স্কুল খোলার কথা ঘোষণা করেছে সরকার। তার আগে স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুলের গবেষণাগারে চলছে সাফাইয়ের কাজ। মঙ্গলবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
সমবেত প্রার্থনা আপাতত চলবে না। ১৬ নভেম্বর স্কুল খোলার পরে পৃথক পৃথক শ্রেণিকক্ষেই প্রার্থনা সেরে নেওয়ার কথাই নতুন নিয়মবিধিতে বলা হচ্ছে বলে শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর। স্কুলে আপাতত খো খো, কবাডি, ফুটবল, বাস্কেটবলের মতো খেলা থেকে বিরত থাকাই ভাল বলে মনে করছে শিক্ষা দফতর। নয়া বিধিতে এই মর্মে নির্দেশ থাকতে পারে। এ ছাড়া শ্রেণিকক্ষে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে বসার মতো আগেকার সব নিয়মই বহাল থাকছে।
ফেব্রুয়ারির ১২ তারিখে উঁচু শ্রেণির ক্লাসের জন্য স্কুল খোলার সময় এক দফা কোভিড স্বাস্থ্যবিধি জারি করেছিল শিক্ষা দফতর। ১৬ নভেম্বর স্কুল খোলার আগে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কোভিড বিধিনিষেধ সংক্রান্ত নতুন নির্দেশাবলি তৈরির কাজ চলছে ওই দফতরে। পুরনো বিধির সঙ্গে নতুন কী কী যোগ হয়, শিক্ষা শিবিরের চোখ সে-দিকেই।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলাশাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন, স্কুল খোলার আগে যথাযথ ভাবে জীবাণুনাশের কাজ করতে হবে। কোনও মেরামতির প্রয়োজন থাকলে তা-ও সেরে ফেলতে হবে নির্ধারিত সময়ের আগে। এই খাতে ইতিমধ্যেই জেলাকে টাকা দিয়েছে শিক্ষা দফতর।
ফেব্রুয়ারিতে টিকাকরণ প্রক্রিয়া চালু ছিল না। এ বার স্কুল খোলার আগে সব শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর টিকাকরণ সম্পূর্ণ হওয়ার কথা। শিক্ষা শিবির সূত্রের খবর, এ বার স্কুল খুললে খুব ব্যতিক্রম ছাড়া প্রত্যেক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর টিকা দু’টি ডোজ় আবশ্যিক করা হতে পারে।
শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, নতুন নিয়মবিধিতে সব স্কুলেরই শ্রেণিকক্ষে দুই পড়ুযার মধ্যে ছ’ফুট দূরত্ব রাখতে বলা হবে। তাতে প্রতিটি ক্লাসে পড়ুয়ার সংখ্যা কমবে। তাই বেশি শ্রেণিকক্ষ তৈরি রাখতে হবে। হাত ধোয়ার জন্য স্কুলে পর্যাপ্ত সাবান রাখতে হবে। পড়ুয়া ও শিক্ষকদের মাস্ক আবশ্যিক। নিয়মবিধিতে স্কুলে ঢোকার আগে থার্মাল গান দিয়ে পড়ুয়াদের দেহের তাপমাত্রা পরীক্ষার কথাও থাকবে। স্কুলে প্রধান গেট দিয়ে ঢোকার সময় যাতে ভিড় না-হয়, সেই বিষয়ে এক জন শিক্ষককে নজরদারির দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলা হতে পারে। পড়ুয়াদের স্কুলপোশাক রোজ কেচে পরার কথা বলা হতে পারে। পড়ুয়াদের জ্বর বা অন্য কোনও ধরনের শরীর খারাপ হলে তা শিক্ষকদের কাছে কোনও মতেই গোপন করা যাবে না। স্কুলে একটি আইসোলেশন রুম রাখার নির্দেশও দেওয়া হতে পারে। শ্রেণিকক্ষের জানলা-দরজা ভাল ভাবে খোলা রাখতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কি না, তার নজরদারিতে প্রতিটি স্কুলে একটি কমিটি গঠনের কথাও বলা হতে পারে নয়া নির্দেশিকায়।
শিক্ষক মহলের বক্তব্য, স্কুল খোলার পরেও রোজ স্যানিটাইজ় করা প্রয়োজন। শ্রেণিকক্ষ ছাড়াও শৌচালয়, ল্যাবরেটরি, কমন রুম, লাইব্রেরি, শিক্ষকদের বসার ঘর— সর্বত্র নিয়মিত জীবাণুনাশ দরকার।
ফেব্রুয়ারিতে যখন স্কুল খুলেছিল, তখন পড়ুয়াদের টিফিন খাওয়া নিয়েও বিধিনিষেধ জারি হয়েছিল। এ বারেও তা বহাল থাকবে বলে শিক্ষা প্রশাসন সূত্রের খবর। পড়ুয়ারা টিফিন ভাগ করে খাবে না। শিক্ষকদেরও এই বিধি কঠোর ভাবে পালন করতে হবে।
নতুন নির্দেশিকায় স্কুলে আলাদা ভাবে মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ার মজুত রাখার কথা বলা হতে পারে। পেন, মোবাইল বা ল্যাপটপ অন্য কাউকে ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না। গয়নাগাঁটি যথাসম্ভব কম পরে আসাই ভাল বলেই মনে করছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। পড়ুয়ারা স্কুলগাড়িতে বা নিজস্ব গাড়িতে এলে, সেই গাড়ি ঠিকমতো স্যানিটাইজ় করা হচ্ছে কি না, তার উপরেও নজর রাখতে হবে।
বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের অভিযোগ, করোনার বিধিনিষেধ মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হলেও স্কুল চালু হয়ে যাওয়ার পরে তা মান্য করার প্রবণতা অনেকাংশে শিথিল হয়ে যায়। কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, “ফেব্রুয়ারিতে স্কুল খোলার দিন সব স্কুলে থার্মাল গান ব্যবহার, স্যানিটাইজ়েশন নজরে পড়লেও কিছু দিন পরে অনেক
স্কুলেই তা বন্ধ হয়ে যায়।” নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইনের দাবি, স্কুলে রোজ জীবাণুনাশ ও স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য অর্থ জোগাতে হবে শিক্ষা দফতরকে। সেই সঙ্গে দরকার প্রশাসনিক নজরদারিও।