school

Saraswati Puja 2022: আবেগে ভেসে ফের ক্লাসে, চলল পুজোর প্রস্তুতিও

দু’দিন বাদেই সরস্বতী পুজো। তাই ক্লাসের ফাঁকে পুজো প্রস্তুতিও চলেছে সমান তালে। মণ্ডপ বাঁধা হয়েছে। আলপনা দিয়েছে ছাত্রীরা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:৪৫
Share:

হুল্লোড়: স্কুল খোলার প্রথম দিনে বন্ধুদের সঙ্গে হুটোপুটি। হাওড়ার যোগেশচন্দ্র গার্লস স্কুলে। বৃহস্পতিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

কোথাও ৫০ শতাংশ পেরোয়নি। কোথাও মেরেকেটে ২০ শতাংশ।

Advertisement

রাজ্য জুড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দরজা খুলল বৃহস্পতিবার। তবে স্কুলগুলিতে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের উপস্থিতি প্রথম দিনে মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়। বিশেষ করে দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীই এ দিন স্কুলমুখো হয়নি। যারা গিয়েছিল তারা অবশ্য আবেগে ভেসেছে।

করোনা সংক্রমণে কিছুটা রাশ পড়ায় এ দিন থেকে ফের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ঘোষণা ক’দিন আগেই করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো করোনা বিধি মেনে রাজ্য জুড়ে স্কুল-কলেজের দরজা খুলেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢোকার মুখে থার্মাল গান দিয়ে পড়ুয়াদের তাপমাত্রা পরীক্ষা, হাতে জীবাণুনাশক দেওয়া, অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ ব্যবহার করে দূরত্ব বজায় রেখে বসা— আয়োজনে খামতি ছিল না। ছাত্রছাত্রীরা মাস্ক পরে, হাতশুদ্ধি নিয়ে স্কুলে এসেছিল। স্কুল-কলেজ চত্বরে জীবাণুনাশক ছড়ানোও হয়েছে। প্রথম দিনে স্কুলে স্কুলে পড়ুয়াদের হাজিরার হার বেশ কম হলেও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাজিরা অনেক জায়গাতেই ছিল একশো ভাগ।

Advertisement

বিভিন্ন স্কুলে পড়ুয়াদের গোলাপ, চকোলেট, কলম, চন্দনের ফোঁটা দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। তবে জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত গ্রাম হোক, বা কলকাতা লাগোয়া দুই ২৪ পরগনা কিংবা হাওড়া—বেশিরভাগ স্কুলে পড়ুয়া সংখ্যা ছিল কম। গাইঘাটার ইছাপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অশোক পাল বলেন, ‘‘স্কুলে আসার অনভ্যাস ও সরস্বতী পুজোর আবহে উপস্থিতি কম হয়েছে। আশা করছি, সোমবার থেকে উপস্থিতি বাড়বে।’’ ঝাড়গ্রাম জেলার বিনপুরে দহিজুড়ি মহাত্মা বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক মৃন্ময় হোতার কথায়, ‘‘এ দিন দশ শতাংশ পড়ুয়া এসেছিল। তবে ক্লাস হয়েছে।’’ গোঘাটের ভগবতী গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা তৈয়েবুন্নেশা বেগম বলেন, “কিছু অভিভাবক ব্যবস্থাপনা দেখে গিয়েছেন। তাঁরাও মেয়েদের স্কুলে পাঠাবেন।’’ বসিরহাটের একটি স্কুলে আবার নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম না পরে আসায় কিছু পড়ুয়াকে স্কুলে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

পূর্ব মেদিনীপুরের শহর এলাকার হাইস্কুলগুলিতে অবশ্য ৭০-৯০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী এসেছিল। শিলিগুড়ি, কোচবিহার, হুগলি, নদিয়া, মুর্শিদাবাদেও কিছু স্কুলে হাজিরা ছিল ৫০ শতাংশের বেশি। তবে পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পূর্ব বর্ধমান, বীরভূমের অনেক স্কুলেই হাতেগোনা ছাত্রছাত্রী এসেছিল। তুলনামূলক ভাবে হাজিরা বেশি ছিল অষ্টম ও সদ্য নবম শ্রেণিতে ওঠা ছাত্রছাত্রীদের। কারণ, নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির জন্য আগে দু’দফায় স্কুল খুললেও এই পড়ুয়ারা প্রায় দু’বছর পরে ক্লাসরুমে পা রাখল। ফলে, আবেগে ভেসেছে তারা।

বাবার বাইক থেকে নেমে স্কুল গেটে পা দিতেই পেছন থেকে জাপটে ধরল বান্ধবী। হাতে হাত ধরে লাফাতে লাফাতে ক্লাসরুমের দিকে ছুট লাগাল দুই বান্ধবী। বৃহস্পতিবার এমনই ছবি দেখা যায় মালদহের বার্লো বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। প্রধান শিক্ষিকা দ্বীপশ্রী মজুমদার বলেন, “মেয়েদের উচ্ছ্বাসের কাছে নিয়ম হার মানছে। তবুও দূরত্ববিধি মানতে বলা হচ্ছে।” আনন্দ-উচ্ছ্বাসের ছবি দেখা গিয়েছে উত্তরবঙ্গের বাকি জেলা গুলিতেও। উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহারে নিজস্বীতে মজতে দেখা যায় ছাত্রছাত্রীদের। সকলেরই এক কথা, ‘‘আর যেন স্কুল বন্ধ না হয়।’’

পড়ুয়াদের খুশি চারিয়ে গিয়েছে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের মধ্যেও। ঝাড়গ্রাম শহরের ননীবালা বালিকা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অঙ্কের শিক্ষিকা মলিনা ধাড়া ব‌লছেন, ‘‘ভার্চুয়াল ক্লাসে তো ওদের দেখতে পেতাম না। ২২ মাস পরে ছাত্রীদের সামনাসামনি পড়িয়ে সত্যিই আত্মতৃপ্তি হচ্ছে।’’ কল্যাণী ইউনিভার্সিটি এক্সপেরিমেন্টাল হাইস্কুলে ঢোকার সময়েই নিরাপত্তারক্ষী রাজদীপ সরকারের সঙ্গে হাসিঠাট্টা করতে দেখা যায় পড়ুয়াদের। হাসতে হাসতে রাজদীপ বলেন, “আগের বার ছেলে আর মেয়েদের আলাদা করে ক্লাস শুরু হয়েছিল। এ বার সবাই এক সঙ্গে। খুব খুশি সব।”

দু’দিন বাদেই সরস্বতী পুজো। তাই ক্লাসের ফাঁকে পুজো প্রস্তুতিও চলেছে সমান তালে। মণ্ডপ বাঁধা হয়েছে। আলপনা দিয়েছে ছাত্রীরা। অনেক স্কুলে পাঁচ পিরিয়ড ক্লাসের পরে পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়। পড়ুয়াদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়। ঘাটালের বসন্তকুমারী বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী দেবলীনা জানা, পরমা সিংদের কথায়, ‘‘সব ক্লাস হয়েছে। তারই ফাঁকে পুজোর আয়োজনে হাত লাগিয়েছি।’’ দাসপুরের রসিকগঞ্জ বিদ্যাসাগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অজয় পাত্র বলেন, ‘‘স্কুল খুলে
যাওয়ায় ছাত্রছাত্রীরা পুজোর দায়িত্ব নিয়েছে। তবে স্কুলে কোনও অনুষ্ঠান হবে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement