জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রিয়ঙ্ক কানুনগো। — ফাইল চিত্র।
তিলজলা থানার ওসি বিশ্বক মুখোপাধ্যায়কে অপসারণের সিদ্ধান্তে আদৌ খুশি নন জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের কর্তা প্রিয়ঙ্ক কানুনগো। তাঁর দাবি, এই সিদ্ধান্ত মূল বিষয় থেকে দৃষ্টি ঘোরানো ছাড়া আর কিছু নয়। প্রিয়ঙ্কের প্রশ্ন, ওসি যদি অপরাধ করেই থাকেন, তা হলে তাঁকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন? তাঁর আশঙ্কা, তাঁর মিথ্যা মামলা দেওয়া হতে পারে।
শুক্রবার বিশ্বকের বিরুদ্ধে শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগ তুলেছিলেন প্রিয়ঙ্ক। এর পর শনিবার তিলজলা থানার ওসিকে অপসারণ করা হয়। তাঁর জায়গায় দায়িত্বে আসছেন সুপ্রতীক বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা পুলিশের এই সিদ্ধান্তের পর প্রিয়ঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করে আনন্দবাজার অনলাইন। তিনি বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে আসার আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (অমিত শাহ)-কে আমি জানিয়ে এসেছিলাম, আমার সঙ্গে এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। ঠিক তা-ই ঘটল। লোক দেখানোর জন্য ওসিকে অপসারণ করা হয়েছে। কাজের কাজ তো কিছুই হচ্ছে না। কোনও তদন্ত হচ্ছে না।’’
বিশ্বককে কলকাতা পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (কেপিটিএ) পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে লালবাজার। তা নিয়ে প্রিয়ঙ্ক বলেন, ‘‘ওঁকে পুলিশ অ্যাকাডেমিতে পাঠানো হয়েছে যাতে, গোটা পুলিশ ফোর্সকেই নিজের মতো করে তৈরি করতে পারেন উনি। ন্যায়ের দাবিতে যাঁরা লড়ছেন, তাঁদের গায়ে হাত তুলতে পারে! আমি পশ্চিমবঙ্গে বিচারের আশা দেখি না। কারণ, যদি তা-ই হত, তা হলে তদন্তভার লালবাজারের কাছ থেকে কেড়ে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হত।’’ প্রিয়ঙ্ক জানান, বাংলায় আসার অভিজ্ঞতা তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে জানাবেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হতে পারে। কিন্তু আমি ভয় পাব না। আমি বাংলায় আসতেই থাকব। শিশুদের সুরক্ষার স্বার্থে যদি প্রাণ দিতে হয়, তা-ই দেব।’’
তিলজলায় সাত বছরের শিশুকন্যাকে যৌন নির্যাতনের পর নৃশংস ভাবে খুনের ঘটনার তদন্তে তিলজলায় গিয়েছিল জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের একটি প্রতিনিধি দল। সেখানে হাজির হয়েছিলেন রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের প্রতিনিধিরাও। দু’পক্ষের মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ হয়। শুধু তাই-ই নয়, জাতীয় কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রিয়ঙ্ককে থানায় ডেকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে ওসি বিশ্বকের বিরুদ্ধে। এর পরই ওসির বিরুদ্ধে ডিসি (এসইডি) শুভঙ্কর ভট্টাচার্যের কাছে শুক্রবার অভিযোগ জানান প্রিয়ঙ্ক। তাঁর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।
জাতীয় কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রিয়ঙ্ক জানিয়েছেন, তিলজলা থানায় গিয়ে নিহত শিশুর অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেন। পাশাপাশি, তদন্তকারী আধিকারিকের সঙ্গেও কথা বলেন জাতীয় কমিশনের প্রতিনিধিরা। প্রিয়ঙ্কের অভিযোগ, থানার মধ্যে বডি ক্যামেরা লাগানো ছিল। সেই ক্যামেরার মাধ্যমে গোটা বিষয়টি রেকর্ড করা হচ্ছিল। বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রতিবাদ জানালে থানার মধ্যেই তাঁকে মারধর করা হয়। সেই অভিযোগ ওঠে ওসি বিশ্বকের বিরুদ্ধে। রাতেই তাঁর বিরুদ্ধে ডিসি (এসইডি)-র কাছে অভিযোগ দায়ের করেন প্রিয়ঙ্ক।