কলকাতার রাস্তায় অশ্বারোহী পুলিশ বাহিনী। ফাইল ছবি
বড় বড় ম্যাচ হয় বিধাননগরের বিদ্যাসাগর যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে এবং শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে। সেখানে ঘোড়সওয়ার বাহিনী থাকলে ভিড় নিয়ন্ত্রণে বা বিশৃঙ্খলার মোকাবিলায় সুবিধা হবে বলে মনে করছে পুলিশ। তাই কলকাতা পুলিশের মতো অন্যান্য পুলিশ কমিশনারেটেও ঘোড়সওয়ার বাহিনী গড়তে চাইছেন রাজ্য পুলিশের কর্তারা। ব্রিটিশ আমল থেকে বাংলায় ঘোড়সওয়ার বাহিনী আছে শুধু কলকাতা পুলিশেই। নতুন পরিকল্পনা রূপায়িত হলে বিধাননগর, ব্যারাকপুর, শিলিগুড়ির মতো কমিশনারেটও সেই বাহিনী পাবে। ওই সব কমিশনারেট এলাকার বড় স্টেডিয়ামে বড় ম্যাচ হয়। প্রাথমিক ভাবে মূলত তাদেরই ঘোড়সওয়ার বাহিনী দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। তবে এখনও এই বিষয়ে চূড়ান্ত কোনও প্রস্তাব নবান্নে পাঠানো হয়নি।
এক পুলিশকর্তা জানান, কলকাতা পুলিশ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা জনিত কারণে বিক্ষোভ বা জমায়েত হলে তা ছত্রখান করতে ঘোড়সওয়ার বাহিনী অদ্বিতীয়। বিশেষত খেলার মাঠের বাইরে দর্শক-বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে দক্ষ ওই বাহিনী। কলকাতা পুলিশের ঘোড়সওয়ার বাহিনীকে এখন অবশ্য কুচকাওয়াজ-সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং ময়দানে টহলের কাজে লাগানো হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, আগে বিদেশ থেকে ঘোড়া আনা হত। স্বাধীনতার পরে মূলত পঞ্জাব, হরিয়ানা ও পুণের খামার থেকে ঘোড়া কেনা হয়। কয়েক বছর আগে কলকাতা পুলিশ ১১টি ঘোড়া কিনেছিল পঞ্জাব থেকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, সরকার তখন ঘোড়া-পিছু দাম দিয়েছিল দু’লক্ষ টাকা।
রাজ্য পুলিশ সূত্রের খবর, সিটি পুলিশে ঘোড়সওয়ার বাহিনী গড়তে হলে অতিরিক্ত ঘোড়া প্রয়োজন। লাগবে আস্তাবলও। উপরন্তু নতুন বাহিনী গড়লে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সব কিছু মাথায় রেখেই সিটি পুলিশে ঘোড়সওয়ার বাহিনী তৈরির জন্য আলোচনা চলছে বলে জানান এক পুলিশকর্তা।
কলকাতা পুলিশের ঘোড়সওয়ার বাহিনী তৈরি হয়েছিল ঊনবিংশ শতাব্দীতে। তখন মূলত ইংল্যান্ডের ওয়েলস থেকে ঘোড়া আনা হত। এখন ওই বাহিনীতে ঘোড়ার সংখ্যা ৬৯। মূলত ময়দান এলাকায় তাদের ‘ডিউটি’ থাকে। ময়দানের ঘেরা মাঠ থেকে শুরু করে ইডেন গার্ডেন্সে খেলা থাকলে সেখানকার দর্শক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব থাকে ওই বাহিনীর হাতে। রাজ্য পুলিশ জানিয়েছে, রাজস্থান, বিহারের মতো কিছু রাজ্যের প্রতি জেলায় ঘোড়সওয়ার বাহিনী রয়েছে। অথচ কলকাতা পুলিশ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের আর কোথাও সেই বাহিনী নেই।
ব্যারাকপুর পুলিশ ট্রেনিং কলেজে প্রশিক্ষণের জন্য রাজ্য পুলিশের হাতে এখন মাত্র ৩৯টি ঘোড়া আছে। তাদের মধ্যে স্পোর্টস এবং অসুস্থতার কারণে সবাইকে একসঙ্গে পাওয়া যায় না। মূলত এক-এক দিন ২০-২৫টির বেশি ঘোড়াকে পুলিশকর্মী থেকে আইপিএস অফিসারদের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হয়। এত জনের প্রশিক্ষণের জন্য ওই সামান্য সংখ্যক ঘোড়া যথেষ্ট নয় বলে পুলিশের একাংশের মত। ঘোড়ায় চড়ার প্রশিক্ষণ যাতে যথাযথ ভাবে হয়, তার জন্য আরও অন্তত ২১টি ঘোড়া কেনার প্রস্তাব নবান্নে ইতিমধ্যে জমা দিয়েছে রাজ্য পুলিশ।
পুলিশকর্তারা জানান, ওই সব নতুন ঘোড়া চলে এলে সিটি পুলিশের ঘোড়া কেনার বিষয়টিও জোর পাবে। তখনই নতুন প্রস্তাব পাঠানো হবে। সিটি পুলিশের আস্তাবলের জন্যেও প্রস্তাব পাঠানো হবে।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।