Firhad Hakim

আমি কি চোর? বার বার হেনস্থা কেন! সিবিআই চলে যেতেই স্ত্রী-কন্যাকে পাশে নিয়ে প্রশ্ন ক্রুদ্ধ ফিরহাদের

সিবিআই তল্লাশির পর স্ত্রী এবং কন্যাকে পাশে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করলেন ফিরহাদ হাকিম। কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ প্রশ্ন তুললেন, ‘‘আমি কি চোর?’’

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৩ ১৯:০১
Share:

— নিজস্ব চিত্র।

সিবিআই তল্লাশির পর স্ত্রী এবং কন্যাকে পাশে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করলেন ফিরহাদ হাকিম। আর সেই সাংবাদিক বৈঠকে বলা প্রতিটি কথায় প্রকাশ পেল কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদের ক্রোধ। তিনি প্রশ্ন তুললেন, ‘‘আমি কি চোর? কেন এই ভাবে আমাকে আর আমার পরিবারকে হেনস্থা করা হবে?’’ বলতে বলতেই ফিরহাদের গলা উঠল উচ্চগ্রামে। ভেঙে গেল কণ্ঠস্বর। সেই স্বরেই এর পর ফিরহাদ প্রশ্ন তুললেন, ‘‘বিজেপির কাছে মাথা নত করব না বলেই কি এ ভাবে আমার সম্মানহানি করা হচ্ছে? সমাজসেবা করেছি। এটাই কি আমার অপরাধ? তা না হলে এ ভাবে হেনস্থা করা হবে কেন? আমার ভাইয়ের আজ শ্রাদ্ধ ছিল। সেখানেও যেতে দেওয়া হল না আমাকে। বলুন তো, পুর-নিয়োগের কোনও ফাইল কি পুরমন্ত্রীর কাছে আসে।’’

Advertisement

রবিবার সকাল সাড়ে আটটা থেকে ফিরহাদের চেতলার বাড়িতে শুরু হয়েছিল সিবিআই তল্লাশি। সেই তল্লাশি চলে সন্ধে সাড়ে ছ’টা পর্যন্ত। প্রায় ১০ ঘণ্টা ধরে চলা ওই তল্লাশি অভিযানের পর সিবিআই আধিকারিকেরা ফিরহাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর মেয়র-কন্যা প্রিয়দর্শিনী হাকিম বলেছিলেন, ‘‘আমাদের উপর মানসিক নির্যাতন হচ্ছে।’’ এ-ও জানান, তাঁর বাবা কিছু ক্ষণ পরেই সাংবাদিক বৈঠক করে যা বলার বলবেন। এর ঠিক ১৫ মিনিটের মাথায় স্ত্রী রুবি হাকিম এবং কন্যা প্রিয়দর্শিনীকে পাশে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন ফিরহাদ। এসেই বলেন, ‘‘এত বছর ধরে এই চেতলার মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে আসছেন। এঁরা আমাকে কাউন্সিলর বানিয়েছেন। পরে মানুষ আমাকে বিধায়ক করেছেন। আজ পর্যন্ত এঁরা কেউ বলতে পারবেন না আমি কোনও দুর্নীতি করেছি। যদি কিছু করে থাকি, তবে মানুষের সেবা করেছি। তার পরেও আমাকে এ ভাবে হেনস্থা করা হবে? কেন? আমি কি চোর?’’

এর পরেই সরাসরি বিজেপিকে আক্রমণ করে ফিরহাদ বলেন, ‘‘একটা অসভ্য, বর্বর দল। এদের কাছে মাথা নত করব না বলে এ ভাবে আমার পরিবারকে অপমান করা হচ্ছে। বিজেপিকে বলব, আমাকে জেলে রাখুন, কিন্তু এ ভাবে অপমান করবেন না।’’ বিজেপিকে ছিছিক্কার করে ফিরহাদ বলেন, ‘‘ছি ছি ছো! এরা সম্মানহানি করে!’’

Advertisement

রবিবারের ‘হেনস্থা’র কথা বলতে গিয়ে নিজের রাজনৈতিক কেরিয়ারের প্রসঙ্গও টেনে আনেন ফিরহাদ। বলেন, ‘‘বামফ্রন্ট আমলেও মার খেয়েছি। মামলা হয়েছে আমার বিরুদ্ধে। কিন্তু এ ভাবে হেনস্থা করা হয়নি।’’ এ প্রসঙ্গে ফিরহাদ তাঁর সততার কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘‘আমি জেলে গেছি। হাসপাতালে গিয়ে শুয়ে থাকিনি। ২৫ বছরের কাউন্সিলর থেকেছি আমি। দুর্নীতির সঙ্গে কখনও হাত মেলাইনি।কেউ যদি বলে আমাকে টাকা দিয়েছে, তবে সব ছেড়ে ইস্তফা দেব।’’

এ প্রসঙ্গে নারদা প্রসঙ্গও উঠে আসে ফিরহাদের কথায়। ফিরহাদ বলেন, একটি মামলাতেই আমি অভিযুক্ত। কিন্তু সেই মামলার বিচার হবে না। রাজীব গান্ধী যেমন মৃত্যুর পর ক্লিনচিট পেয়েছিলেন, ওই মামলাতেও তাই হবে। আমি মারা যাওয়ার পর হয়তো ক্লিনচিট পাব।’’ তবে এ ব্যাপারে নারদাকাণ্ডে অভিযুক্ত শুভেন্দু অধিকারীর কথাও টেনেন আনেন ফিরহাদ। প্রশ্ন করেন, ‘‘ওই একই মামলায় শুভেন্দুও তো অভিযুক্ত। কই ওকে তো ডাকা হল না?’’

রবিবার ফিরহাদের ভাইয়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান ছিল। মেয়র নিজেই সে কথা জানালেন। বললেন ‘‘এরা আমাকে আমার ভাইয়ের শ্রাদ্ধে যেতে দিল না।’’ এর পর ফিরহাদ প্রশ্ন করেন, ‘‘ওরা আমাকে বলে যাচ্ছে পুরসভা রিলেটেড কেস। কিসের রিলেটেড কেস? পুরসভার ফাইলের সঙ্গে পুরমন্ত্রীর যোগ থাকে। আর অয়ন শীলই বা কে? তাকে চিনিই না। বিচারপতি অমৃতা সিংহ কি এর পর জিজ্ঞাসা করবেন, রিলেটেড কী পাওয়া গিয়েছে এই তল্লাশি চালিয়ে?’’

রবিবার তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে রাজ্যের দুই বিরোধী দলের নেতাদের কথাও টেনে এনেছেন ফিরহাদ। বিজেপির দিলীপ ঘোষ এবং সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী এবং প্রাক্তন মেয়র বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের নাম করে ফিরহাদ বলেন, ‘‘এঁরা সবাই আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে চেনেন। এঁরা বলুন তো আমি চোর? সুজন বাবু, বিকাশ বাবু, দিলীপ ঘোষ বলুন আমি চোর?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement