প্রকল্প এলাকায় কাজ চলছে। ছবি: সুজিত দুয়ারি
অশোকনগরে তেল ও গ্যাস উত্তোলন প্রকল্পের জন্য আপাতত প্রয়োজন ১২ একর জমি। রাজ্য সরকারের নির্দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ওএনজিসিকে জমি হস্তান্তরের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন।
অশোকনগরের প্রকল্প থেকে বাণিজ্যিক ভাবে তেল উৎপাদন সম্ভব বলে সম্প্রতি আশা প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। এই পরিস্থিতিতে জমি নিয়ে আইনি কাজ দ্রুত মিটিয়ে ফেলতে চাইছে রাজ্যও। জমির বিস্তারিত তথ্য ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারকে পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসন।
২০০৯ সালে উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর এলাকায় তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস সন্ধানের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্লকটি হাতে পায় ওএনজিসি। ২০১৪ সালে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়। ২০১৭ সালে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই সেখানে তেল-গ্যাসের ভান্ডার সম্পর্কে নিশ্চিত হয় সংস্থা। অনুসন্ধান চালাতে প্রাথমিক ভাবে পাঁচটি কুয়ো খননের পরিকল্পনা ছিল ওএনজিসির। তবে তৃতীয়টি খোঁড়ার পরেই গ্যাস ও তেল থাকার সম্ভাবনা সম্পর্কে নিশ্চয়তা মেলে। তা উত্তোলনের জন্য তাই অয়েল ইন্ডিয়ার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে ওএনজিসি। প্রথমে চার একরের পরে রাজ্যের কাছে আরও ১২ একর জমিও চেয়েছে।
আরও পড়ুন: ছটে লেটার কলকাতার, নম্বর কমল বহু জেলার
আরও পড়ুন: ট্রপিক্যালেও করোনার টিকা পরীক্ষার জন্য সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন
জেলা প্রশাসন থেকে নবান্নে যে রিপোর্ট গিয়েছে, তাতে জানানো হয়েছে, সরকারি জমির পাশাপাশি প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকার মধ্যে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন কিছু জমিও রয়েছে। চাষবাস হয়। অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভা সূত্রে দাবি করা হয়েছে, জমি হস্তান্তরে জটিলতা হবে না। পুরপ্রশাসক প্রবোধ সরকার বলেন, ‘‘আমরা জমির নথি চাষিদের জমা দিতে বলেছিলাম। এখনও পর্যন্ত কোনও নথি জমা পড়েনি।’’ তিনি জানান, মাসখানেক আগেই তাঁরা প্রস্তাবিত ১২ একর জমি ওএনজিসি কর্তৃপক্ষকে দিতে নো অবজেকশন দিয়ে দিয়েছেন। বিষয়টি এখন রাজ্য সরকারের কাছে রয়েছে। জমি পেতে যাতে ওএনজিসি কর্তৃপক্ষের কোনও অসুবিধা যাতে না হয়, তা দেখার আশ্বাসও দেন পুরপ্রশাসক। স্থানীয় বিধায়ক ধীমান রায় বলেন, ‘‘শুনেছি ওখানে মাটির নীচে বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেল মজুত আছে। আগেও আমরা ওএনজিসি কর্তৃপক্ষকে আমরা সাহায্য করেছি। ভবিষ্যতেও সব রকম সাহায্য করা হবে।’’
সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক সত্যসেবী করের বক্তব্য, ‘‘জমি পাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের যদি কোনও সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, তা আমরা করব। পুরোটাই সরকারি খাস জমি। কিছু মানুষ চাষাবাদ করতেন। ওএনজিসি কর্তৃপক্ষ তাঁদের কিছু আর্থিক সাহায্য করুক।’’
প্রকল্পের কাজ শুরু হলে এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার সামগ্রিক উন্নতি হবে বলে আশা করছেন স্থানীয় মানুষজন। প্রকল্প এলাকার আশপাশে ছোটখাট খাবার দোকান, চায়ের স্টল তৈরি হতে শুরু করেছে। তাঁদেরই একজন মহাদেব দাস বলেন, ‘‘কাজ পুরোদমে শুরু হলে কত মানুষ যাতায়াত করবেন এই এলাকায়। অনেক রকম ব্যবসার দিক খুলে যাবে। কাজ পাবেন অনেকে। আমরা সকলে প্রকল্প নিয়ে খুবই আশাবাদী।’’
নির্মল মণ্ডল নামে এক চাষি বলেন, ‘‘আমাদের জমি দিতে আপত্তি নেই। আমরা চাই, সরকার ক্ষতিপূরণ দিক। চাকরির ব্যবস্থা করুক।’’