বাচ্চু হাঁসদার বাড়ি। নিজস্ব চিত্র
বাড়ি নিয়ে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের নিশানায় পড়লেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাচ্চু হাঁসদা। সম্প্রতি কলকাতায় তৃণমূলের এক বৈঠকে। এমনই জানিয়েছেন বৈঠকে শামিল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তৃণমূল নেতাদের একাংশ।
বাচ্চুকে কী বলেছেন ‘পিকে’? শাসকদলের এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘মোবাইল ফোনে ওঁকে বাড়ির ছবি দেখিয়ে পিকে বলেছিলেন— বাচ্চুবাবু আপনি তো আদিবাসী নেতা। আপনার বাড়ির আশপাশে সবার ছোট ছোট বাড়ি। আর আপনি বিশাল প্রাসাদ বানিয়ে ফেলেছেন। লোকজন তো অনেক কিছুই বলছেন। খুব ভাল!’’
যদিও এ কথা মানেননি বাচ্চু। তিনি বলেন, ‘‘গ্রামে থাকি। থাকার জন্য একটা বাড়ি দরকার। তা ছাড়া বাড়িতে অনেক অতিথি আসেন। তাঁদেরও থাকার ব্যবস্থা করতে হয়। তাই বাড়ি বানিয়েছি। আগে শিক্ষক ছিলাম। ভোটে জিতে মন্ত্রী হয়েছি। মাসে এক লক্ষ টাকার বেশি সাম্মানিক, বেতন পাই। তা জমিয়েই বাড়ি করেছি।’’ তাঁর আরও দাবি, আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই খরচ করেন।
আরও পড়ুন: ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র থেকে রাজনীতির চাণক্য, এক নজরে প্রশান্ত কিশোর
জেলা তৃণমূল সভাপতি অর্পিতা ঘোষ বলেন, ‘‘বিরোধীরা অনেক অভিযোগ তোলেন। এ সব একেবারেই ঠিক নয়। দল সবার খোঁজ রাখছে। যদি তেমন কিছু হতো, আমরা জানতে পারতাম। যদি নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ মেলে তা দেখব।’’
২০১১ সালে জমানা বদলের আগে ঝাড়গ্রামের সিপিএম নেতা অনুজ পাণ্ডের প্রাসাদোপম বাড়ি ভাঙেন স্থানীয় মানুষ। ২০১১ সালেই প্রথম বার বিধায়ক হন বাচ্চু। পরে প্রতিমন্ত্রীও হন। এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, তপনে গ্রামের সাদামাঠা বাড়ি মন্ত্রী হওয়ার পরে হঠাৎ করেই প্রাসাদে রূপান্তরিত হয়। তার পর থেকে তিনতলা বিশালাকার সেই বাড়ি আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, আদিবাসী প্রধান তপন বিধানসভার বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট বেহাল থাকলেও মন্ত্রী নিজের বাড়ি বানাতে ‘কার্পণ্য’ করেননি। বিরোধীরাও তা নিয়ে একাধিক বার সরব হয়েছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘নিজের এলাকার উন্নয়ন না করে উনি শুধু নিজের উন্নয়ন করে গিয়েছেন। তা নিয়ে এলাকার বাসিন্দারাও ক্ষোভ চেপে রাখেননি। গত লোকসভায় আমাদের দখলে থাকা বিধানসভা এলাকায় বিজেপি লিড নিয়েছে।’’
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালে প্রায় ৭৩ হাজার ভোট পাওয়া বাচ্চুর চেয়ে কয়েক যোজন দূরে ছিল বিজেপি। কিন্তু গত লোকসভায় এই কেন্দ্র থেকেই প্রায় ২৩ হাজার ভোটের ‘লিড’ পায় গেরুয়া শিবির।
দলের অন্দরমহলের খবর, বিধানসভা নির্বাচনের আগে জেলায় এমন ফলাফলের কারণ খুঁজতে নেমে বাচ্চুর প্রাসাদোপম বাড়ির খোঁজ পেয়েছে পিকে-র টিম। ‘হাতে গরম প্রমাণ’ নিয়ে ওই দিনের বৈঠকে বাচ্চুকে কার্যত সতর্ক করেন পিকে।