school

বদলি পোর্টালে ধোঁয়াশা, আতান্তরে স্কুল-প্রধানেরা

শিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, কোনও স্কুলে একটি বিষয়ে যদি দু’জন শিক্ষক থাকেন এবং সেই দু’জনেই যদি বদলির আবেদন করেন, তা হলে তো সেখানে ওই বিষয়টি পড়ানোর জন্য কোনও শিক্ষকই থাকবেন না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২১ ০৫:৫১
Share:

ফাইল চিত্র

স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বদলি-সমস্যার সুরাহা করতে তার আবির্ভাব। কিন্তু সেই ‘উৎসশ্রী’ পোর্টাল ঘিরেই তৈরি হয়েছে নানা সমস্যা ও ধোঁয়াশা। ওই পোর্টালে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর মিলছে না বলে অভিযোগ করছেন শিক্ষকেরা। সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়ছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা। কারণ, বদলির জন্য যে-সব শিক্ষক আবেদন করছেন, তাঁদের ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ বা অনাপত্তি শংসাপত্র দিতে হচ্ছে স্কুল-প্রধানদেরই।

Advertisement

দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটের শ্রীচন্দা মহেন্দ্রনাথ মেমোরিয়াল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রসেনজিৎ দাস জানান, বদলির আবেদনের ক্ষেত্রে কোনও সময়সীমা আছে কি না, পোর্টাল থেকে তিনি সেটা বুঝতেই পারছেন না। “যদি বদলির আবেদন করার সময়সীমা ছ’মাস হয়, তা হলে ছ’মাসে ক’জন শিক্ষক স্কুল থেকে বদলি হতে চাইছেন, সেটা বোঝা যাবে। নিয়ম অনুযায়ী মোট শিক্ষকের ১০ শতাংশের বেশি জনকে বদলি করা যাবে না। আবার ১০% মানে সেটা স্কুলের মোট শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী মিলিয়ে ১০%, নাকি শুধু শিক্ষক-সংখ্যার ১০%, সেটাও স্পষ্ট নয়,’’ বলেন প্রসেনজিৎবাবু।

শিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, কোনও স্কুলে একটি বিষয়ে যদি দু’জন শিক্ষক থাকেন এবং সেই দু’জনেই যদি বদলির আবেদন করেন, তা হলে তো সেখানে ওই বিষয়টি পড়ানোর জন্য কোনও শিক্ষকই থাকবেন না। কলকাতার একটি স্কুলের এক প্রধান শিক্ষকের প্রশ্ন, তাঁর প্রতিষ্ঠানে বাংলার শিক্ষক দু’জন। দু’জনেরই বদলির জন্য আবেদন করার অধিকার আছে। দু’জনেই যদি বদলি হয়ে যান, তখন স্কুলে বাংলা পড়াবেন কে?

Advertisement

দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরের দত্তের চক হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক পঞ্চানন ময়রা জানান, গ্রামের দিকের স্কুলে এমনিতেই শিক্ষক কম। নিয়ম মেনে যদি ন্যূনতম ১০ শতাংশের বদলির আবেদনও মঞ্জুর হয়ে যায়, তা হলে স্কুলে শিক্ষক-সংখ্যা আরও কমে যেতে পারে। “সরকার জানিয়েছে, উৎসশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে বদলির সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়াও চালু থাকবে। সে-ক্ষেত্রে আগে নিয়োগ করে পরে যদি ইচ্ছুক শিক্ষকদের বদলি করা হয়, তা হলে সমস্যা হবে না,” বলছেন ওই প্রধান শিক্ষক।

বদলির ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের অভিযোগ, পোর্টালের মাধ্যমে আবেদনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের সিনিয়রটিকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। বাড়ি থেকে তিনি কতটা দূরে থাকেন, সেটা গুরুত্ব পাচ্ছে না। অল পোস্ট গ্ৰ্যাজুয়েট টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক চন্দন গড়াই বলেন, “বদলির ক্ষেত্রে শিক্ষকের সিনিয়রিটি নয়, কোন শিক্ষক বাড়ি থেকে কতটা দূরে থাকেন, সেটাকেই প্রাধান্য দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি আমরা।”

মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা অনিমেষ হালদার জানান, প্রতিবন্ধী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বদলিকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলা হলেও তা ১০ শতাংশের নিয়মের আওতায় পড়বে কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। বদলি সংক্রান্ত নিয়মাবলি নিয়ে সরকার গেজেট-বিজ্ঞপ্তি দিলে ধোঁয়াশা কেটে যেত। শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, উৎসশ্রী পোর্টালের নিয়মকানুন মাঝেমধ্যেই বদলে যাচ্ছে। ফলে আগে আবেদনকারী শিক্ষকেরা পরিবর্তিত নিয়মের সুযোগ পাচ্ছেন না।

৩১ জুলাই উৎসশ্রীর উদ্বোধনে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছিলেন, পোর্টাল চালু হলেও ৩১ অগস্ট পর্যন্ত সমস্যার কথা শোনা হবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পরামর্শ নেওয়া হবে। ২ অগস্ট এই পোর্টাল চালু হওয়ার পরে বিপুল সাড়া মিলেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement