প্রতীকী ছবি।
জেলের মাঠে ফসল ফলছে। ফলাচ্ছেন বন্দিরা।
লৌহকপাটের কারখানায় তৈরি হচ্ছে সর্ষের তেল, সাবান, টম্যাটো সস। তৈরি করছেন বন্দিরা।
এবং এই কাজের জন্য পুরস্কারও জিতে নিচ্ছে কোনও কোনও জেল।
সেন্ট্রাল থেকে সাব-জেল— রাজ্যের প্রায় প্রতিটি জেল-চত্বরেই অব্যবহৃত ফাঁকা জমি পড়ে রয়েছে। প্রায় সব জেলেই রয়েছে কারখানা। এই সম্পদ ব্যবহারের জন্য উদ্যোগী হয় কারা দফতর। দেখতে দেখতে প্রায় প্রতিটি জেলেই এখন ফসল ফলানোর ব্যবস্থা হয়েছে, কিছু না-কিছু উৎপাদন হচ্ছে কারখানায়।
যেমন হলদিয়া সাব-জেল। সেখানকার বন্দিদের বেশির ভাগই বিচারাধীন। তাঁদের দিয়েই সোনার ফসল ফলিয়েছেন জেল-কর্তৃপক্ষ। এই সাব-জেল এখন টম্যাটো এবং সূর্যমুখী সরবরাহ করছে অন্য জেলগুলিকে। টম্যাটো থেকে তৈরি হচ্ছে সস আর সূর্যমুখী থেকে মিলছে সূর্যমুখী তেল। জেলকর্তাদের দাবি, ‘‘জেল বলে মানের সঙ্গে কোনও আপস করা হচ্ছে না। আমাদের সব পণ্যই গুণমানে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে খোলা বাজারের পণ্যকে।’’
হলদিয়া সাব-জেলের এই সাফল্য তাদের পুরস্কার এনে দিয়েছে। ২০১৬ সালে জেলগুলিকে নিয়ে প্রতিযোগিতায় সেরার পুরস্কার জিতে নিয়েছে তারা। কারা দফতরের খবর, গত বছর থেকেই ৫৯টি জেলকে কর্মদক্ষতার নিরিখে পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তিনটি বিভাগে পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। প্রথম বিভাগে ছিল সাতটি সেন্ট্রাল জেল। তার মধ্যে যৌথ ভাবে প্রথম হয়েছে দমদম ও মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার। দ্বিতীয় বিভাগে ১৮টি জেলা, স্পেশ্যাল ও মহিলা জেল। এতে প্রথম হয়েছে আলিপুর মহিলা জেল। তৃতীয় বিভাগে ছিল ৩১টি সাব-জেল বা উপ-সংশোধনাগার। প্রথম হয়েছে হলদিয়া ও বোলপুর।
কারা দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘পুরস্কার পাওয়ার মাপকাঠি মূলত তিনটি। জেলের ভিতরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, উৎপাদনের মান এবং পরিচ্ছন্নতা।’’ ওই কর্তা জানান, হলদিয়ার মতোই মেদিনীপুর জেল সর্ষে, মসুর ডাল, কাঠের জিনিস, বেডশিট এবং উন্নত মানের মুড়ি তৈরি করে সব জেলকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। একই ভাবে দমদম জেল এগিয়ে গিয়েছে ভাল সাবান, ফিনাইল উৎপাদনে। আলিপুর মহিলা জেল আবার নাম কুড়িয়েছে বন্দিনীদের হাতে তৈরি শালোয়ার-কামিজ আর কুকিজের জন্য।
পুরস্কার পেয়ে সব সংশ্লিষ্ট জেল-কর্তৃপক্ষই খুশি। শুধু মেদিনীপুর রেঞ্জ থেকে একটি সেন্ট্রাল এবং একটি সাব-জেল পুরস্কার পাওয়ায় খুশি সেখানকার দায়িত্বে থাকা ডিআইজি সুদীপ্ত চক্রবর্তীও। একই সঙ্গে অবশ্য প্রশ্ন উঠেছে, উন্নত মানের এই সব পণ্য খোলা বাজারে বিক্রির পরিকল্পনা করা হচ্ছে না কেন?
এক কারাকর্তার জবাব, ‘‘এখন বেশির ভাগ জিনিস জেলেরই কাজে লেগে যায়। যেমন, সর্ষের তেল, ফিনাইল, বেডশিট, মুড়ি। আবার মেদিনীপুর জেলে উৎপাদিত সর্ষে প্রয়োজনে চলে যায় প্রেসিডেন্সি জেলে। সেখানে তৈরি হয় সর্ষের তেল।’’ এর বাইরে সরকারের বিভিন্ন মেলা, কিছু জেলের বাইরের দোকানে বন্দিদের তৈরি পণ্য পাওয়া যায়।
‘‘বছর দুয়েক ধরে জেলে বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন বিপুল হারে বেড়েছে। মানও খুব ভাল। তাই সরকারের ‘সুফল বাংলা’ কিংবা ‘বিশ্ব বাংলা’র দোকানে বন্দিদের তৈরি পণ্য রাখার কথা ভাবা হচ্ছে,’’ বললেন ওই কারাকর্তা।