Private Hospitals

রেট চার্ট ঝোলানো নেই কলকাতার একাধিক কর্পোরেট হাসপাতালে

গত ২২ অগস্টের অ্যাডভাইজ়রিতে কমিশনের স্পষ্ট বক্তব্য ছিল, খরচের তালিকায় পরিষেবা ফি-র বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে।

Advertisement

সৌরভ দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:০৪
Share:

রেট চার্ট ঝোলানো নেই কলকাতার একটি হাসপাতালের রিসেপশনে। নিজস্ব চিত্র

স্বাস্থ্য কমিশনের পরামর্শই সার। প্রায় দু’সপ্তাহ আগে খরচের তালিকা দৃশ্যমান করে তোলার জন্য প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতালকে অ্যাডভাইজ়রি দিয়েছিল কমিশন। বৃহস্পতিবার শহরের একাধিক কর্পোরেট হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেল, সেই পরামর্শে কান দেয়নি প্রায় কেউই।

Advertisement

গত ২২ অগস্টের অ্যাডভাইজ়রিতে কমিশনের স্পষ্ট বক্তব্য ছিল, খরচের তালিকায় পরিষেবা ফি-র বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে। রিসেপশন ডেস্ক, ক্যাশ কাউন্টার এবং হাসপাতালে ঢোকার মুখেই লাগাতে হবে ডিসপ্লে বোর্ড। এমন ভাবে লাগাতে হবে যেন ছ’ফুট দূরত্ব থেকে খালি চোখে পড়া যায়।

এ দিন অ্যাপোলো গ্লেনইগলস হাসপাতালের প্রবেশ পথের বাঁ-দিকে রোগী পরিষেবা কক্ষের কোনাকুনি দেখা মিলল ডিজিটাল বোর্ডের। সেখানে শুধু প্রাইভেট, ডিলাক্স, সুইট, এম সুইটে এক্স-রে’র খরচ লেখা। মিনিট পনেরো অপেক্ষা করেও আর কোনও পরিষেবার খরচ ওই বোর্ড থেকে জানা যায়নি। অন্য পরিষেবার খরচ সম্পর্কে জানতে চাইলে ক্যাশ কাউন্টারে কর্তব্যরত কর্মী অ্যাডমিশন কাউন্টারে পাঠিয়ে দেন। সেখানে এক কর্মী বলেন, ‘‘বাইরের ডিসপ্লে বোর্ড দেখে লাভ নেই। ওটা পুরনো। বেড চার্জে একটু বদল হয়েছে। এখনও নতুন তালিকা কর্তৃপক্ষের সই হওয়ার পরে আমাদের কাছে আসেনি।’’ তিনি জানান, ওই হাসপাতালে সবচেয়ে কম শয্যা-খরচ হল দিন পিছু সাড়ে ন’হাজার টাকা। আগে যা ছিল ন’হাজার। এর পর রয়েছে কেবিন। যা আরও হাজার টাকা দামি। ডিলাক্স বেড নিলে প্রতিদিনের খরচ ১২ হাজার টাকা।

Advertisement

আরও পড়ুন: ১৭ বছর আগের সার্স কি মিশে কোভিড ১৯-এও

অ্যাপোলোর ভাইস প্রেসিডেন্ট জয় বসু অবশ্য বলেন, ‘‘বেড চার্জে কোনও বদল হয়নি। মেন লবি ছাড়া ডে কেয়ার এবং অঙ্কোলজি লবিতে আরও দু’টি ডিসপ্লে বোর্ড রয়েছে।’’ কিন্তু মেন লবির বোর্ড থেকে বাকি পরিষেবা সম্পর্কে তো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না? তিনি বলেন, ‘‘ওই সময় হয়তো যান্ত্রিক গোলযোগ হয়েছিল। ৩০ সেকেন্ড অন্তর বোর্ডে প্রতিটি পরিষেবার তথ্য ভেসে ওঠে।’’

