ ভাবে ঘেরাও, অবমাননা দিনের পর দিন চলতে পারে না। একে ব্ল্যাকমেলিংই বলব। একে সুস্থ আন্দোলন বলা যায় না।’’