নজরুল মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ছবি পিটিআই।
ভরা প্রেক্ষাগৃহ। শ্রোতার আসনে মন্ত্রী, বিধায়ক, জেলা পরিষদের সভাধিপতি, পুরপ্রধান, উপ পুরপ্রধান এবং তৃণমূলের নানা স্তরের নেতা। মঞ্চে উপস্থিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এই আবহেই দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় সভার সূচনা করার পর পিছনের বিশাল পর্দায় ভেসে উঠল তৃণমূলের ‘জনসংযোগ কর্মসূচি।’ ছবি ও লেখা-সহ ‘ভিসুয়াল প্রেজেন্টেশন।’ পর্দায় একের পর এক টানা ৬ মাসের করণীয়।
প্রেক্ষাগৃহের বাইরে পরপর রেজিস্ট্রেশন কাউন্টার। প্রতিটি জেলার জন্য আলাদা করা সেই কাউন্টারে ‘ভিলেজ ভিজিট কিটস’ বিলির ব্যবস্থা। সভামঞ্চের প্রবেশ পথে আলাদা করে দেওয়া দিকনির্দেশ, কোন ‘গেট’ কার জন্য। শুধু তা-ই নয়। সোমবার নজরুল মঞ্চে তৃণমূলের সাংগঠনিক বৈঠক ঘিরে এই ব্যবস্থার দায়িত্বে ছিলেন কালো টি-শার্টে এক ঝাঁক গাইড-যুবক। একেবারে কর্পোরেট ধাঁচে তাঁরাই সামলাচ্ছিলেন রাজ্যের শাসক দলের জনসংযোগের দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এ সবই ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের ‘প্রেসক্রিপশন’। মমতা নিজে অবশ্য দলের এই পরিবর্তনকে ‘কর্পোরেটাইজেশন’ বলে মানতে নারাজ। এ সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘এটা কর্পোরেটাইজেশন নয়। এটা তৃণমূলের আধুনিকীকরণ ( মডার্নাইজেশন)।’’
ক্ষমতায় আসার আগে থেকে এই রকম অসংখ্য সাংগঠনিক বৈঠক করেছেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু এ দিনের বৈঠকের চেহারাই ছিল আলাদা। প্রত্যেকটি প্রবেশপথে পুলিশ থাকলেও মূল যাতায়াতের বিষয়টির তত্ত্বাবধানে ছিলেন ‘গাইড’-রাই। এর আগে তৃণমূলের কোনও দলীয় সভায় যা দেখা যায়নি। সভা শেষের পরেও প্রায় শ’খানেক গাইড বাইরের কাউন্টার থেকে ‘ভিলেজ ভিজিট কিটস’ তুলে দিয়েছেন তৃণমূলের বিধায়কদের হাতে। গ্রামে গ্রামে জনসংযোগ বাড়াতে গিয়ে কী করণীয়, তার প্রচার সামগ্রী ঠাসা ওই কিটসে নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও পরিকল্পনা স্পষ্ট।
এদিন সাংবাদিক বৈঠকের স্থানও অনেক আগে থেকে মণ্ডপ বেঁধে তৈরি করা ছিল। যা আগে কখনও হয়নি। সাংবাদিক সম্মেলনের পাশাপাশি দলের রুদ্ধদ্বার বৈঠকেও মমতাকে কাগজ দেখে বলতে দেখা গিয়েছে। যা মমতার সঙ্গে একেবারেই নতুন। কেন এমন বদল, তা নিয়ে দলের অন্দরেও কৌতূহল তৈরি হয়েছে। তৃণমূল নেত্রী অবশ্য নিজে তাতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাননি। এটা কি ভোটকুশলী প্রশান্তের পরামর্শ? সাংবাদিক বৈঠকে এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘না। কিছু তথ্য বলার সময় দেখতেই হয়।’’
আরও পড়ুন: গ্রামে রাত কাটাতে নির্দেশ, ‘দিদিকে বলো’ দাওয়াই মমতার
লোকসভা ভোটের পর থেকেই সাংগঠনিক কাজকর্মে ভোটকুশলী প্রশান্তের পরামর্শ নিতে শুরু করেছে তৃণমূল। দলীয় সূত্রে খবর, দলের নতুন জনসংযোগ কর্মসূচি বা তার মূল ‘ক্যাচলাইন’-এর মতো এই ব্যবস্থাপনার গোটাটাই ‘টিম প্রশান্ত’-এর হাতে।