আনন্দপুর ফর্টিসের রিসেপশনে কর্মরত কর্মী জানান, খরচের তালিকা সম্বলিত এ ধরনের কোনও ডিসপ্লে বোর্ড তাঁদের নেই। স্বাস্থ্য কমিশনের পরামর্শের কথা জানালে ইনডোর পেশেন্টস কাউন্টারে পাঠিয়ে দেন তিনি। সেখানে যাওয়া মাত্র হাতে বিভিন্ন শয্যার খরচের তালিকা ধরিয়ে দেওয়া হয়। তাতে টুইন ডিলাক্স (দিনপিছু ৭৫০০), প্রাইভেট ডিলাক্স (দৈনিক ১২০০০), এগ্জিকিউটিভ ডিলাক্স (দৈনিক ১৩৫০০), রয়্যাল সুইট (দৈনিক ১৭০০০)-এর নামের পাশে খরচের সবিস্তার বর্ণনা নেই। হাসপাতালের এক কর্মী বলেন, ‘‘কাগজে যা লেখা আছে তা কিন্তু শুধুই বেড চার্জ। চিকিৎসকের ফি, ইনভেস্টিগেশন সব আলাদা। বুঝেছেন তো?’’

আরও পড়ুন: ‘বেকসুর’ তকমা পেতেই হারিয়ে গেল ১৫টা বছর

যদিও ফর্টিসের মার্কেটিং হেড আশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কোনও কর্মী এ কথা বললে ঠিক বলেননি। পয়লা সেপ্টেম্বর থেকে বহির্বিভাগ-সহ গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গায় খরচের তথ্য জানিয়ে ইলেকট্রনিক ডিসপ্লে বোর্ড রয়েছে। ছ’ফুট দূরত্ব থেকে তা পড়াও যায়।’’ কিন্তু তাতে সবিস্তার তথ্য যে নেই তা স্বীকার করে ওই হাসপাতালের অন্যতম এক কর্তা বলেন, ‘‘৫২-৫৪ পাতার বিস্তারিত তথ্য ডিসপ্লে বোর্ডে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই জন্য রিসেপশন কাউন্টারে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।’’

পরবর্তী গন্তব্য ডিসান। সেখানে রিসেপশনের দেওয়াল বা প্রবেশ পথে যে বোর্ডের থাকার কথা, তার দেখা মিলল রোগী পরিষেবা কক্ষের ভিতরে, প্লাস্টিকের পর্দার পিছনে। তারও যা আয়তন, তাকে কমিশনের অ্যাডভাইজ়রি অনুযায়ী ‘দৃশ্যমান’ বলা যায় না। কারণ, এ দিন কমিশনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘বিমানবন্দর, রেল স্টেশনে ডিসপ্লে যেমন হয়, সে রকম ডিসপ্লে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।’’ ডিসানের মতোই ডিসপ্লে বোর্ডের আয়তন সিএমআরআই-এ। সেখানে অ্যাডমিশন কাউন্টারে থামের আড়ালে রয়েছে খরচের তথ্য। কিন্তু খরচের বিস্তারিত তথ্য সেখানেও চোখে পড়েনি। সিএমআরআই-এর তরফে জানানো হয়েছে, অ্যাডমিশন কাউন্টারের কাছে একটি টিভিতে চিকিৎসার খরচ সংক্রান্ত তথ্যের পাশাপাশি চিকিৎসকদের সম্পর্কে তথ্য দেওয়া থাকে। বিস্তারিত তথ্য যাতে দেওয়া যায় সেই চেষ্টা করা হবে।

ডিসপ্লে বোর্ডের দেখা মেলেনি মুকুন্দপুর আমরিতেও। আমরি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, করোনা আবহে ভেন্ডর দেরি করায় এখনও ডিসপ্লে বোর্ড টাঙানো সম্ভব হয়নি। দ্রুত কমিশনের পরামর্শ মানার আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা। ডিসপ্লে বোর্ড নেই জানিয়ে রুবি হাসপাতালের এক কর্মী বলেন, ‘‘আমাদের শয্যার খরচ বদলেছে। আইসিইউ ১০৫০০ টাকা। চিকিৎসকের ফি, মেডিসিন, ইনভেস্টিগেশন আলাদা। জেনারেল বেড চার্জ ২৮০০ টাকা। বাকি সব আলাদা।’’ রুবির জেনারেল ম্যানেজার অবশ্য দাবি করেছেন, হাসপাতাল চত্বরে রেট ডিসপ্লে করা রয়েছে। আরও কিছু বোর্ডে তৈরির বরাত দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিনের চিকিৎসার খরচের বিস্তারিত তথ্য ই-মেল, হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement