সামান্য কর্মী থেকে সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের ডানহাত হয়ে উঠে তাঁর উপরেই বাটপাড়ির অভিযোগ উঠেছে প্রশান্ত নস্করের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) আদালতে জানাল, সারদা গার্ডেন্সের ম্যানেজার প্রশান্ত ওই গোষ্ঠীর প্রায় চার বিঘা জমি অবৈধ ভাবে বিক্রি করে দিয়েছেন। ইডি-র দাবি, ওই জমি বিক্রি হয়েছে সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্ত শুরু হওয়ার পরে।
সারদা কাণ্ডে অভিযুক্ত প্রশান্তকে গ্রেফতার করার পরে আদালতের নির্দেশে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করে ইডি। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি তাঁকে আদালতে তুলে ইডি বলেছিল, জমি-বাড়ি কিনতে সুদীপ্ত রাজ্যের ক্রীড়া ও পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের ঘনিষ্ঠ প্রশান্তকে ১২ কোটিরও বেশি টাকা দিয়েছিলেন। সারদা কেলেঙ্কারির তদন্ত শুরু হতেই তিনি সেই টাকার অনেকটাই মার্কিন ডলারে রূপান্তরিত করে ফেলেন। পরে আবার সেই ডলার বাংলাদেশি মুদ্রায় বদলে নেন।
এ দিন ওই অভিযুক্তকে কলকাতার নগর দায়রা আদালতের মুখ্য বিচারকের এজলাসে তোলার কথা ছিল। প্রশান্তকে সেখানে হাজির করানোর পরে ইডি-র আইনজীবী অভিজিৎ ভদ্র জানান, অভিযুক্তকে আর জেরা করার দরকার নেই। তাঁকে জেল-হাজতে পাঠানো হোক। তবে ওই অভিযুক্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর এবং তার লাগোয়া এলাকার প্রায় চার বিঘা (১৭০০ ডেসিমেল) জমি কবে কাদের কাছে কী ভাবে বিক্রি করেছেন, তা জানতে জেলে গিয়েও তাঁকে জেরা করার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। এই ব্যাপারে আদালতের অনুমতি চাওয়া হয়।
প্রশান্তের আইনজীবী এ দিন তাঁর মক্কেলের জামিনের আবেদন জানান। তার বিরোধিতা করে ইডি-র আইনজীবী বলেন, ইডি-র জেরায় প্রশান্ত নিজেই স্বীকার করেছেন, সারদা-প্রধান সুদীপ্ত তাঁকে জমি-বাড়ি কিনতে ১২ কোটিরও বেশি টাকা দিয়েছিলেন। সেই টাকা দিয়ে কেনা জমির পরিমাণ এবং তাঁর নিজের বিক্রি করা জমির পরিমাণ (১৭০০ ডেসিমেল) এক কি না অথবা তাতে কোনও রকম অসঙ্গতি রয়েছে কি না, তদন্তের স্বার্থে তা জানাও জরুরি। অভিযুক্তকে জামিন দেওয়া হলে অনেক তথ্যপ্রমাণ লোপাটের আশঙ্কা আছে। এমনকী বিষ্ণুপুর এবং তার লাগোয়া এলাকার সাক্ষীদেরও প্রভাবিত করতে পারেন ওই অভিযুক্ত। তাই আদালতের উচিত তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ করা।
দু’পক্ষের সওয়াল শেষে আদালত জানিয়ে দেয়, প্রশান্তের জামিনের আবেদন খারিজ করা হল। তাঁকে ৪ মার্চ পর্যন্ত জেল-হাজতে রাখতে হবে। আদালতের নির্দেশ, ইডি-র তদন্তকারীরা তদন্তের স্বার্থে জেলে গিয়েও তাঁকে জেরা করতে পারবেন।
সারদার তদন্ত চলাকালীন সোনা পাচারের অভিযোগে জেল-হাজতে থাকা আব্দুল বারিক বিশ্বাসকেও এ দিন নিজেদের হেফাজতে রাখার অনুমতি পেয়েছে ইডি। ২০১৪ সালের ৯ মার্চ দেগঙ্গা এলাকা থেকে আব্দুলকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় রাজস্ব গোয়েন্দা দফতর। আব্দুলকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য ব্যাঙ্কশাল আদালতে আবেদন জানায় ইডি। ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওই তৃণমূলকর্মীকে ইডি-র হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয় কোর্ট।
ইডি-র খবর, বসিরহাটের তৃণমূল নেতা গোলাম বিশ্বাসের ভাই আব্দুল আগে গাড়ি সাফাইয়ের কাজ করতেন। ক্রমে তিনি গাড়ি-মালিক হয়ে ওঠেন। পরে সেই আব্দুলের বিরুদ্ধে গরু পাচারের অভিযোগ ওঠে। বসিরহাটের সংগ্রামপুরের বাসিন্দা আব্দুল এলাকায় সক্রিয় তৃণমূলকর্মী বলেই পরিচিত।
ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স বা কেন্দ্রীয় রাজস্ব গোয়েন্দা দফতরের আধিকারিকেরা বিশেষ সূত্রে খবর পেয়ে বসিরহাট-বারাসত রোডে একটি গাড়ি থেকে গ্রেফতার করেন আব্দুলকে। উদ্ধার হয় প্রায় ৪৫ কিলোগ্রাম সোনা। তার বাজারদর প্রায় ১৫ কোটি টাকা। ধৃতের বিরুদ্ধে চোরাচালানে সক্রিয় ভাবে যুক্ত থাকার অভিযোগও ওঠে।
সারদা কেলেঙ্কারিতে উধাও হওয়া টাকার সন্ধানে নেমে সম্প্রতি বেশ কিছু সূত্র ইডি-র হাতে এসেছে। সেই সূত্রেই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গরু থেকে সোনা পাচার এবং চোরাচালান সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য উঠে আসে। আব্দুলকে জেরা করে সেই বিষয়ে আরও তথ্য মিলতে পারে বলে তদন্তকারীদের একাংশের ধারণা।
তবে সরকারি ভাবে আব্দুলের গ্রেফতারি নিয়ে মুখ খুলতে রাজি নন ইডি-র তদন্তকারীরা। সারদা কাণ্ডের তদন্তের সঙ্গে আব্দুলের গ্রেফতারির সম্পর্ক নেই বলেই তাঁরা জানান।