প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল। —নিজস্ব চিত্র।
কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে সিবিআই দফতরে হাজিরা দিলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল। সময়ের আগেই সিবিআইয়ের দফতরে প্রবেশ করেছেন তিনি। তাঁকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে হাজিরা দিতে বলা হয়েছিল। গৌতম নিজাম প্যালেসে পৌঁছে গিয়েছেন ৫টা ৫৩ মিনিটে। নির্ধারিত সময়ের সাত মিনিট আগে।
সিবিআই দফতরে প্রবেশের আগে সাংবাদিকেরা গৌতমকে ঘিরে ধরেন। কিন্তু তিনি কোনও কথা বলেননি। চুপচাপ দফতরে ঢুকে গিয়েছেন।
চতুর্থীর সন্ধ্যায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতমকে প্রাথমিক নিয়োগ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিবিআই দফতরে যেতে বলেছেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁকে দ্রুত জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন বিচারপতি। তিনি জানান, গৌতমের সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে পর্ষদের ডেপুটি সেক্রেটারি পার্থ কর্মকারকেও। তিনিও হাজিরা দিয়েছেন।
বুধবার হাই কোর্টে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয় সিবিআই। ২০১৪ সালের টেট দুর্নীতি সংক্রান্ত ওই রিপোর্ট দেখার পরেই গৌতমকে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, ‘‘এই রিপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’’ তদন্তে সহযোগিতা না করলে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতিকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের স্বাধীনতাও সিবিআইকে দিয়েছেন বিচারপতি।
কেন পর্ষদ সভাপতিকে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ? বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, প্রাথমিকের অনেক মামলা শুনানি হয়েছে কলকাতা হাই কোর্টে। পর্ষদের বর্তমান সভাপতি-সহ অন্য আধিকারিকেরা নতুন প্রিন্ট করা কপিকে ‘ডিজিটাইজ়ড কপি’ বলে দাবি করেছেন। তাই আদালত মনে করছে, পর্ষদ সভাপতি এবং ডেপুটি সেক্রেটারিকে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বিচারপতি এ-ও জানান, সিবিআই চাইলে পর্ষদের যে কোনও আধিকারিককে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে।
২০১৪ সালে প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার উত্তরপত্র বা ওএমআরশিট দেখে নম্বর দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ‘এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানি’ নামের এক সংস্থাকে। সেই সংস্থার কর্তা কৌশিক মাজিকে নিজাম প্যালেসে ডেকে পাঠিয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সিবিআই। এর পর বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে টেট পরীক্ষার খাতা সংক্রান্ত রিপোর্ট পেশ করা হয়েছিল। ওই মামলায় আবেদনকারীর অভিযোগ ছিল, ওএমআর শিটের ‘ডিজিটাইজ়ড ডেটা’য় অনেক ভুল রয়েছে। আদালতে যে ওএমআর শিটের তথ্য বলে যে নথি পেশ করা হয়েছে, তা একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ ওএমআর শিটের ডিজিটাইজ়ড ডেটা বলতে যা বোঝায়, তা আসলে ওএমআর শিটের স্ক্যান করা কপি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পর্ষদ আদালতে যা পেশ করেছে তা টাইপ করা তথ্য। মামলাকারীর এই বক্তব্য শোনার পরই তদন্তকারী সিবিআইকে প্রশ্ন করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি জানতে চান, কী ভাবে এই ফাঁকি থেকে গেল? এমনকি, অভিযুক্তদের যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করার দরকার ছিল, তা-ও সিবিআই করেনি বলে অভিযোগ করেন বিচারপতি।
সেই ভর্ৎসনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই টেট পরীক্ষার ওএমআর শিট দেখার দায়িত্বে থাকা সংস্থার কর্তা কৌশিককে নিজাম প্যালেসে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সিবিআই। তার পর পর্ষদ সভাপতিকেও জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেওয়া হল। ১৮ ডিসেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে হাই কোর্টে। এখন দেখার, সিবিআই দফতরে কত ক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় গৌতমকে।